বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রী ভুল বললে তা প্রমাণ করুন

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

প্রধানমন্ত্রী ভুল বললে তা প্রমাণ করুন

বহু বছর চুপ করে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে কতগুলো অকাট্য সত্য কথা উচ্চারণ করায় তিনি এরই মধ্যে গণমানুষের নিরঙ্কুশ প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাঁর উক্তিগুলো ছিল বহু প্রত্যাশিত এবং প্রতীক্ষিত।

প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কথাটি হলো- জিয়া কোনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। এ কথাটি সত্যে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষই জানেন। তবে এমন অনেকে আছে যারা এ অখন্ডনীয় সত্যকে প্রকাশ্যে স্বীকার করে না তাদের নিজ অথবা দলীয় স্বার্থে। আর এ সত্য যারা প্রকাশ্যে অস্বীকার করার চেষ্টা করে তাদের বিরাট অংশ হচ্ছে সেই শ্রেণির যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় চায়নি, পাকিস্তানের ভাঙনে যাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নাখোশ হয়েছেন। নাখোশ হওয়ারই কথা, কেননা অপ্রিয় সত্য হজম করার লোক তারা নন। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো, এ দুই বিএনপি নেতার একজনের পিতা যে এক কুখ্যাত রাজাকার ছিল এবং সে রাজাকার যে বঙ্গবন্ধু প্রণীত দালাল আইনে কয়েক বছর হাজতে ছিল, সে কথা দালাল আইনে জেল খাটা লোকদের তালিকায়ই রয়েছে। ওই এলাকার লোকজন সেই কুখ্যাত রাজাকারের ডাকনাম ঘৃণাভরেই উচ্চারণ করে থাকে। তা ছাড়া বিএনপির এ নেতার চাচা, যিনি বিএনপি যুগে মন্ত্রী এবং স্পিকার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তিনিও এমনকি স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন, যার প্রবক্তা ছিল কুখ্যাত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম। বিএনপির অন্য যে নেতা প্রধানমন্ত্রীর সত্য ভাষণ গ্রহণ করতে পারছেন না তার পরিবারেও রয়েছে রাজাকারের রক্ত, যেমন রয়েছে বিএনপির বহু নেতার পরিবারে। এটি তো দৃশ্যমান সত্য যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী এবং চীনপন্থি স্বাধীনতাবিরোধীরা সব এক হয়েছিল তাদের ত্রাণকর্তা জিয়ার নেতৃত্বে।

জিয়াউর রহমান যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি তার বড় প্রমাণ এই যে তার কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণের কোনো খবরই কোনো বইপুস্তক বা প্রকাশনীতে পাওয়া যায় না। অন্য যে কমান্ডাররা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের নামই প্রকাশিত হয়েছে কোনো না কোনো বই বা প্রকাশনীতে। সম্প্রতি বিএনপি নেতা মেজর হাফিজ প্রত্যক্ষভাবে স্বীকার করেছেন যে জিয়া কোনো যুদ্ধ করেনি। তবে তার কথা হলো মেজর বা তদূর্ধ্ব কেউ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে থাকে না, তারা পেছনে থাকে। সেটি সত্যি হলে মুক্তিযুদ্ধে সেই নিয়ম কেউ অনুসরণ করেননি। এটি সর্বজনবিদিত যে অন্য মেজর বা তদূর্ধ্বরা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেছেন। যে সত্যটি সবার জানা তা হলো, জিয়া পশ্চিম বাংলায় গিয়ে মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছিল। তার আগে জিয়া যে পাকিস্তানি জাহাজ ‘সোয়াত’ থেকে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল সে কথা তো কারোরই অজানা নয়, তার সমর্থনে তো সাক্ষীরও কোনো অভাব নেই। সে সময় চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা প্রথম অস্ত্র নিয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তখনকার ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম (পরে মেজর রফিক)। তিনি তার বইয়ে অত্যন্ত প্রচ্ছন্ন ভাষায় জিয়ার সেই নিন্দনীয় কথার উল্লেখ করেছেন এবং এ-ও ব্যক্ত করেছেন কীভাবে অন্য বাঙালি সৈন্যরা জিয়াকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে পাকিস্তানি অস্ত্র খালাস থেকে বিরত করেছিলেন। এমনকি ক্যাপ্টেন অলি (পরে কর্নেল অলি), যিনি বিএনপির এক বড় সমর্থক, তিনিও সেদিন জিয়ার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছিলেন জিয়া সোয়াত জাহাজে গেলে তিনিই জিয়াকে হত্যা করবেন। এ কথাগুলো তো সবারই জানা। এসব কারণে জিয়া তার যাত্রাপথ পাল্টিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়ার আগে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাহেব এবং পরে আবুল কাসেম সন্দ্বীপ সাহেব পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তথাপিও সবাই ভেবেছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তার মুখ দিয়ে ভাষণটি পাঠ করানো গেলে ভালো হয়। যদিও তাদের ইচ্ছা ছিল সে ভাষণ ক্যাপ্টেন রফিককে দিয়ে পাঠ করানো, কিন্তু তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে অ্যাম্বুশরত থাকায় জিয়াকে বলা হয়। জিয়া প্রথমত তাতে রাজি না হলেও পরে সবার চাপে পড়ে এটি পাঠ করতে বাধ্য হয় আর তার পরই তার মনে যে কুমতলব উদিত হয় তা হলো, তখন থেকে মুক্তিযুদ্ধকে তার পাকিস্তানি প্রভুদের ইচ্ছামতো পরিচালিত করতে পারবে। পরিস্থিতি অবশ্য তাকে সে সুযোগ দেয়নি আর তাই তখন সে তার পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশনায় শুরু করল ষড়যন্ত্র, যার প্রথমটি ছিল মুজিবনগর সরকারের বিরোধিতা করে তথাকথিত বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি, যে কারণে পরবর্তীতে জেড ফোর্স বিলুপ্ত করেছিলেন জেনারেল ওসমানী।

জিয়া যে পশ্চিমবঙ্গে বসে আসলে পাকিস্তানি চরের ভূমিকা পালন করছিল সে কথা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাই ফাঁস করে দিয়েছে এ কথা লিখে যে ১৯৭১ সালের মে মাসে কর্নেল বেগ নামক পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জিয়াকে এ মর্মে চিঠি লিখেছিল যে তারা জিয়ার কাজে সন্তুষ্ট, তাকে ভবিষ্যতে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ করছে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা। এটি তো প্রমাণিত যে জিয়ার স্ত্রী খালেদা পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। জিয়া যদি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিত তাহলে পাকিস্তানি সামরিক কর্তারা তার স্ত্রীকে নিরাপদে দেখভাল করত না।

জিয়া ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরেও বহু বাঙালি সেনা এবং গণমানুষকে হত্যা করেছে, যারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিলেন আর এ কাজটি করে জিয়া আসলে যুদ্ধাপরাধ করেছে, কেননা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যারা হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি করেছে তারাই যুদ্ধাপরাধী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি লন্ডনে থাকায় পৃথিবীর বহু দেশের পত্রিকা পাঠের এবং বেতারের খবর শোনার সুযোগ পেয়েছি। সেই সুবাদে আমি বাঘা কাদের সিদ্দিকী, মেজর শফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল নুরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের মোজাম্মেল হক যিনি ১৯ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই এক পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ারকে গাজীপুর থেকে বিতাড়িত করে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন (পরে কর্নেল) সাজ্জাদ জহির প্রমুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কথা জেনেছি। তারা সবাই প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেছেন বিধায় মেজর হাফিজের দাবি ধোপে টেকে না। কিন্তু জিয়ার নাম স্বাধীনতার আগে কখনো শুনিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী জিয়ার ভূমিকাও নিরঙ্কুশভাবে প্রমাণ করে জিয়া ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। যে লোক স্বাধীনতার মাত্র তিন বছর পর মুক্তিযুদ্ধের মূল স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে বিতাড়িত করল, শাহ আজিজের মতো রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানাল এবং অন্যসব রাজাকার দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করল, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের জায়গা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি মুছে দিয়েছিল, সেই লোক তিন বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা ছিল বলে ধরে নেওয়া কোনো যুক্তিতেই টেকে না। যে ব্যক্তির ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ের সব দৃশ্যমান কর্মকান্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, পাকিস্তানপন্থি সে মাত্র তিন বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তা অবিশ্বাস্য। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, চীনপন্থি এবং অন্য মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা জিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় একত্রিত হয়ে নতুনভাবে প্রাণের স্পন্দন পেয়ে গর্জে উঠে দেশের রাজনীতি পরিচালনা করছিল দেশকে আবার পাকিস্তানে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে, তারা ধর্মীয় রাজনীতির পুনর্জন্ম ঘটিয়েছিল, এটা তো আর কারও চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। কৌতূহলের কথা হলো, যারা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলে তাদের সিংহভাগই স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপ্রেমী।

জিয়ার লাশ যে চন্দ্রিমা উদ্যানে শায়িত নয়, এ কথা গোটা জাতি জিয়া হত্যার পর থেকেই জেনে আসছে। প্রত্যক্ষদর্শী সবাই জানে জিয়াকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র দিয়ে এমনভাবে হত্যা করা হয়েছিল যে রকেট লঞ্চার এবং বহু গুলিতে তার দেহের আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না, সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, যে কথা পরে গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছিল।

মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ, যিনি একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং জিয়া হত্যার ওপর প্রচুর গবেষণা করেছেন, তিনি বলেন, প্রথমেই জিয়ার ঘরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল রকেট লঞ্চার, যার কারণে জিয়ার শরীর নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথা। এরপর জিয়ার লাশের আদৌ কোনো চিহ্ন থাকলে তা কোথায় নেওয়া হয় তার সবটাই অজানা। তবে বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ (যিনি পরে বিএনপি নেতা হয়েছিলেন) লাশের খোঁজে রাঙ্গুনিয়া গিয়ে জানতে পারেন যে দুই দিন আগে সেনাবাহিনীর লোকেরা দুটি লাশ এক পাহাড়ের ঢালে পুঁতে রেখে গেছে। হান্নান শাহ পুলিশের সাহায্যে লাশ উত্তোলনের চেষ্টা করলেও গলিত লাশ থেকে অসহনীয় দুর্গন্ধ আসতে থাকায় পুলিশ আর সে কাজে অগ্রসর হয়নি, যে কারণে শুধু সেনাবাহিনীর লোকেরাই লাশ উত্তোলন করে। এর মধ্য থেকে একটি লাশ আইন মোতাবেক পুলিশ বা জেলার সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর না করে বেআইনিভাবে চট্টগ্রামের সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়, যদিও তখন বিদ্রোহ শেষ হয়ে গেছে, যার কারণে আইনি প্রক্রিয়াই ছিল অপরিহার্য। উল্লেখ্য যে আদালতের অনুমতি ছাড়া কবর থেকে কারও লাশ তোলা একটি ফৌজদারি অপরাধ, যে কাজটিই সেদিন ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ করেছিলেন।

জিয়া হত্যার সময় সামরিক বাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে থাকা উপরোল্লিখিত মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ ছাড়াও ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার। তাদের গবেষণা এবং চাক্ষুষ দেখা কথার উল্লেখ করে সম্প্রতি টেলিভিশনের পর্দায় তারা যা বলেছেন তা থেকে বিনা বিভ্রান্তিতে বলা যায়, যে জিনিসটি চন্দ্রিমায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেটি যে কী ছিল তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এ দুজনের কেউই বর্তমান সরকারের সুবিধাভোগী নন। জেনারেল (অব.) রশিদ (তখন ক্যাপ্টেন পদে) বলেছেন, জিয়া হত্যার সময় এবং পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গোটা দেশ ছিল বিএনপি সরকারের কর্তৃত্বে এবং খুব শিগগিরই বিদ্রোহ দমন করে স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

উপরোল্লিখিত কথাগুলো তিনি বলেছেন তার গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে। তিনি আরও বলেছেন, জিয়াকে যেভাবে প্রথমে রকেট লঞ্চার দিয়ে এবং পরে সাব-মেশিনগানের ২০টির বেশি গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে, তাতে তার চেহারা চেনার কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়। তিনি আরও বলেছেন যে জিয়ার সঙ্গে আরও দুজন সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল যারা ছিলেন নিরাপত্তা অফিসার মইদুল এবং গার্ড রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন হাফিজ যাদের সবাইকে রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে কোনোরকম মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ সেখানে গিয়ে দুটি লাশ মাটি খুঁড়ে বের করান। একটি নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে যেখানে লাশ জিয়ার বলে পরিচয় করিয়ে দেন জিয়ার পিএস কর্নেল মাহফুজ নামের একজন, তবে সেই মাহফুজকে পরে বিদ্রোহের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। সে সময়টা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিএনপি শাসন পুনঃপ্রবর্তিত হলেও লাশগুলো উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়া হয়নি, লাশগুলোর কোনো বৈধ সুরতহাল করা হয়নি এবং আইনমাফিক কোনো ময়নাতদন্তও হয়নি যা ফৌজদারি আইনে বাধ্যতামূলক, বলেছেন জেনারেল রশিদ। সামরিক হাসপাতালের জনৈক লে. কর্নেল তোফায়েল একটি সাদা কাগজে তথাকথিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখেন যা ছিল আইনবহির্র্ভূত। অর্থাৎ আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্তের যে মুদ্রিত ফরম আছে তা পূরণ করা হয়নি বিধায় একে কোনো অবস্থায়ই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলা যায় না। কর্নেল তোফায়েল তার সাদা কাগজে লেখা প্রতিবেদনে এও লিখেছিলেন যে লাশটি পুরোপুরি গলিত অবস্থায় ছিল। আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্ত করেন জেলার সিভিল সার্জন অথবা তার দ্বারা নির্ধারিত ডাক্তাররা, সে বিধিও মানা হয়নি। জেনারেল (অব.) রশিদ আরও বলেন, এরপর হেলিকপ্টারযোগে একটি কফিন ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম ফিরে এলে পরে কফিনটি বিমানবাহিনীর বিমানে ঢাকায় পাঠানো হয়। আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার, যিনি তখন মিলিটারি পুলিশের একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে কফিনটি পাহারার দায়িত্বে ছিলেন, বলেন, যে কফিনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নেওয়া হয়েছিল তা কখনো খোলা হয়নি, কোনো লাশ ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী গোসল করানো হয়নি, ফৌজদারি আইন অনুযায়ী সুরতহাল বা ময়নাতদন্ত করা হয়নি এবং পরে জিয়ার স্ত্রী বা তার দুই শিশু পুত্রের কাউকেই এবং জানাজায় উপস্থিত কোনো মানুষকেই কফিনের বাক্সে কী আছে তা দেখতে দেওয়া হয়নি, যদিও প্রথা অনুযায়ী দাফনের আগে লাশের মুখ আত্মীয়-পরিজন এবং উপস্থিতজনদের দেখানো হয়। তদুপরি আমাদের প্রথা অনুযায়ী কফিন দাফন করা হয় না, কফিন থেকে লাশ বের করে তা দাফন করা হয়, যার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছিল। জেনারেল শিকদার বলেন, তার ওপর কড়া নির্দেশ ছিল কফিন যেন কখনো কোনো অবস্থায়ই আংশিকও খোলা না হয়। জেনারেল শিকদার পাহারার দায়িত্বে থাকায় তিনি কফিনটি চন্দ্রিমা উদ্যানে পুঁতে রাখা পর্যন্ত এর পাহারায় ছিলেন বিধায় তার ভাষ্য ধ্রুব সত্য হতে বাধ্য।

এসব ঘটনার কারণেই চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি কফিন মাটিচাপা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবার মনে প্রশ্ন উঠেছিল- আসলে সেদিন কী জিনিস দাফনের নামে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল? চট্টগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী সবারই কথা ছিল, মুখমন্ডলসহ জিয়ার দেহ প্রথমে রকেট লঞ্চার ও পরে সাব-মেশিনগান দিয়ে লাগাতার গুলির আঘাতে এমনভাবে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল যে তাকে চিহ্নিত করার কোনো পথই ছিল না। আরও রহস্যজনক হলো, জিয়ার হত্যাকারীদের বিচার করা হলো না যদিও তখন বিএনপিই ক্ষমতায়। বিএনপি সরকারের এ ব্যর্থতা বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার অন্যতম প্রশ্ন হলো জিয়ার লাশ কী হয়েছিল। জিয়া হত্যার বিচার হলে তার লাশ সম্পর্কীয় সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যেত, আইনি প্রক্রিয়ায় সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত করা হতো, লাশ আদালতের অনুমতি নিয়ে তোলা হতো, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও তলব করা হতো, কেননা খুনের মামলায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অপরিহার্য। তদুপরি যারা ঘটনা জানত তাদের প্রত্যেককেই সামরিক আদালতে মিউটিনির বিচারের পর ফাঁসি দেওয়া হয়, যারা সংখ্যায় ছিল ১২ জন। এটি জিয়া হত্যার বিচার ছিল না, ছিল বিদ্রোহের বিচার। আর জেনারেল মঞ্জুরকে তো আগেই মেরে ফেলা হয়েছিল।

জিয়ার লাশ কোথায় তা জানা ঐতিহাসিক কারণেই প্রয়োজন, কেননা সে বন্দুকের জোরে, অর্থাৎ অবৈধভাবে হলেও দেশের হর্তাকর্তা বিধাতা হিসেবে কাজ করেছে কয়েক বছর। মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিস খানের ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাফনস্থান নিশ্চিহ্ন করা হলেও আজ ৯০০ বছর পরও প্রচুর গবেষণা হচ্ছে তার দাফনস্থান নির্ধারণের জন্য। দিগি¦জয়ী গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের কবরের স্থান অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ১৯ শতকের পর শতাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে তার আসল কবরস্থান চিহ্নিত করার, নেতাজি সুভাষ বসুর কী হয়েছে তা নিয়েও গবেষণা চলছে, কেননা ইতিহাসের স্বার্থেই তা প্রয়োজন।

কিন্তু জিয়ার ব্যাপারে এটি সম্ভব নয় কারণ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে তার দেহের অবশিষ্ট কিছুই ছিল না। এটি নিয়ে যারা চেঁচামেচি করছে তাদের কাছেও কিন্তু বিষয়টি অজানা নয়। মির্জা আলমগীরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জিয়ার লাশ দেখেছেন এমন কথা বলেন না, লাশ দেখেননি স্ত্রী খালেদা, পুত্র তারেক বা কোকো অথচ দাফনের আগে নিকটজনের মুখ একটিবার দেখার মধ্যে রয়েছে আবেগের বিষয়। এরপর কি আর সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে?

চন্দ্রিমায় যা পুঁতে দেওয়া হয়েছিল তাতে যে জিয়ার লাশ ছিল না এ কথাগুলো বিলেতের পত্রপত্রিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংবাদমাধ্যমে ঘটা করে ছাপা হওয়ায় আমার সুযোগ হয়েছিল তা পড়ার, জানার। তা ছাড়া কজন সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকেও এ কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। তদুপরি লাশ দাফনের সময় বা আগে কফিন খুলে জিয়ার লাশ দেখেছে বলেও কেউ বলেনি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে জনগণ জানতে পারে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ দাফন করা হয়নি। অবমুক্ত মার্কিন গোপন দলিল বলছে, সেদিন একজন সৈনিক গানপাউডার দিয়ে জিয়ার লাশের যেটুকুই বা ছিল তা পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং তার ছাইভস্ম রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং জিয়ার অনুগত এক সৈনিক, যাকেও হত্যা করা হয়েছিল সেই সৈনিকের সামরিক পোশাক পরিহিত লাশই জিয়ার লাশ বলে রাঙ্গুনিয়ায় দাফন করা হয়েছিল।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তখন নাকি জিয়ার ময়নাতদন্ত হয়েছিল, ২০টি গুলি নাকি তার দেহে পাওয়া গেছে। তখন তো তার দলই ক্ষমতায় ছিল। এ দাবি প্রমাণের দায়িত্বও তার। সত্যি সত্যি আইনানুগভাবে ময়নাতদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদন তো তিনি বা জিয়ার স্ত্রী, ভাই-বোনদের বা দলের সদস্যদের কাছে থাকার কথা, তারা এটা দেখাক। আলমগীর সাহেব অবশ্য এটা বলেননি যে ময়নাতদন্ত আইন মোতাবেক হয়েছে। তিনি সামরিক হাসপাতালের সেই ডা. তোফায়েল সাহেবের দ্বারা ময়নাতদন্ত হয়েছে বলেছেন। কেন আইন অনুসরণ করে সিভিল সার্জনের নির্ধারিত বেসামরিক ডাক্তারদের দ্বারা ময়নাতদন্ত করানো হলো না, কেনই বা সুরতহাল হয়নি- তার জবাব কি আলমগীর সাহেব দিতে পারবেন?

জিয়া হত্যার বিচার হতে পারে, এটা ভাবাই তো স্বাভাবিক ছিল, আর হত্যা মামলার বড় সাক্ষ্য হচ্ছে ময়নাতদন্ত। সে কারণেও তো ময়নাতদন্ত করা ছিল অপরিহার্য। অসত্য কথা বলায় যার জুড়ি কম তার নাম ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জিয়ার শরীরে ২০টি বুলেট পাওয়া গেছে। মেডিকেল জুরিস প্রোডেন্সের সঙ্গে যাদের ন্যূনতম পরিচয় রয়েছে তারা জানেন কোনো শরীরে ২০টি সাব-মেশিনগানের এবং রকেট লঞ্চারের বুলেট ঢুকলে সেই শরীর চিহ্নিত করা যায় না। মির্জা আলমগীর আরও বলেছেন, জিয়ার লাশ নাকি জেনারেল এরশাদ বহন করে চন্দ্রিমায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মৃত ব্যক্তির উদ্ধৃতি দেওয়া খুব সহজ। প্রশ্ন হচ্ছে জিয়ার লাশ যে চন্দ্রিমা উদ্যানে দাফন করা হয়নি সে দাবি তো বহু বছরের, চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি কফিন বাক্স মাটিচাপা দেওয়ার পরই এ কথা ওঠে। তাহলে এরশাদ সাহেবের জীবিত থাকা অবস্থায় কেন আলমগীর সাহেব এ কথা বলেননি? আর এরশাদ সাহেব লাশ বহন করলে তার স্ত্রী এবং ভাইয়েরও তো তা জানার কথা। তারা তো কিছু বলছেন না। জিয়ার পাশের কামরায়ই ছিলেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যিনি পরে বিএনপির মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তার নীরবতা কি প্রমাণ করে না যে জিয়ার লাশ বলে কিছুর চিহ্ন ছিল না? খুনের প্রত্যক্ষদর্শী না হলেও চট্টগ্রামে ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনিও তো আলমগীর সাহেবকে সমর্থন করে কিছু বলছেন না। ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোনো মুর্দাকে কফিনবন্দী অবস্থায় কবর দেওয়া হয় না। মুর্দারের লাশ কফিন থেকে বের করে তবেই সমাহিত করা হয়। তদুপরি দাফনের আগে লাশের মুখ আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাক্সক্ষীদের দেখানো হয়। জিয়ার মুখ কাউকে দেখানো হলো না কেন? কেন কফিন পাহারার দায়িত্বে থাকা সে সময়ের মিলিটারি পুলিশের ক্যাপ্টেন (পরে জেনারেল) মোহাম্মাদ আলী শিকদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কোনো অবস্থায় কফিন আংশিকভাবেও না খুলতে। তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকেই বা দেখানো হলো না কেন?

জিয়াকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন চট্টগ্রাম ছিল জেনারেল মঞ্জুরের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। কর্নেল মতিউর রহমান জিয়াকে জিঘাংসাভরে প্রথমে রকেট লঞ্চার এবং সাব-মেশিনগান দিয়ে এমনভাবে হত্যা করেছিল যেন তাকে চেনা না যায়। দুজন সামরিক কর্মকর্তা জিয়াকে বাঁচাতে এলে তাদেরও হত্যা করা হয়। আর সেই দুজনের লাশই কফিনবন্দী করে রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা এবং সেখানেই তাদের মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল।

যারা এ সত্য অস্বীকার করছেন তারা কথার ঝড় না তুলে বৈজ্ঞানিক পন্থায় প্রমাণ করতে পারেন জিয়ার লাশ চন্দ্রিমা উদ্যানে কবর দেওয়া হয়েছিল কি না। ডিএনএ পদ্ধতিতে বর্তমানে যে অগ্রগতি হয়েছে সে পদ্ধতির সাহায্যে চুল বা লোম এমনকি আঙুলের নখ থেকেও ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। আর এগুলো কখনো ক্ষয় হয় না। গলাবাজি না করে তাদের উচিত এসব বৈজ্ঞানিক পন্থায় পরীক্ষা করা, আর তাতেই সত্য বেরিয়ে আসবে। অযথা চেঁচামেচিতে বিএনপি-জামায়াতের অন্ধ সমর্থক ছাড়া কেউ সন্তুষ্ট হবে না।

সাক্ষ্য আইনের একটি মৌলিক কথা হলো, কোনো ব্যক্তি কিছু দাবি করলে তা প্রমাণের দায়িত্ব তার ওপর। তা ছাড়া গোটা জাতি জানতে চায় সেদিন জিয়ার লাশ কী হয়েছিল, এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যাবে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে, যা মোটেও কঠিন নয় এবং এজন্য কবরও খোদতে হবে না, একটি সরু সুড়ঙ্গ করেই ডিএনএ বের করা সম্ভব।

জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদের ভাষ্যমতে জিয়ার পিএসসহ ১২ জন সামরিক কর্মকর্তাকেই পরে মিউটিনির অভিযোগে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সামরিক আদালতে তড়িঘড়ি করে এদের বিচার হলো অথচ জিয়া হত্যার বিচার কেন হলো না? সে প্রশ্ন চিরদিনই রয়ে যাবে রহস্যে ঘেরা। বিএনপি তখন ক্ষমতায় অথচ সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া হত্যার বিচার বিএনপিই করল না! তা ছাড়া পরবর্তীতে খোদ জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েও কেন জিয়া হত্যার বিচার করলেন না, কেনই বা জিয়া হত্যার বিচার হলে যে ১২ ব্যক্তিকে মিউটিনির অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হলো, যারা হতো মুখ্য আসামি/সাক্ষী, যাদের কাছ থেকে আদালত সব জানতে পারত, তাদের কেন তাড়াহুড়ো করে জিয়া হত্যার বিচার না করে বিদ্রোহের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হলো, কেনই বা আইনগত পন্থায়, অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ নিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রাঙ্গুনিয়া থেকে লাশগুলো তোলা হলো না, লাশের সুরতহাল বা ময়নাতদন্ত করা হলো না, যেগুলো কি না হত্যা মামলার জন্য অপরিহার্য? লাশ যদি আদালতের নির্দেশে, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তোলা হতো তাহলে তো লাশের পরিচিতি সব খোলাসা হয়ে যেত। হান্নান শাহ জিয়ার লাশ পাননি বলে সেগুলো পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জনকে দেননি তা ভাবা কি স্বাভাবিক নয়? সেসব রহস্যের জবাব কি আদৌ কোনো দিন মিলবে? মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার যেহেতু মিলিটারি পুলিশের একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে কফিনের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন, তার কথা তো অবিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, বাক্স না খোলার কঠোর নির্দেশ ছিল তার ওপর। কেন সেই নির্দেশ? তিনি আরও বলেছেন, কফিনের ভিতরে কী ছিল তিনিসহ তা কাউকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আরও বলেছেন, কফিনের ভিতরের কোনো কিছুকে গোসল করানো হয়নি, অথচ ইসলামী নিয়মে জানাজা নামাজের আগে লাশ গোসল করানো বাধ্যতামূলক। এমনকি খুনিরা টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর লাশও গোসল করিয়েছিল। কফিনের ভিতর জিয়ার লাশ থাকলে নিশ্চয়ই তা গোসল করানো হতো, নিশ্চয়ই খুলে অন্তত স্ত্রী-সন্তানদের দেখানো হতো। দাফনের আগে নিকটজনকে লাশের মুখ দেখানোর সঙ্গে গভীর আবেগ জড়িত থাকে। এসব গোপনীয়তা শুধু একটি দাবিই প্রতিষ্ঠা করে যা হলো, কফিনে আর যা-ই থাকুক জিয়ার লাশ ছিল না। জিয়ার লাশ আদৌ চিহ্নিত করার অবস্থায় থাকলে তার সুরতহাল এবং আইন মোতাবেক সিভিল সার্জন দ্বারা ময়নাতদন্ত কেন করা হয়নি এক দিনের বিদ্রোহ দমনের পর, তার উত্তরই বা কী? এর পরও যারা জিয়ার লাশ চন্দ্রিমা উদ্যানে দাফন করা রয়েছে বলে দাবি করছেন তাদের ডিএনএর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে।

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

সর্বশেষ খবর