শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমি এবং আমরা

তসলিমা নাসরিন

আমি এবং আমরা

১. বেশ কয়েক বছর থেকে আমি ভাবছি, কবিতা আর ছোটখাটো নিবন্ধ প্রবন্ধ না হয় আমি লিখতে পারি নানা বিষয় নিয়ে, নিজের অভিজ্ঞতা, দর্শন, উপলব্ধি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু উপন্যাস কেন বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখি না! এর কারণ, বিচিত্র বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা নেই। একবার একজন বলেছিলেন, গ্রামের জীবন নিয়ে লেখো। আমি বলেছি, লিখবো কী করে, গ্রামে কোনওদিন যাইনি, থাকিনি। গ্রাম দেখেছি মূলত ট্রেন থেকে, বা গাড়ি থেকে, আর শহরের গা ঘেঁষে যে গ্রামগুলো, সেখানে সব মিলিয়ে চার-পাঁচবার যে যাওয়া হয়েছে, তাও সামান্য ক্ষণের জন্য। খুব কাছ থেকে গ্রামের মানুষদের জীবনযাপন দেখিনি। বস্তির জীবন? সেও দেখা হয়নি। চোর, বদমাশ, ভিখিরি, নেশাখোর, শ্রমিক, রাজনীতির জগৎ, বিজনেস পাড়া, বেশ্যা বাড়ি, না, কিছুই কাছ থেকে দেখা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই খুব জানতে চাইতাম জগৎটাকে। খুব দেখতে চাইতাম, কিন্তু দেখতে দেওয়া হয়নি। মামারা কাকারা দাদারা কিশোর বয়স থেকেই টই টই করে শহর ঘুরতো। কত কোথাও যেত, বন্ধুর বাড়ি, এই পার্ক, ওই মাঠ, সার্কাস, ঘোড়দৌড়, বাজার, দোকানপাট, সিনেমা, থিয়েটার, বন বাদাড়, বস্তি, পুকুরপাড়, নদীরপাড়, এই মেলা, সেই মেলা- কত নানা রকম মানুষের সঙ্গেও মিশতো, কথা বলতো, বন্ধুত্ব করতো- অবাধ স্বাধীনতা ছিল ওদের, ছেলে হওয়ার স্বাধীনতা। আমাদের মেয়েদের তা ছিল না। শুধু ইস্কুল আর বাড়ি, এর বাইরে কোথাও যাওয়া বারণ ছিল। বাবার ওপর খুব রাগ হতো, যেহেতু বাড়ির বাইরেটা, জগৎটা বাবা দেখতে দিত না। কিন্তু এখন আর সেই রাগটা হয় না, কারণ মেয়েদের জন্য বাইরেটা খুব খারাপ ছিল। আমিও যদি দাদারা যেভাবে ঘুরতো সেভাবে ঘুরতাম, আমাকে দুদিনেই ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো লোকেরা, অথবা ভীষণ বদনাম হতো আমার। বাবা পায়ের টেংরি ভেঙে চিরকালের জন্য হয়তো ঘরে বসিয়ে রাখতো। বাড়িতে বাবাদের মামাদের দাদাদের বন্ধুরা এলে ভিতরের ঘরে চলে যেতে হতো। মেয়েদের নাকি পুরুষ লোকদের আলোচনার মধ্যে থাকতে নেই। ঘরের জীবন খুব চিনি বলে বাইরের অচেনাকে চেনার বড় ইচ্ছে ছিল। মেয়েদের ইস্কুল কলেজে পড়েছি। মেয়েদের সঙ্গেই মিশেছি। ছেলেরা বড় এক রহস্যের মতো ছিল। মেডিকেল কলেজে ছেলেরাও পড়েছে আমাদের সঙ্গে, কিন্তু শৈশব কৈশোরে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেলে যা হয়, দূরত্বটা বড় হলেও বজায় থাকেই। সমাজটা যদি ছেলেদের মতো মেয়েদের ঘোরাফেরাকে সহজে মেনে নিত, তাহলে মেয়েরা জগৎ দেখার সুযোগ থেকে এত ভয়ংকরভাবে বঞ্চিত হতো না। আর জগৎ খুব খুঁটিয়ে না দেখলে জগৎ নিয়ে প্রবন্ধ বা পদ্য হয়তো লেখা যেতে পারে, কিন্তু উপন্যাস লেখা যায় না। উপন্যাসে বর্ণনা করতে হয় সব খুঁটিনাটি। জীবনযাপনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সবকিছু। আমার উপন্যাসগুলোয় আমি তাই লক্ষ্য করেছি বৈচিত্র্য নেই। মধ্যবিত্ত মেয়েদের ঘরের জীবন, তাদের দুঃখ-সুখই আমার উপন্যাসের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফাঁকি দিতে পারলে বানিয়ে বানিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের, ক্ষেত খামারের, কলকারখানার, জাহাজঘাটের অথবা অন্য কোনও বিশাল পটভূমি নিয়ে উপন্যাস লিখতে পারতাম। কিন্তু মুশকিল হলো, ওই ফাঁকিটাই আমি দিতে পারি না। অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হলে শুধু উপন্যাসে নয়, অন্য লেখাতেও বৈচিত্র্য আসে। জানি কেউ কেউ বলবেন, ঘরের জীবনটা যখন জানি, ঘরের জীবনটাকেই ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলি না কেন। সে চেষ্টা আমি করি, কিন্তু দুঃখটা তো থেকে যায়। চার দেয়ালের মধ্যে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দেওয়ার দুঃখ। একটা নারীবিদ্বেষী সমাজে জন্ম হলে মেয়েরা জীবনের কত কিছু থেকে যে বঞ্চিত থাকে! ঘরের জীবনটা আমার দাদারা দেখেছে, বাইরের জীবনটাও দেখেছে। আর, আমি আর আমার বোন মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে শৈশব কৈশোর আর তারুণ্যজুড়ে শুধু ঘরের জীবনটাকেই দেখেছি। আমাদের তো অধিকার আছে সবকিছু দেখার এই পৃথিবীর! নাকি নেই?

শুধু পুরুষ হয়ে জন্মাইনি বলে কত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি! আমার দাদারা দুনিয়া দেখেছে, কিন্তু লেখার ক্ষমতা নেই বলে কিছুই লিখতে পারেনি। হয়তো অন্য খাতে খাটিয়েছে অভিজ্ঞতা। লেখার হাত থাকলেও অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক সময় আমি মন খারাপ করে বসে থাকি। সেদিন খুব ইচ্ছে হয়েছিল কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কারদের নিয়ে, ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের নিয়ে বড় একটা উপন্যাস লিখি। কিন্তু ওদের জীবন পুরুষ হয়ে বিচরণ করলে যতটা দেখা সম্ভব, মেয়ে হয়ে ততটা সম্ভব নয়। ঘরের বাইরে যে পৃথিবী, তার প্রায় সবখানেই, প্রায় সব জায়গায় মেয়েরা অনাকাক্সিক্ষত, অবাঞ্ছিত।

যা কিছুই ঘটুক, পুরুষ হয়ে জন্ম নিইনি বলে আমার কিন্তু দুঃখ হয় না, বরং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। কারণ পুরুষশাসিত সমাজে সবকিছু পুরুষের, এই চিন্তাটা থাকা খুব ভয়ংকর, রীতিমতো মাথা নষ্ট করে দেয়, নীতিবোধ বলে, বিচারবোধ বলে প্রায় কিচ্ছু থাকে না, ভাবার-চিন্তা করার শক্তি লোপ পাইয়ে দেয়, নিজেকে ঈশ্বরের মতো বড় বলে মনে হয়, মূর্খতা আর মূঢ়তার মুকুট পরেই বসে থাকা হয় কেবল। পুরুষ হয়ে জন্মালে আমি আর দশটা পুরুষের মতো হতাম না এ কথা নিশ্চিত করে কী করে বলবো, নাও যদি হতাম, পুরুষ জাতটা তো আমার জাত হতো, যে জাতের বেশির ভাগই অবিবেচক, কূপমন্ডূক! হয়তো অনেকে বলবে বেশির ভাগ পুরুষই ভালো, সমানাধিকারে বিশ্বাস করে, শুধু হাতেগোনা ক’জন পুরুষই করে না। তাই যদি হয়, বেশির ভাগ পুরুষই যদি সমানাধিকারে বিশ্বাস করে, তবে সমাজে সমানাধিকারের আজও দেখা নেই কেন? কে বাধা দেয়? বেশির ভাগ পুরুষই যদি পুরুষতন্ত্র বিরোধী, তবে আজও কেন এত বহাল তবিয়তে, এত জাঁকিয়ে, সমাজজুড়ে বৈষম্যের মূল অপশক্তি পুরুষতন্ত্র টিকে আছে?

২. এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে। জানি এভাবে সবাই যাবে, আমিও। তারপরও কারও মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারি না। খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুরছি, কিন্তু যে মানুষটা নেই, কিছুদিন আগেই ছিল, তাকে মনে করতে করতে উদাস হয়ে যাই। ডানে যাব, বাঁয়ে যাই। চা তো ঠান্ডা হয়ই, বইয়ের যে প্যারাগ্রাফে চোখ, সেই প্যারাগ্রাফেই সারা দিন চোখ পড়ে থাকে, মন অন্য কোথাও, মন মানুষটার থাকায়, না-থাকায় নয়। মৃত্যু জিনিসটাকে যদি কিছু দিয়ে মুছে ফেলা যেত! আমার মতো এমন আগাগোড়া বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের এত আবেগ থাকবে কেন, এমন প্রশ্ন অনেক শুনেছি। তারপরও আমি আমিই থেকে যাই। ধর্মে যাদের বিশ্বাস আছে, তারা কষ্ট পায় কম, তারা তো ভেবেই নেয়, মৃত্যুই শেষ কথা নয়, মানুষ আবার জেগে উঠবে, মানুষকে দাড়িপাল্লায় বিচার করবে কোনও এক সর্বশক্তিমান, তারপর মানুষ আর মরবে না। অথবা মৃত্যুর পর আবার এই পৃথিবীতে ফিরে ফিরে আসবে মানুষ, মানুষ নয়তো পশু-পাখির রূপ ধরে। এসব বিশ্বাস থাকলে দুঃখ-টুঃখ পাওয়ার ব্যাপারটা কমই থাকে। আমার কষ্ট হয়, কারণ আমি জানি, যে গেছে সে একেবারেই গেছে, সে আর জাগবে না কোনওদিন, তার সঙ্গে আর কোনওদিন কারও দেখা হবে না।

মা চলে গেল। এরপর বাবা। মাঝে মাঝে বিশ্বাস হতে চায় না যে সত্যিই বাবা-মা নেই। মামা খালারা যারা ভালোবাসতো, তারাও নেই। দেশে যদি কোনওদিন ফিরতে পারি, দেখবো দেশটা ফাঁকা। আগে যারা শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন, তাদের বেশির ভাগই আর নেই। শামসুর রাহমান, কে এম সোবহান, কবীর চৌধুরী, আহমেদ শরীফ, ওয়াহিদুল হক, কলিম শরাফী, কেউ নেই। কলকাতায় পাশে ছিলেন অন্নদাশংকর রায়, নিখিল সরকার, শিবনারায়ণ রায়, অম্লান দত্ত, সবাই চোখের সামনে চলে গেলেন। কলকাতাও অনেকটা ফাঁকা। দিন দিন জগৎটা ফাঁকা হচ্ছে। দুটো ভাই, দিব্যি বেঁচে আছে, এর মধ্যেই একজনকে ধরেছে কর্কট রোগ, আরেকজনকে হৃৎপিন্ডের রোগ। কেউ জানে না হঠাৎ কী অসুখ কাকে থাবা দেবে। কাকে ধাক্কা দিয়ে কোন অতলে ফেলবে। আমিও ভাইদের মতো বাবা-মা’র অসুখগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। অসুখই পেয়েছি, আরাম আয়েশ, ধন দৌলত দু’ভাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। নির্বাসন জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছি, ঝড়ে ঝঞ্ঝায় দুর্যোগে দুঃসময়েও লেখাটা ছাড়িনি, এখনো লিখছি, যেমন লিখতাম, সেসব লেখাই যেসব লেখার জন্য ফতোয়া, নির্বাসন, হরতাল, আর লক্ষ লোকের মিছিল হয়। লিখতে লিখতেই হঠাৎ কোনও কঠিন অসুখ হবে, বুকে ভীষণ ব্যথা হবে, চুপচাপ মরে যাবো। একা একাই মরতে হবে। তাতে কী! মানুষ কি আর কাউকে সঙ্গে নিয়ে মরে! পাশে হয়তো থাকে লোক। মৃত্যুটাকে, মৃত্যুর যন্ত্রণাটাকে কেউ তো আর ভাগ করে নেয় না। মৃত্যু নিয়ে আমার কোনও স্বপ্নটপ্ন নেই। অনেকের থাকে। আত্মায় বিশ্বাস করলেই ওসব থাকে। আমার ওই ঝামেলা নেই।

জগৎটা ফাঁকা হলেই যে বেঁচে থাকার ইচ্ছে উবে যায়, তা নয়। যারা জানে জীবন একটাই এবং জীবন একবারই, তারা কেবল পেছনে তাকিয়েই জীবনযাপন করে না, সামনেও তাকায়। আমি সামনে তাকাই, তাই বলে কি পেছনে তাকাবো না, মা’কে মনে করবো না, বাবার জন্য দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলবো না, শিবনারায়ণ রায়ের স্নেহ আর ভালোবাসার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলবো না, তা কি হয়? বিজ্ঞানে আর বিবর্তনে বিশ্বাস করলে মানুষ খুব নিষ্ঠুর হয়, ধর্মবাদীরা এমন কুৎসা সবসময়ই রটায়। আসলে জীবনে আমি উল্টোটাই দেখেছি। খুন করছে, শিশু-ধর্ষণ করছে, চুরি ডাকাতি করছে, মিথ্যে কথা বলছে, মানুষকে ঠকাচ্ছে- এমন ভয়ংকর বর্বর মানুষগুলোর বিশ্বাস ধর্মে আর ঈশ্বরে অগাধ। আর যে ধার্মিকগুলো ভালো, তারা যদি কোনওদিন জেনে যেতে পারে যে কিছু নেই, তাহলে সর্বনাশ। তাদের বেশির ভাগই খুন খারাবি, লুটতরাজ, অন্যায় অত্যাচার করে পৃথিবীকে আস্ত একটা নরক বানিয়ে ছাড়বে। ঈশ্বরের শাস্তির ভয়ে যারা ভালো মানুষ, তারা সত্যিকার ভালো মানুষ নয়। সত্যিকার ভালো মানুষ তারা, যারা নাস্তিক হয়েও খারাপ কাজ করে না।

শত সহস্র কোটি গ্রহ নক্ষত্রের এই মহাবিশ্বে একটি ছোট্ট গ্রহে মানুষ নামক প্রজাতি অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আরও লক্ষ প্রজাতির মতো আমরাও হয়তো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাব। মহাবিশ্বের অযুত-নিযুত-কোটি বছরের ইতিহাসে মানবপ্রজাতির বিবর্তন এবং বিলুপ্তি সবই হয়তো এক পলকের ঘটনা। আমাদের বিলুপ্তিতে কিছু কি যায় আসে এই ব্রহ্মান্ডের? এ যেমন চলছে তেমন চলবে। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে একদিন আমাদের সূর্যটাও চুপসে যাবে, আশপাশে যা কিছু আছে, পৃথিবীসুদ্ধ সবকিছুকে শুষে নিয়ে, তবে। অত কোটি বছর অবধি কি আমাদের প্রজাতি বেঁচে থাকবে! হয়তো আরও নষ্টের দিকে যাবে, নয়তো অবিশ্বাস্য কোনও ভালোর দিকে। কে জানে আমাদের কোনও জল্পনা কল্পনার ধারে কাছেও হয়তো যাবে না, মানুষই একদিন পারমাণবিক বোমায় ধ্বংস করে দেবে পৃথিবীর সবকিছু। নয়তো কোনও একদিন মহাশূন্য থেকে কোনও একটা পাথর ছিটকে পড়ে ডাইনোসরের জাতকে যেমন নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, তেমন আমাদেরও করবে। এতকিছু জেনেও কিন্তু এই অনিশ্চিত অকিঞ্চিৎকর অর্থহীন জীবনকে ভালোবাসি, একে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা করি। মানুষ সুখে শান্তিতে স্বস্তিতে বাস করুক তার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে কিছু মানুষ। অধিকাংশই নিজেকে ছাড়া কিছু ভাবে না, তারা আরামে এই জীবনটা কাটিয়ে ঈশ্বরকে উৎকোচ দিয়ে পরকালেও আরামে কাটানোর ব্যবস্থা করে নেয়। অন্যে কী খাবে, অন্যে কী পরবে, তা তাদের ভাবার বিষয় বলে তারা মনে করে না। অন্যের সমস্যা অন্যে ঘোচাবে। ধর্মবাদীরা যে দুস্থ দরিদ্রদের একেবারে সাহায্য করে না, তা নয়। করে, তবে স্বার্থের কারণে করে। ঈশ্বরের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু জুটবে বলেই করে। নিঃস্বার্থ আর কজন! অল্প কিছু মানুষই শুধু নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। চিরকালই। ও না হলে কি আর সমাজটা পাল্টাতো যতটুকুই পাল্টেছে বা যতটুকুই ভালো হয়েছে!

কুড়ি কুড়ি বছর উড়ে যাচ্ছে এক তুড়িতে। জীবনের সময় বড় অল্প। রূপকথায় বিশ্বাস করি না বলে সময় আমার অহেতুক পুজোয় বা প্রার্থনায় নষ্ট হয় না। যতটুকু সময় আছে জীবনে, তা পুরোটাই চাই নিজের জন্য। নিজের যা ভালো লাগে, নিজের যা ইচ্ছে করে, তা করবো। সবাই যদি পারত এমন! কী করতে নিজের ভালো লাগে, তা টের পেতে পেতেই অনেকের জীবন ফুরিয়ে যায়। কারও কারও ইচ্ছেগুলো ধার করা, নিজের নয়। কত কত মানুষের মুখের হাসিটা নকল, কথাগুলো নকল, কাপড়চোপড় নকল! অনেক সময় মনে হয় চারদিকের মানুষগুলো ঠিক মানুষ নয়, প্রাণহীন রোবট।

এসবের মধ্যে থেকেও প্রতিদিন ভালোবাসছি। প্রতিদিন স্বপ্ন দেখছি সমতার, সততার। স্বপ্ন দেখছি সুন্দর পৃথিবীর। যারা আমার মতো ভাবছে- কে বলেছে তারা সংখ্যায় খুব কম! পৃথিবীর সবখানে তারা ছড়িয়ে আছে। কেউ ভেড়া নই বলে মাথা গোনার উপায় নেই। না, আমরা কেউই একা নই। মাঝে মাঝে যে একা বলে নিজেকে ভাবী, ভুল ভাবী। বাড়িভর্তি লোক থাকলেই যেমন মানুষের একাকিত্ব ঘোচে না, এক বাড়িতে জীবনভর একা থাকলেও এ আসলে একা থাকা নয়।

                লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর