বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তার কান্না

প্রতিবেশী দেশের সুমতি প্রত্যাশিত

দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী তিস্তা আশ্বিনেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। একসময়কার প্রমত্তা এ নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রিয় নদীর এ বিপন্ন দশা। শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই নদী হতশ্রী অবস্থা ধারণ করায় চাষাবাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তারা। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ এখন গড়ে ৬৫ হাজার কিউসেকের নিচে। যেখানে এ সময় পানি থাকার কথা প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার কিউসেক। প্রতিদিনই কমছে তিস্তার পানি। ভারতের গজলডোবায় প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর দুর্বার গতি রোধ করে দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে তার বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি নামের জীবন। যার ফলে মরে যাচ্ছে একসময়ের প্রমত্তা তিস্তা। এখন পাড়ে দাঁড়ালে বাতাসে শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায় তিস্তার গুমরে কান্নার শব্দ। তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর। ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের সবই বন্ধ। ফলে যতটুকু পানি পাওয়া যায় তা ঘুরিয়ে পাঠানো হয় তিস্তার সেচ খালে। পরিণতিতে মূল নদী থাকে প্রায় পানিশূন্য। এবার আশ্বিনেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা। ব্যারাজের খানিকটা উজান ও ভাটিতে জেগেছে বিস্তীর্ণ চর। তিস্তার পানিবণ্টনে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এক যুগ আগে। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়- নদীর পানি ভাগ করে নেওয়া হবে আধাআধি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের আপত্তিতে প্রতিবেশী দেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দিল্লি সরকার। তিস্তার পানি প্রত্যাহার প্রতিবেশী দুই বন্ধু দেশের সম্পর্কে বিসংবাদ সৃষ্টি করছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। সুপ্রতিবেশী সুলভ সম্পর্কের স্বার্থে তিস্তার পানিবণ্টনে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু দেশ প্রতিশ্রুতি রাখবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর