সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কুসংস্কার নিমজ্জিত বিশ্বে এসেছিলেন রসুল (সা.)

মুফতি রুহুল আমীন কাসেমী

কুসংস্কার নিমজ্জিত বিশ্বে এসেছিলেন রসুল (সা.)

মানব সভ্যতার এক যুগ সন্ধিক্ষণে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে পৃথিবী চরম দুর্দশার কবলে পতিত হয়। সভ্যতা ও মানবতা চির বিতাড়িত হয়ে নানা কুসংস্কারে সমাজ নিমজ্জিত হয়ে যায়। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার স্টিমরোলার যেন সর্বদা হানা দিচ্ছিল দুর্বলদের কুঠিরে। আর দুর্বলদের বিচারের বাণী সর্বক্ষেত্রেই অসহায়। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে নিজ হাতে গড়া পাথরের দেব দেবতার সামনে অসহায় ভিখারির মতো লুটিয়ে পড়ত। নারী জাতির কোনো সম্মান ছিল না। অপমানের গ্লানি থেকে বাঁচতে কন্যা শিশুদের নির্দয়ভাবে জীবিত কবরস্থ করত। সামান্য বিষয় নিয়ে যুগের পর যুগ যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। এমনই ঘোর অন্ধকার জাহিলিয়াতের যুগে এক উজ্জ্বল নূরানী আলোর মশাল নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন, সব নবী-রসুলের প্রধান, বিশ্ব নবী, শ্রেষ্ঠ নবী, আখেরি নবী মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার আগমনের সময় রবিউল আউয়াল মাস হলেও তারিখে মতানৈক্য রয়েছে। রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ৯, ১২ ও ১৮ তারিখসহ ইতিহাসে বিভিন্ন মতামত পরিলক্ষিত হয়। তাই মহানবীর জন্মতারিখ অনির্ধারিত রয়ে যায়। তিনি শেষ নবী। তারপরে আর কোনো নবী এ সুন্দর বসুন্ধরাতে আসবেন না। মানব জাতিকে সঠিক পথপ্রদর্শনের জন্য ওহির মাধ্যমে ঐশী প্রত্যাদেশ তার মাধ্যমেই পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য তাঁর মনোনীত ধর্মের বিধিনিষেধকে এখানেই পরিসমাপ্ত করবেন। শেষ নবীর নবুওয়াতের পরিধি ও কার্যক্রম কিয়ামত পর্যন্ত বনী আদমের জন্য যথেষ্ট ও নির্ধারিত। আল্লাহর শাশ্বত মনোনীত চিরন্তন দীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা ও স্থায়ীরূপে পৃথিবীবাসীর সামনে উপস্থাপন করার মহান কাজ তিনি সফল ও সুনিপুণভাবে আঞ্জাম দেন। রাহমাতুল্লিল আলামিন মানবতার মুক্তিদূত বাবা হারা, মা হারা, দাদা হারা হয়ে এতিম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সমগ্র আরববাসীর সামনে সৎ চরিত্রবান আমানতদার, সমাজসেবক ও ইনসাফগার হিসেবে আলামিন উপাধিতে ভূষিত হলেন, তখন যেন তিনি সমগ্র আরববাসীর গর্বের ব্যক্তি ও কুরাইশ বংশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। ৪০ বছর বয়সে যুবক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নবুয়াতপ্রাপ্ত হন, আল্লাহর বাণী প্রচার করতে শুরু করলেন, বিশ্বমানবতাকে মুক্তির বাণী শোনালেন, তখন নিজ বংশের আপনজনসহ সমগ্র আরবের লোকেরা তার বিরোধী ও শত্রুতে পরিণত হলো। নানাভাবে অত্যাচারসহ তাকে হত্যার জন্য তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। তখন যৎসামান্য আরবগণ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। নতুন মুসলিমগণও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছিলেন না। পরিশেষে আল্লাহপাকের নির্দেশে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনাবাসী তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং প্রিয় নবীর নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করেন। ১০ বছর মদিনা-মনোয়ারা থেকে ইসলামের বাণী প্রচার করেন, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের কেন্দ্রভূমি হিসেবেই বিবেচিত হয়। অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়সহ তিনি হজ আদায় করেন এবং বিদায় হজে উপস্থিত সোয়া লাখ সাহাবিকে লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার প্রাণপ্রিয় সাহাবিগণ, আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব আমি কি সঠিকভাবে পালন করেছি’, সাহাবিগণ সমস্বরে বললেন, অবশ্যই আপনি পালন করেছেন। তিনি অশ্রুসজল চোখে আল্লাহকে বললেন, ‘হে আমার পরওয়ারদিগার, আপনি সাক্ষী থাকুন, আমার সাহাবিগণ সাক্ষ্য দিচ্ছে, আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছি।’

লেখক :  ইমাম ও খতিব কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর