রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আয়কর রিটার্ন-সংক্রান্ত দরকারি তথ্য

তপন কুমার ঘোষ

আয়কর রিটার্ন-সংক্রান্ত দরকারি তথ্য

শুরু হয়ে গেছে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি। আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে করদাতার বার্ষিক আয়ের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। ৩০ নভেম্বর ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। যদিও ১ জুলাই থেকেই রিটার্ন জমা দেওয়া যায় তবু অনেকেই নভেম্বরের অপেক্ষায় থাকেন। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ২০২০-২০২১ হবে আয়বর্ষ এবং ২০২১-২০২২ হবে করবর্ষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতায় বিলম্ব সুদ ও জরিমানা গুনতে হবে। এবারও আয়কর মেলা হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এ ব্যবস্থা। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিবছর আয়কর মেলার আয়োজন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করমেলা সাধারণ করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। মেলায় এক ছাদের নিচে করসংক্রান্ত সব ধরনের সেবা পান করদাতারা। রিটার্ন ফরম পূরণে সহায়তা করেন কর কর্মকর্তারা। কিন্তু করোনা বাদ সেধেছে এ আয়োজনে। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে করমেলা হয়নি। এবারও হচ্ছে না। গতবারের মতো এবারও নিজ নিজ কর অঞ্চলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, নভেম্বরজুড়ে সব কর অঞ্চলে করমেলার আবহে রিটার্ন জমা নেওয়া হবে। থাকবে হেল্প ডেস্ক। দেশের ৩১ কর অঞ্চলের ৬৪৯ সার্কেলে অফিস চলাকালে নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন গ্রহণ করা হবে এবং তৎক্ষণাৎ প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া হবে। থাকবে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা।

বিশেষ সেবা বুথ : ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে বিশেষ সেবা বুথ থাকছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট কর অঞ্চল ছাড়াও সচিবালয়ে একটি বুথ থাকছে। সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বুথে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের বুথে ক্লাবের সদস্যরা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসে বিশেষ সেবা বুথ থাকছে।

টিআইএন : করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ছাড়া আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায় না। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮ লাখ ব্যক্তি করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে এনবিআর-সূত্রে জানা গেছে। করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারী সবারই বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তি যারা শুধু জমি বিক্রির প্রয়োজনে কিংবা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা নেই।

করমুক্ত আয়সীমা : সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই ৩ লাখ টাকা থাকছে। তবে তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) করদাতাদের ক্ষেত্রে এ সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের বার্ষিক আয়ের পৌনে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) সন্তানের পিতামাতা বা আইনগত অভিভাবকরা করমুক্ত আয়সীমায় বাড়তি ছাড় পাবেন। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তান/পোষ্যের জন্য এ সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।

করের হার : এ বছর করহার অপরিবর্তিত আছে। গত বছরের মতো এবারও সাধারণ করদাতাদের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর কোনো আয়কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এর পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে এবং তৎপরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।

কর রেয়াত : এত দিন রেয়াত পাওয়ার যোগ্য খাতে করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগ/চাঁদার পরিমাণ কিংবা করযোগ্য মোট আয়ের ২৫ শতাংশ কিংবা দেড় কোটি টাকা- এ তিনটির মধ্যে যেটি কম সে পরিমাণ (অনুমোদনযোগ্য) অঙ্কের ওপর নির্ধারিত হারে কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যেত। এবার দেড় কোটি টাকার স্থলে ১ কোটি করা হয়েছে। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ক্ষেত্রে কর রেয়াতের পরিমাণ হবে অনুমোদনযোগ্য অঙ্কের ১৫ শতাংশ। আর মোট আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে এ হার ১০ শতাংশ।

সারচার্জ : এবার সারচার্জের হারও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। করদাতার নিট পরিসম্পদ ৩ কোটি পর্যন্ত কোনো সারচার্জ দিতে হবে না। এরপর নিট পরিসম্পদের ভিত্তিতে চারটি স্তরে ১০, ২০, ৩০ ও ৩৫ শতাংশ হারে ফ্ল্যাট রেটে সারচার্জ পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখ্য, আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের ওপর নির্ধারিত হারে সারচার্জ পরিশোধযোগ্য।

নির্দেশিকা পরিপত্র : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবরের মতো এবারও আয়কর নির্দেশিকা (২০২১-২০২২) ও আয়কর পরিপত্র (২০২১-২০২২) প্রকাশ করেছে। এগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা আছে। আয়কর নির্দেশিকায় কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রেজিস্ট্রেশন, আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, মোট আয় নিরূপণ, করদায় ও সারচার্জ পরিগণনা ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। আর আয়কর পরিপত্রে বাজেট কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়করের ক্ষেত্রে আনীত পরিবর্তনগুলো স্পষ্টকরণ করা হয়েছে। যথাসময়ে কর প্রদান করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।

লেখক : সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।

সর্বশেষ খবর