সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলিমদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত

মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম

অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলিমদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত

একজন মুসলিমকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে অমুসলিমদের মুখোমুখি হতে হয়। তখন তাদের সঙ্গে সুন্দর ও সৌজন্যপূর্ণ আচরণ করাই ইসলামের নির্দেশ। ইসলাম যদিও অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্কের সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাদের বন্ধু বানাতে এবং তাদের সঙ্গে দীনি বিষয়ে আপস করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি সদয়, মানবিক ও ন্যায়ানুগ আচরণ প্রদর্শন করারও নির্দেশ দিয়েছে। কোরআনে আছে, ‘যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। আল্লাহ তো তোমাদেরকে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এবং তোমাদের বের করার কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করেছে। যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তারা জালিম।’ (সুরা মুমতাহিনা)। হাদিসে আছে, একদা রসুল (সা.) এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তা দেখে দাঁড়িয়ে যান, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, এ তো ইহুদির লাশ। রসুল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে মানুষ ছিল তো?’ (বুখারি)। ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম সব আত্মীয় ও প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করতে বলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুন্দর আচরণের আদেশ করেছি। তবে তারা যদি তোমার ওপর বল প্রয়োগ করে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে, যে সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তাদের কথা মানবে না।’ (সুরা আনকাবুত)। রসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিলেন, আমি মনে করছিলাম, তিনি হয়তো তাদের ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি)। তারা আর্তপীড়িত হলে, তাদের সেবা ও সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। হাদিসে আছে, এক ইহুদি গোলাম রসুল (সা.) এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখতে যান। তার মাথার কাছে বসে বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। তখন সে তার পিতার দিকে তাকায়। পিতা বলল, আবুল কাসেমের (নবীর) অনুসরণ কর। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রসুল (সা.) এই বলে বের হন, ‘আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি)। ইসলাম অমুসলিমদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করে। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (বুখারি)। অন্যত্র বলেন, যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিমকে নির্যাতন করে, তার অধিকার খর্ব করে, তাকে সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয় বা তাদের অসম্মতিতে ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়, কেয়ামতের দিন আমিই সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।’ (আবু দাউদ)। তদ্রƒপ ইসলাম অমুসলিমদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। ইসলাম কখনোই অমুসলিমদের ধর্ম পালনে বাধা সৃষ্টি করা, তাদের প্রতিমাকে গালিগালাজ করা, তাদের উপাসনালয়ে হামলা করাকে সমর্থন করে না। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সুরা বাকার)। তিনি আরও বলেন, তারা আল্লাহর বদলে যাদের ডাকে তাদের গালি দিও না। নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা আনআম)। হাদিসে আছে, রসুল (সা.) সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, কারও চেহারা বিকৃত করবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালাবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)। মোটকথা, শরীয়তের সীমারেখায় থেকে অমুসলিমদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকলেও ইসলাম কখনো তাদের প্রতি কোনো অন্যায় আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর