রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তওবার গুরুত্ব ও ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

তওবার গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রথমে আমাদের জানা দরকার তওবা কী? কেনই বা আমরা তওবা করব? আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টিগত -ভাবেই দুর্বল করে বানিয়েছেন। এজন্যই মানুষ পদে পদে ভুল করে, অপরাধ আর অন্যায় করে। সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হয়, নাফরমানি করে আর অকৃতজ্ঞ হয়। অন্যায় অপরাধে ডুবে থাকে। গুনাহ করে জীবন ধ্বংস করে। একসময় তার হুঁশ হয়। বুঝতে শেখে এ জীবন চিরস্থায়ী নয়। তাকে মরতে হবে। পরকালের জীবনে ফিরে যেতে হবে। হতে হবে সৃষ্টিকর্তার প্রশ্নের সম্মুখীন। তখনই সে পাপ ও অন্যায়ের পথ থেকে ফিরে আসে। এই ফিরে আসার নামই তওবা। তওবার মাধ্যমেই সে তার পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা জীবনের অবসান ঘটিয়ে আলোকিত জীবনে ফিরে আসে। তৈরি করে ইসলামী জীবন। এ তওবার মাধ্যমে সে পরম করুণাময়ের ক্ষমা পেয়ে জান্নাতি বান্দা হিসেবে নিজেকে জান্নাতে স্থান পাওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলে। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের গুনাহ খাতার জন্য আল্লাহর দরবারে তওবা কর, একান্ত খাঁটি তওবা। আশা করা যায় এর ফলে তোমাদের রব তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। এবং এর বিনিময়ে তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ সুরা আত তাহরিম আয়াত ৮। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করি।’ বুখারি।

তওবা কেবল শুধু মুসলিমের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। যে কোনো অমুসলিম চাইলেও তওবা করে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে পারে। তখন আল্লাহতায়ালা তার পুরনো জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। তাই তওবার দরজা সব বান্দার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তওবা করেছে আল্লাহর ওপর ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে আল্লাহ এমন সব লোকের গুনাহকে তাদের নেক আমল দ্বারা বদলে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ সুরা আল ফোরকান আয়াত ৭০। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘কিন্তু যারা তওবা করেছে, ইমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের কথা আলাদা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের ওপর কোনোরকম জুলুম করা হবে না।’ সুরা মারিয়াম আয়াত ৬০। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর দয়া সত্যিই অপরিসীম। উপরোক্ত আয়াতগুলোয় এটাই প্রতীয়মান হয় যে তওবার ফলে মানব জীবনের সব অপরাধ থেকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি দান করেন। আমাদের জানতে হবে একনিষ্ঠ তওবার শর্ত কী? আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়া ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, রসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা, তওবার পর কৃত অপরাধ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে আাসা, কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না করা, এজন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা, ধারাবাহিকভাবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য ও আদর্শের ওপর জীবন পরিচালনা করা, হারাম-হালাল মেনে চলা, সুদ বর্জন করা, অন্যায় অপরাধ ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর