রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হজের তাৎপর্য

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

হজের তাৎপর্য

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির একটি হলো হজ। যার মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণ বাবদ খরচের চেয়ে অতিরিক্ত এই পরিমাণ সম্পদ থাকে যা দ্বারা হজে যাওয়া-আসা এবং হজ আদায়কালে ব্যয় ও হজের সময় সাংসারিক খরচ যথেষ্ট হয়, তার ওপর হজ ফরজ। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহর জন্য মানুষের ওপর বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ করা হলো, তাদের জন্য যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর যে তা উপেক্ষা করল সে জেনে রাখুক আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭) হজের বিধান অবজ্ঞাকারী ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। হজ আদায় করা জীবনে একবার ফরজ। ফরজ আদায়ের পর পরবর্তীতে হজ পালন করলে তা নফল ও পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য হবে (আহমাদ)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ওমরাহ পালনের মাধ্যমে এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় পাপ মুছে যায়। বিশুদ্ধ হজের একমাত্র বিনিময় জান্নাত।’ (বুখারি, মুসলিম) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ পালন করল তখন নারীসংক্রান্ত পাপাচার ও শরিয়ত-বিরোধী কার্যক্রম বর্জন করল সে তার মায়ের গর্ভ থেকে যেভাবে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হয়েছে, সে যেন এমন নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি প্রত্যাবর্তন করল।’ (বুখারি, মুসলিম) হজের অন্যতম লক্ষ্য মানুষকে পাপমুক্ত করা এবং আল্লাহর ইবাদত ও পরকালমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া। হজের মধ্যে পরকালের স্মরণে অনেক ইবাদতের সমাবেশ ঘটেছে। যার শুরু হয়েছে কাফনসদৃশ ইহরামের মাধ্যমে। হজে রয়েছে আপন নীড় ছেড়ে কবরের পথে পাড়ি দেওয়ার শিক্ষা। আরাফাহ ও মিনায় অবস্থান এবং কাবাঘর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় সায়ির মধ্যে ফুটে ওঠে হাশরের দৃশ্য। পশু জবাইয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তার নৈকট্য লাভে ত্যাগ ও জানমাল বিসর্জনের প্রশিক্ষণ। আর মাথা মুন্ডানোর মাধ্যমে হাজিদের অন্তরে বেহেশতের পথে অগ্রসর হওয়ার আগ্রহ বাড়ায়। হজ সম্পর্কিত আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা কর, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৭)

হজের মাধ্যমে ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়। এসব স্থানে উপস্থিত হয়ে দোয়া ও জিকির করার সুযোগ হয়। তৌফিক হয় ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রত্যক্ষ করার। তাই মহান প্রভু মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণ লাভের জন্য বিশ্বের দূরদূরান্ত থেকে তাঁর পরিত্র ঘর অভিমুখে আগমনের বিধান প্রবর্তন করেছেন। কাবাঘর নির্মাণ শেষে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন, ‘আর তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও, তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের হালকা উটের পিঠে আরোহণ করে দূরদূরান্ত থেকে। যাতে তারা কল্যাণের স্থানগুলোয উপস্থিত হতে পারে।’ (সুরা হজ, আয়াত ২৭, ২৮) অত্যন্ত রহস্যময় একটি বিষয় হলো, হজ মুসলমানদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মিলনমেলা। (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫) সামাজিক ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মে নেই ধনী-গরিবের কোনো পার্থক্য। আছে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ঐক্যের শিক্ষা। সব পার্থক্য ভুলে সেদিন সবার মুখে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় আল্লাহর প্রশংসা ও একাত্মবাদের ধ্বনি।

 

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর