শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

আমল সুন্নত মোতাবেক হলে ইখলাসওয়ালা হবে

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

সব আমল আল্লাহর জন্য হওয়ার নাম ইখলাস; দুনিয়ার কোনো স্বার্থ যাতে নেই। ইখলাসের সঙ্গে আরেকটি বিষয় লাগবে। আত্মা শরীর ছাড়া ক্রিয়াশীল হয় না। শরীরও লাগবে, আত্মাও লাগবে। আমলের আত্মা হলো ইখলাস। আমলের একটা শরীর আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমলের শরীর না বানানো যায় ততক্ষণ কোনো কাজে আসবে না। সুন্দরবনের কাঠ কত দামি, সেগুন কাঠ কত দামি, এটা কিনে বাড়িতে রেখে দিলে কোনো কাজে আসবে না, এটা মিস্ত্রির কাছে দিতে হবে। সে সেটাকে কাটবে, ড্রেসিং করবে তারপর কাজে আসবে, সুন্দর দেখাবে। সুতরাং শুধু দামি হলেই হবে না। স্বর্ণ পড়ে থাকলে কাজে লাগবে না, স্বর্ণকারের দোকানে দিতে হবে। আগুনে জ্বালিয়ে সে ওটাকে ডিজাইন করবে, তারপর কাজে লাগবে। তা না হলে হবে না। এভাবে আমলকেও ডিজাইন করতে হবে। আমলকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আমলের একটি সুরত আছে, সেই সুরত বানাতে হবে। এটাকে ইসলামের পরিভাষায় সুন্নত বলে। যে আমলের মধ্যে ইখলাস আছে তবে সুন্নত মোতাবেক হয়নি, সে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। যখন আমল ইখলাসওয়ালা হবে, সুন্নতওয়ালা হবে তখন দুটি মহাশক্তির সঙ্গে ওই আমলকারীর সম্পর্ক হয়ে যাবে। ইখলাসের কারণে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যাবে আর সুন্নতের কারণে দোজাহানের বাদশাহ মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যাবে। নবী করিম (সা.) এ কথাই বলেছেন। ‘তোমরা যদি তোমাদের আমলগুলো সুন্নত মোতাবেক করতে পার (আমল সুন্নত মোতাবেক হলেই ইখলাসওয়ালা হবে), তবে আমি তোমাদের দুনিয়াতে জানিয়ে দিচ্ছি, যে ব্যক্তি তার জীবনে সুন্নতকে ফিট করে, সুন্নতের আমল করে সুন্নত মোতাবেক চলে সে আসলে আমাকে মহব্বত করে; আর যে আমাকে মহব্বত করে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’ আজকের পৃথিবীতে যেমন অন্যান্য জিনিসের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে, তার চেয়ে অবহেলা করা হচ্ছে নবীর সুন্নতের প্রতি। যতই আন্দোলন করা হোক, যতই চেষ্টা করা হোক যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের আমল সুন্নত মোতাবেক না হবে তত দিন পর্যন্ত কোনোভাবেই মুসলমানরা সফল হতে পারবে না। মুসলমানকে শক্তি ফিরিয়ে আনতে হলে, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের সব কাজের মধ্যে ইখলাস ও সুন্নত আনতে হবে। সাধারণ মানুষের তুলনায় আলেমদের দায়িত্ব বেশি। যেহেতু তারা নবীর ওয়ারিস। সাধারণের দায়িত্ব সহি আমল করা, পক্ষান্তরে সহি আমল ও ইলমকে সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে জনসম্মুখে দীনের দাওয়াত পেশ করার দায়িত্বও আলেমদের। এখন নিজের খবর নিজকেই নিতে হবে যে, আমার প্রতিটি আমল সুন্নত মোতাবেক হচ্ছে কি না। সাধারণ আমল তো রইলই, ব্যবসা-বাণিজ্যের জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য, চলাফেরার জায়গায় চলাফেরা, মুয়ামালা-মুয়াশারাত এগুলোর তো কোনো কথাই নেই, আমরা যে ইবাদতগুলো করছি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ। এ ইবাদতের ভূমিকায় যে অজু, আজান, ইকামত রয়েছে এগুলো আমরা সুন্নত মোতাবেক করছি কি না? নবীর সুন্নত বলতে কী বোঝায়? আমি অনেক মজলিসে বলেছি, হুজুর (সা.)-এর সুন্নতের ব্যাপক অর্থ আছে, কিন্তু সাধারণত নবীর সুন্নত হলো তাঁর বাতানো তরিকা। যেমন প্রস্রাব করতে গেলে তাঁর একটা তরিকা আছে, ঘুমাতে গেলে তাঁর তরিকা আছে, পানাহার করতে গেলে তাঁর তরিকা আছে, বসতে গেলে তাঁর তরিকা আছে। সবকিছুর তরিকা নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। একেই সুন্নত বলে। দৈনিক আমরা নামাজ পড়ছি কিন্তু নামাজ সুন্নত অনুযায়ী হলো কি না, আজান সুন্নত মোতাবেক হলো কি না তা কি খেয়াল করি? দেখা যায় শতকরা ৯০টি মসজিদের মধ্যে এমনকি বহু মাদরাসার মসজিদেও আজান হচ্ছে সুন্নতের খেলাফ। আজানে না মদের খবর আছে, না তারামের খবর আছে। এ আজান যে গানের মতো হয়ে যাচ্ছে, তারাম হয়ে যাচ্ছে, এটা নবীর সুন্নতবিরোধী। হজরত বেলাল হাবশি আজান দিয়েছেন, হজরত আবু মাহজুরা আজান দিয়েছেন, হজরত ইবনে উম্মে মাকতুম আজান দিয়েছেন, তাঁদের আজান কেমন ছিল তা ভালোভাবে কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। ওলামায়ে কিরামের খেয়াল রাখা উচিত, দেশের বহু মসজিদে আজান শুদ্ধ হচ্ছে না। আজান দিলে শয়তান পালিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আজানের পর ছাত্ররা দলে দলে বাজারে ঘোরাফেরা করছে। আমাদের এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। গানের সুর ও ভাঁজ সৃষ্টি না করে এক ধারায়, এক আওয়াজে সহিভাবে আজান দেওয়া উচিত। ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ’র জবাবে অনেকে বলে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। এ উত্তর কোনো কিতাবে লেখা আছে কি? এর জবাবে বলতে হবে, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললে জওবাব শুদ্ধ হবে না। শুদ্ধভাবে আজানের জবাব দিলে কেয়ামতের দিন হুজুর (সা.) সুপারিশ করবেন। দুনিয়ার অনেক মানুষ এখানে ভুল করছে। হ্যাঁ, নবীর নাম শুনলে দরুদ পড়তে হবে, কিন্তু এখানে নয়। যখন আজান শেষ হবে তখন আজানের শেষে প্রথমে দরুদ পড়তে হবে এরপর অসিলার দোয়া পড়তে হবে। মুসলিম শরিফের হাদিসে এরূপ বিদ্যমান রয়েছে। আজান হয় মসজিদে আর আমরা মসজিদে বসে গল্পগুজব করছি, এটা কিছুতেই উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের শুদ্ধ পথে পরিচালিত করুন!

 

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর