রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আলোকবর্তিকা হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

আলোকবর্তিকা হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)

উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্তহীন আলো ছড়ানো পূর্ণিমার মতো উজ্জ্বল এক নাম ফকিহুল মিল্লাত হজরতুল আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান (রহ.)। তিনি ছিলেন মুসলিম মিল্লাতের অবিসংবাদিত ইমাম। গোটা উপমহাদেশে ছড়িয়ে আছে তাঁর খ্যাতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তাঁর অফুরন্ত সুরভি। তিনি আমাদের রচিত ইতিহাসের স্তম্ভ মনীষী। বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা, সভ্যতা, সমাজসেবা ও গৌরবময় আত্মশুদ্ধির অস্তিত্ব রক্ষার সফল দিশারি। তিনি ছিলেন ফিকাহ শাস্ত্রে খ্যাতিমান কিংবদন্তি। আরবি সাহিত্য, আরব ইতিহাস, ইলমে কিরাত ও হাদিস শাস্ত্রে ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। ইসলামী অর্থনীতির ইতিহাসে তিনি প্রবাদমনীষী, ধ্রুবতারা, কালের সম্রাট। আত্মশুদ্ধির জগতে ছিলেন থানভি ও মাদানি ফয়েজের সমন্বয়ে এক মহান সাধক, মাজমাউল বাহরাইন। শিক্ষাজীবন থেকেই ছিলেন প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী। চট্টগ্রামের নাজিরহাট মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, হাটহাজারী মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে গৌরবের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে ইফতা সনদ লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলার এ ভূখন্ডে ইফতা বিভাগের জনক। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় ইফতা বিভাগ নামে একটি উচ্চতর ফিকাহ গবেষণা বিভাগের সূচনা করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে তাঁর পড়াকালে ইফতা বিভাগে প্রধান মুফতি ছিলেন মুফতি মাহদী হাসান (রহ.)। সহকারী ছিলেন মুফতি আহমদ আলী সাঈদ (রহ.)। একপর্যায়ে সহকারী মুফতি সাহেব দীর্ঘ ছুটিতে গেলে দারুল উলুম কর্তৃপক্ষ ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-কে সহকারী মুফতির দায়িত্ব প্রদান করে। অসাধ্য সাধনা, দায়িত্ববোধ আর খোদায়ি করুণায় তিনি এ মুফতিয়ে আজমের মুকুট লাভ করেছিলেন; কীর্তি, অবদান, খ্যাতি, স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতার উচ্চ আসনে পৌঁছেছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের স্বর্ণসন্তান বাংলাদেশে উচ্চতর ইলমে ফিকাহ চর্চা এবং হাদিস, তাফসির, ইলমে কিরাত ও ইসলামী অর্থনীতির জগতে উচ্চতর পড়ালেখা ত্বরান্বয়ের ইতিহাসে তিনি ইমামে ইনকিলাব। মুসলিম বিশ্বের সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও রচনার জগতে তিনি তারকাতুল্য। হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.) ছিলেন আদর্শ মানব ও স্বপ্নময় প্রতিষ্ঠান গড়ার খোদা প্রেরিত কারিগর। তাঁর জীবনের স্বপ্ন সাধনার ক্যারিয়ার শুরু হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে। ঢাকার সৌভাগ্য, হাজারো হিতাকাক্সক্ষীর স্বপ্ন পূরণ, হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর অন্তরে দীর্ঘকাল লালিত স্বপ্নের বাস্তবরূপ, চলমান বিশ্বের আলোড়িত ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা ঢাকা। জীবনের শেষ শ্রম দিয়ে তিলে তিলে গড়েছেন পরকালের এ জীবন্ত পুঁজি। জামিয়াতুল আবরার রিভারভিউ বসুন্ধরা, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিক্স বসুন্ধরা, মাদরাসা মদিনাতুল উলুম বসুন্ধরা, জামিয়া আশরাফিয়া গাজীপুর এবং জামিয়া মাদানিয়া শুলকবহর চট্টগ্রাম হজরতের জীবনের শেষ সাধনার জ্বলন্ত কীর্তি। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিপ্লব, মানবসেবা, সুন্নতি আমল প্রবর্তনের আন্দোলন এবং আত্মশুদ্ধির সাধনায় রয়েছে অসামান্য কৃতিত্ব। এক কথায় তিনি মহানবী (সা.) -এর সর্বজনীন আদর্শের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী। ১০ নভেম্বর, ২০১৫  ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর লাখো ভক্তের কোমল হৃদয়ে কালো ছায়া নেমে আসে। ওইদিন তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চিরশান্তির বাগানে পাড়ি দেন। তাঁর জীবনী শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের উপকৃত হওয়ার তৌফিক দিন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর