শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায়

মো. আমিনুল ইসলাম

বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায়

ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ। আল কোরআনে নামাজ আদায়ের কথা ৮২ বার এসেছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে নবী! তোমার মালিকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয়ের আগে ও তা অস্ত যাওয়ার আগে রাতের একাংশে এবং দিনের দুই প্রান্তেও তুমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর, যেন তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো।’ (সুরা ত্ব হা, আয়াত ১৩০) আমরা যখন নামাজ আদায়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াই তখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একাগ্রচিত্তে ও বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা। নামাজের আহকাম ও আরকান পুরোপুরি জানা। তা না হলে আমরা নামাজ আদায়ই করলাম, কপালে দাগ ফেললাম কিন্তু সঠিক ও পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে পারলাম না বা যে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নামাজ আদায় করলাম তা পরিপূর্ণতা লাভ করল না। তাহলে এ নামাজ আদায়ের কোনো মানে আছে কি? অবশ্যই নেই। আমাদের নামাজ আদায় করতে হবে ইখলাসের সঙ্গে। কারণ ইখলাস ছাড়া লোক দেখানো নামাজ আদায়ে কোনো মূল্য নেই। এ নামাজ অর্থহীন। এ নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হয় না। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে উত্তমরূপে অজু করা পূর্বশর্ত। নামাজ আদায় করতে হবে খুশুখুজুর সঙ্গে। আমাদের জানতে হবে খুশুখুজু কী? খুশুখুজু হলো হৃদয়ের কোমলতা, ধীরস্থিরতা, আনুগত্য প্রদর্শন, ভঙ্গুর অবস্থা। অর্থাৎ অন্তরকে ভেঙেচুরে প্রতিপালকের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় নিজেকে সমর্পিত করে নামাজে মনোনিবেশ করতে হবে। কোরআনে অজু সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদার ব্যক্তিরা! তোমরা যখন অজু করবে তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত দুটি ধুয়ে নেবে। এরপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দুটি গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। আর যদি কখনো নাপাক হয়ে যাও তাহলে গোসল করে পবিত্র হয়ে নেবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৬) কোরআনে অজু কীভাবে করতে হবে আল্লাহ তা সুন্দরভাবে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।

নামাজের ফরজ বা আহকামগুলো : ১. সময়মতো নামাজ আদায় করা। নামাজের সময় হওয়ার আগে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না। ২. পবিত্র অবস্থায় নামাজ আদায় করতে হবে। নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র হতে হবে। ৩. পোশাক পবিত্র ও পরিষ্কার (ময়লা বা নাপাকিযুক্ত নয়) হতে হবে। পোশাক সুদ বা ঘুষের টাকার হলে নামাজ হবে না। ৪. যে জায়গায় নামাজ আদায় করবে তা পবিত্র ও পাক হতে হবে। ৫. নামাজি পুরুষ হলে তাকে নাভি থেকে টাখনুর ওপর পর্যন্ত কাপড় দিয়ে সতর ঢাকতে হবে এবং মহিলার ক্ষেত্রে কাপড় এভাবে পরিধান করবে যাতে দুই হাতের কবজি, দুই পা ও মুখমণ্ডল ছাড়া সমস্ত শরীর আবৃত হয়ে যায়। পাতলা ওড়না ব্যবহার করা যাবে না, যাতে চুল দেখা যায়। পুরুষের পায়ের গিঁট কাপড়ে ঢেকে গেলে নামাজ মাকরুহ হবে। মহিলাদের সমস্ত গিঁট অনাবৃত থাকলে নামাজ মাকরুহ হবে। ৬. কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। ৭. ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজের নিয়ত করতে হবে। অমুক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করছি বললেই যথেষ্ট হবে।

নামাজের আরকানসমূহ : ১. আল্লাহু আকবার বা তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করতে হবে। ২. কিয়াম করা বা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। ৩. কেরাত পড়া বা সুরা ফাতিহার পর কোরআন থেকে কমপক্ষে তিন আয়াত পড়া। ৪. রুকু করা। ৫. সিজদাহ করা। ৬. শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া বা ওই সময়টুকু বসে থাকা। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত, পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারি) আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর