শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

খাদ্যে বরকত হওয়ার উপায়

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

খাদ্যে বরকত হওয়ার উপায়

বরকত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত অসীম অনুগ্রহ এবং অফুরন্ত অনুদান। বরকত শব্দটি অফুরন্ত বৃদ্ধি, আশাতীত কল্যাণ ও প্রাচুর্য এবং খোদা-প্রদত্ত সৌভাগ্য বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বুদ্ধিমান লোকজন সর্বদাই আল্লাহ-প্রদত্ত বরকত ও তাঁর নিয়ামতের প্রত্যাশায় থাকবে। মালসম্পদ, খাদ্য, জীবন, আমল, সন্তান ও পরিবার সবকিছুতে বরকত লাভ হওয়া সুখ-শান্তির শ্রেষ্ঠ সহায়ক। বিচক্ষণ মোমিন আল্লাহর অনুগ্রহবিমুখ হতে পারে না। বিশেষ করে চলমান দুর্ভিক্ষ ও বিশ্ব সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান প্রভুর কাছে তাঁর কল্যাণ ও বরকত প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) কল্যাণজনক কাজে আল্লাহর কাছে বরকত প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন। সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রুটি, গোশত ও খেজুর ইত্যাদি যখন তোমাদের হস্তগত হবে, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে এবং আল্লাহর বরকত প্রার্থনা করে আহার কর।’ (মুসতাদরাক) ক্ষেত্রবিশেষ বরকতের বিভিন্ন স্তর ও ব্যাখ্যা রয়েছে। টাকাপয়সা ও সম্পদে বরকতের অর্থ হলো, যে কাজে তা ব্যয় হবে এতে মঙ্গল ও কল্যাণ সাধিত হওয়া। খাদ্য ও খাবারে বরকত হওয়ার অর্থ হলো, এর দ্বারা শরীরের কাক্সিক্ষত সুস্থতা, বৃদ্ধি ও প্রশান্তি লাভ করা। সময় ও জীবনে বরকত হওয়ার মর্ম হলো, জীবনের মুহূর্তগুলো যেসব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা পরিপূর্ণ সফল এবং সময় অনুযায়ী যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন হওয়া। সব অবস্থায় আল্লাহ বরকতের পদ্ধতি রেখে দিয়েছেন। সময় ও জীবনে বরকত হয় নেক আমলের মাধ্যমে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ভালো আমল ছাড়া কিছুই বয়স বাড়াতে পারে না, দোয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। আর মানুষ তার কৃত পাপের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (তিরমিজি) সম্পদে বরকত হয় দান-সদকার মাধ্যমে। পক্ষান্তরে অবৈধ উপার্জনের কারণে সম্পদের বরকত উঠে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হয় সততার মাধ্যমে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যদি সত্য বলে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি ঠিকভাবে বলে, তাহলে তাদের কেনাবেচায় বরকত প্রদান করা হয়। আর যদি মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষত্রুটি গোপন করে তাহলে তাদের কেনাবেচায় বরকত মিটিয়ে দেওয়া হয়।’ (বুখারি) খাদ্য ও পানাহারে বরকত অর্জন হয় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে। এর অন্যতম হলো, আল্লাহর কাছে বরকত প্রার্থনা করা, অপচয় রোধ করা, বৈধভাবে সঞ্চয় করা, মিতব্যয়ী হওয়া, হারাম উপার্জন ও পাপাচার বর্জন করা, অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি সঞ্চার করা, তাঁর ওপর ভরসা রাখা, অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার করা। পানাহার ও রিজিকে বরকত হওয়ার বিশেষ একটি মাধ্যম হলো আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ জীবিকার বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে।’ (বুখারি, মুসলিম) বিয়েতে বরকতের বিশেষ একটি বিধান হলো, অতিরিক্ত ব্যয় বর্জন করা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ওই বিয়ে বেশি বরকতময় যে বিয়েতে ব্যয় কম হয়।’ (শু’আবুল ইমান, বায়হাকি)

 

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর