শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সতীত্ব পরীক্ষা

তসলিমা নাসরিন

সতীত্ব পরীক্ষা

১. মাঝে মাঝে কিছু ভালো কাজ ভারতের আগেই ঘটিয়ে ফেলে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান। যেমন তিন তালাক। আফগানিস্তান, তুরস্ক, তিউনেশিয়া, আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দান, মিশর, ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া, সুদান, লেবানন, সৌদি আরব, মরক্কো, কুয়েত এরকম অনেক মুসলিম দেশ ভারতের আগেই তিন তালাক নিষিদ্ধ করেছে। সাধারণত সংখ্যা যেখানে বেশি,  সেখানে প্রগতিশীলতার হাওয়া বেশি। অথচ ভারতে মুসলমানের সংখ্যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও ভারতীয় মুসলমানের বিবর্তন একেবারে হতেই চায় না।

সতীত্ব পরীক্ষাটিও অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেও এটি নিষিদ্ধ। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এটিকে সবে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে। এই সতীত্ব পরীক্ষাটি নেহাত যৌন নির্যাতন ছাড়া কিছু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই অসভ্য সমাজে এই পরীক্ষাটি করা হয়। বাড়ির বউ হয়ে যে মেয়েটি আসবে, তার যে সতীচ্ছদ অক্ষত আছে, তা পরীক্ষা করে রীতিমতো সতীত্বের সনদপত্র হাজির করতে হয়। আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে অক্ষতযোনীর মূল্য এত বেশি যে মেয়েশিশুদের যৌনাঙ্গের মুখ সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, বিয়ের সময় সেই সেলাই প্রথম খোলা হয়। আবার যাদের যৌনাঙ্গের মুখ শিশু বয়সে সেলাই করা হয়নি, তাদের ভালো বিয়ে হতে গেলেও সতীচ্ছদ অক্ষত থাকা চাই, তাই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার পর অনেক মেয়েই গোপনে ডাক্তারের ক্লিনিক থেকে নিজেদের ছেঁড়া সতীচ্ছদ মেরামত করে নিয়ে আসে।

সতীচ্ছদটা ডাক্তাররা পরীক্ষা করেন দু’আঙুল দিয়ে, সে কারণে এর পরিচিত নাম ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’। এই দু’আঙুলের পরীক্ষা আদৌ ধর্ষণ ঘটেছে কিনা সেটি দেখতেও করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগ এলে দু-আঙুলের এই সতীত্ব পরীক্ষায় ডাক্তাররা দেখেন ধর্ষণের শিকার মেয়েটির সতীচ্ছদ অক্ষত কি না। অক্ষত থাকলে ধর্ষণ ঘটেনি, অক্ষত না থাকলে ধর্ষণ ঘটেছে। খুব সাদামাটা সহজ হিসেব। এই পরীক্ষায় আবার এও দেখা হয় যোনীপথে আঙুল খুব সহজেই ঢুকে যাচ্ছে কি না, যোনীপথের দেয়াল নরম কি না। খুব সহজেই নরম যোনীপথে আঙুল ঢুকে যাওয়া মানে মেয়েটি কুমারী বা ভার্জিন তো নয়ই, বরং মেয়েটি যৌন সম্পর্কে দীর্ঘদিন অভ্যস্ত। ধর্ষণের শিকারির যদি অতীতে যৌনতার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে ধর্ষকের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ খুব শক্তপোক্ত হয় না। অবিবাহিত মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে দেখে নেওয়া হয় মেয়েটির চরিত্র কেমন, “ভালো’’, নাকি “খারাপ’’। সতীচ্ছদ অক্ষত থাকলে ‘ভালো’, না থাকলে শুধু খারাপ নয়, রীতিমতো তাকে বেশ্যা বলে চিহ্নিত করা হয়।

ধর্ষণের সংজ্ঞা কিন্তু পাল্টেছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনুমতি নিয়েও তাদের সঙ্গে যৌনকর্ম করাকে ধর্ষণ বলা হয়। অনুমতি না নিয়ে কারও যৌনাঙ্গে প্রবেশ করার নাম তো ধর্ষণই, অনুমতি না নিয়ে কাউকে শুধু গায়ের জোর খাটিয়ে উলঙ্গ করা, তার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করা, অন্যের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করতে তাকে বাধ্য করা ইত্যাদি অনেক কিছুর নামও কিন্তু এখন ধর্ষণ। সুতরাং সতীচ্ছদ বিদীর্ণ না হলেও ধর্ষণ ঘটতে পারে। আবার কুমারী মেয়েরও সতীচ্ছদ নানা অযৌন কারণে বিদীর্ণ হতে পারে। এসব নানাবিধ কারণে দু’আঙুলের পরীক্ষাটি একটি অযৌক্তিক, অনৈতিক এবং অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বলে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

সতীত্বের পরীক্ষা কিন্তু পুরুষকে কখনও দিতে হয় না। কেবল একা মেয়েই অপমানিত হয়, অসম্মানিত হয়। ধর্ষকের হাতে একবার ধর্ষিতা হওয়া মেয়ে, দুআঙুলের ডাক্তারি পরীক্ষায় ডাক্তারদের দ্বারাও আরও একবার ধর্ষিতা হয়। তা ছাড়া এ আর কী? কেন তাকানো হয় না ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়ের আত্মসম্মান আর আত্মমর্যাদার দিকে? ধর্ষণের শিকার হতে হবে, লোকের ছুঁড়ে দেওয়া ঘৃণা গ্রহণ করতে হবে, মুখ লুকিয়ে বাস করতে হবে, একঘরে হয়ে যেতে হবে, চরম হতাশায় ভুগতে হবে এবং অবশেষে নিজের শরীরের ভেতর ডাক্তারের দু’আঙুলের অনধিকার প্রবেশ, বা বহিরাক্রমণ সহ্য করতে হবে! আর কতভাবে যে মেয়েদের লাঞ্ছিত করতে চায় সমাজ!

সতীত্ব পরীক্ষাটি ভয়ঙ্কর রকম পুরুষতান্ত্রিক, এবং নারীর বিরুদ্ধে এ রীতিমতো যৌন নির্যাতন। এ বিষয়ে কোনো সুস্থ এবং বিবেকসম্পন্ন মানুষের কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। সতীত্ব পরীক্ষাটি মেয়েদের জন্য কী পরিমাণ যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তা মেয়ে হয়ে যারা অসভ্য সমাজে জন্মেছে, তারাই হাড়ে মজ্জায় জানে।

মিশরের তাহির স্কোয়ারে যখন গণতন্ত্রের জন্য গণজাগরণ এবং বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সে সময় বেশ কিছু মেয়েকে সেনাবাহিনীর লোকেরা উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, এবং তাদের সতীত্ব পরীক্ষা করেছিল। জগৎ জানে মেয়েদের সঙ্গে তারা কী অন্যায় আচরণ করেছিল। অসভ্য সমাজে এই ‘সতীত্ব পরীক্ষা’ মেয়েদের হেনস্থা করার জন্যও বেশ চালু রয়েছে।

আমি অবাক হই এই পরীক্ষাটি আজও এই একবিংশ শতাব্দীতেও অনেক দেশেই বৈধ। প্রাচীন এই প্রথাটি সত্তর দশকে ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিল। যে অবিবাহিত মেয়েরা ইংল্যান্ডের বাইরের দেশ থেকে ইংল্যান্ডে আসতো বসবাসের জন্য, ইমিগ্রেশনে সেই মেয়েদের ভার্জিনিটি পরীক্ষা হতো, দেখার জন্য সত্যিই তারা ভার্জিন কি না অর্থাৎ অবিবাহিত কি না। আমেরিকাও মাঝেমধ্যে এই বর্বর পরীক্ষা ব্যবহার করে।

দেরিতে হলেও ‘সতীত্ব পরীক্ষা’ নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দিয়েছে বলে ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে সকল নির্যাতিত নারীর পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

২. ‘সতীত্ব-বন্ধনী’ বলে একটি বন্ধনী ছিল এক সময়। লোহার তৈরি বৃত্তাকার বেড়ি, সামনের দিকে তিনকোনা ধাতব পাত, পাতের মাঝখানে দাঁতওয়ালা একটি ছিদ্র। এই বেড়িটি মেয়েদের কোমরে পরানো হতো। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে এই সতীত্ব-বন্ধনী ব্যবহার করা হতো এবং কবে থেকে এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউরোপে যে এটি ব্যবহৃত হতো তার প্রমাণ যথেষ্ট। ক্রুসেড যোদ্ধারা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে যাবার সময় স্ত্রীদের এই লোহার বন্ধনী পরিয়ে যেত। কেবল যে ক্রুসেড যোদ্ধারাই এ কাজ করত, তা নয়, দূরে কোথাও যেতে হলে যোদ্ধা ছাড়া অন্য পুরুষরাও স্ত্রীদের এই বন্ধনী পরাত। এই বন্ধনী কেবল স্বামীর আদেশে মেয়েদের পরতে হতো, তা নয়; সমাজের আদেশেও পরতে হতো। ইতালিতে তো ছিলই, চীনেও এই বন্ধনীর ব্যবহার ছিল প্রচুর। কেউ কেউ বলে থাইল্যান্ডেও ছিল। ১৮৮৯ সালে পাচিংগার নামে এক জার্মান নৃতত্ত্ববিদ অস্ট্রিয়ার এক শহরে গিয়েছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৈরি পুরনো একটি গির্জার সংস্কার-কাজ দেখতে। গির্জার মেঝেয় যে কাঠ ছিল তা সরানোর সময় নিচে একটি গর্ত দেখেন তিনি। সেই গর্তে একটি কফিন ছিল, কফিনটি ছুঁতে গেলেই ঝুরঝুর করে পচে যাওয়া কাঠ ঝরে পড়ল, বেরিয়ে এলো ভেতরের কঙ্কাল। লম্বা চুল দেখে বোঝা যায়, এটি কোনো মেয়ের কঙ্কাল। গায়ে যে পোশাকের অংশ সামান্য পাওয়া যায়, তাতে অনুমান করা হয় পোশাকটি সপ্তদশ শতাব্দীর তৈরি। পোশাকটি সরানোর পর তিনি দেখেন কোমরে পেঁচানো লোহার বেড়ি। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তৈরি এই সতীত্ব-বন্ধনীটির ছিদ্রওয়ালা পাতে ছিল মোট একুশটি দাঁত। এই বন্ধনী দেখে জার্মান নৃতত্ত্ববিদ পাচিংগার বিস্মিত হয়েছিলেন কি না জানি না। তবে আমি বিস্মিত হই পুরুষের উদ্ভাবন ক্ষমতা দেখে। সতীত্ব-বন্ধনীতে তালা লাগিয়ে চাবিটি পকেটে নিয়ে তারা ঘর থেকে বেরোত। কিন্তু নিজেদের বিশেষ অঙ্গ থাকত মুক্ত। তাদের সে অঙ্গ যেখানে-সেখানে ব্যবহারে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু ঘরের স্ত্রীর অঙ্গ ব্যবহারের ব্যাপারে সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য এ রকম একটি লোহার পোশাক পরাতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করত না। পুরুষের নিষ্ঠুরতার এটি একটি বড় উদাহরণ।

এই পৃথিবীর পুরুষেরা নারীর সতীত্ব রক্ষার জন্য লোহার বর্ম বানিয়েছিল। এই পুরুষেরা নারীর সতীত্ব প্রমাণ করবার জন্য নারীকে মৃত স্বামীর চিতায় তুলেছে। এই পুরুষেরা এখনো বীভৎস সব পন্থায় নারীর সতীত্ব রক্ষা করে চলেছে। নানা নিয়মকানুন নারীর ওপর চাপিয়ে নারীর সতীত্ব তারা নিজেদের মতো করে উপভোগ করছে। আগে লোহার বর্ম ব্যবহার করা হতো, এখন সামাজিক অঙ্গুলি নির্দেশেই কাজ হয়। সমাজ নারীকে বলেছে ঘরে থেকো, স্বামীর আদেশ ছাড়া ঘর-বার হইও না, পরপুরুষের সঙ্গে মিশো না, মিশলে তালাক, মিশলে মরণ। নারীকে এখন হয়তো লোহার বেড়ি পরানো হয় না। কিন্তু অদৃশ্য একটি বেড়ি থাকে তার কোমরে পরানো। অদৃশ্য একটি লোহার পাত থাকে গোপন অঙ্গকে ঢেকে রাখবার জন্য, পুরুষের সন্দেহের কোনো তল নেই। অবিশ্বাসের কোনো সীমা নেই। কিন্তু নারীকেই কেন একা সতীত্ব রক্ষা করতে হবে? পুরুষের পরনারীগমনে আদিম, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ- কোনো যুগই কোনো বাধা দেয়নি। সতীত্ব রক্ষা শব্দটি পুরুষেরই তৈরি, লোহার বেড়িও তাদের তৈরি। পুরুষেরা কি নিজের জন্য এমন অস্বস্তিকর অপমানকর কোনো ব্যবস্থা নিতে রাজি হবে? নিশ্চয়ই নয়। তাই সব অপমান, সব অস্বস্তি, সব জ্বালা-যন্ত্রণা একা নারীর। নারীর ভাগেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে দুঃসহ জীবন।

অনেকে বলে আসলে গর্ভের সন্তানটি স্বামীর কি না এটি প্রমাণ করবার জন্যই নারীকে সতী হতে হয়। স্বামী যদি অন্যত্র আর দশটি সন্তানের বীজ ঢেলে আসে, তাতে ক্ষতি নেই, কেবল একটি জরায়ুর সন্তানের জন্য তার সব আগ্রহ উপচে পড়ে। এরও কারণ তারা আবিষ্কার করেছে। বলেছে, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী যে হবে তার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে হবে। উত্তরাধিকারী অন্যের ঔরসের হলে স্বামীর পৌরুষের অপমান। আহা পৌরুষ! পুরুষের পৌরুষের তলায় নারী কতকাল পিষ্ট হচ্ছে! কতকাল পিষ্ট হচ্ছে নারীর ব্যক্তিত্ব, নারীর সর্বস্ব! নারী কি পুরুষের পৌরুষ রক্ষায় সাহায্য করবার জন্য জন্ম নিয়েছে? সে কি পৃথক কোনো অস্তিত্ব নয়?

পুরুষের সন্তানকে বৈধ প্রমাণ করবার জন্য নারীজন্ম নয়। নারীর জীবন পুরুষের স্বার্থে উৎসর্গ করতে হবে কে বলেছে? তাদের বৈধ-অবৈধের ধার নারী ধারবে কেন? এ তো এক নষ্ট সমাজের নিয়ম যে নিয়মের জাল খুলে নারী এখনো বেরোতে পারেনি। তাকে বেরোতে হবে, তাকে প্রমাণ করতে হবে তার জীবন একা তারই। তার সতীত্বের গায়ে তালা লাগিয়ে চাবি কোনো পুরুষের নেবার অধিকার নেই, নারীর দেহের চাবি নারীর কাছেই থাকতে হবে। এ ছাড়া নারীর মুক্তি নেই। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যেমন নারীর প্রয়োজন, দেহের স্বাধীনতাও নারীর প্রয়োজন, এই স্বাধীনতা না থাকলে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক যত স্বাধীনতাই নারীর থাকুক, সত্যিকার স্বাধীন সে নয়। নারীর দেহের স্বাধীনতার কথা শুনলে অনেকে নাক সিটকোবে, বলবে, ‘ছিছি নারীর আবার দেহের স্বাধীনতা কী?’ নারীর সবটুকু স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে সমাজ যদি তাকে নষ্ট বলে তাও ভালো, পুরুষের দাসী হওয়ার চেয়ে। আসলে দেহের স্বাধীনতা নারীর আরও সব স্বাধীনতার মতো একটি স্বাধীনতা। নারী যে কোনো স্বাধীনতা পেলেই তাকে ‘নষ্ট’ বলা হবে এই ভয় দেখানো হয়। এসব পৌরুষিক চক্রান্ত ছুড়ে ফেলে নারীকে যদি মানুষ হতে হয়, তার শরীর ও মনের সবটুকু স্বাধীনতা তাকে অর্জন করতেই হবে।  দেহের স্বাধীনতা মানে কিন্তু দৈহিক সম্পর্কের প্রস্তাবে সবসময় ‘হ্যাঁ’ বলা নয়, ‘না’ বলার স্বাধীনতাও দেহের স্বাধীনতা।

৩. প্রায় চল্লিশ বছর আগে সনদপত্র নামে একটি কবিতা লিখেছিলাম। মনে পড়ছে সেই কবিতাটি।

‘সতীত্ব কাহাকে বলে? আমি এর সংজ্ঞা চাই,

সতীত্ব কাহার নাম, আমি এর রক্ত-পুঁজ ঘেঁটে

ত্বক ছিঁড়ে, সুখদ মাংসের কাঁচা স্বাদ পেতে চাই।

শুনেছি সতীত্ব খুব সুস্বাদু জিনিস

পরনের লাল শাড়ি, চুড়ি ফিতে, নাকের নোলক

খুলে ভেঙে দেখিনি সতীত্ব দেখতে কেমন।

অস্পৃশ্য আঙুলে ছুঁতে চাই সতীত্বের সাতনরি হার।

সতীত্ব কোথায় থাকে

কার অঙ্গে বাস করে সতীত্বের সাপ?

জানে না নির্বোধ নারী এই সাপ তাকে বন্দি রাখে ঘরে

আর খোলা মাঠে ধূর্ত হাতে সাপখেলা দেখায় পুরুষ।

পুরুষেরা ভদ্রলোক,

পুরুষের জন্য সতীত্বের সনদ লাগে না।’

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর