রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনে উত্থান-পতন

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনে উত্থান-পতন

প্রতিটি মানুষের জীবনে উত্থান-পতন আছে। যেমন করে প্রকৃতিতে ঘটে ঋতুর পালাবদল। শীতের শেষে আসে বসন্ত। গরমের পর অঝোর ধারায় বর্ষা। তবে মনে রাখতে হবে কোনো পরিস্থিতিই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আল্লাহ বিপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। বিপদে ধৈর্য ধারণই মোমিনের বৈশিষ্ট্য। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এ তো কালের উত্থান-পতন। মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। আর এ অবস্থাটি তোমাদের ওপর এজন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে খাঁটি মোমিন কে?’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪০)

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কখনো ভয়ভীতি, কখনো ক্ষুধা-অনাহার কখনো বা জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতিসাধন করে। তোমাদের পরীক্ষা করা হবে। যারা ধৈর্যের সঙ্গে এর মোকাবিলা করে তুমি সেই ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দান কর।’ (আয়াত ১৫৫) সুখ-দুঃখ কষ্ট আপদ-বিপদ নিয়েই আমাদের মানবজীবন। প্রতিনিয়তই আমরা এর সম্মুখীন হই। আমরা চাই না দুঃখ-কষ্টে আপদ-বিপদে নিপতিত হই। আমরা সব সময় চাই সুখে ও আনন্দে দিন কাটাতে। ক্রীড়া-কৌতুক আর পার্থিব মোহের মধ্যে আমরা নিজেদের ব্যাপৃত রাখতে ভালোবাসি। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো, অথচ আখেরাত উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।; (সুরা আলা, আয়াত ১৬-১৭) আমাদের সবাইকে জীবনের বাস্তবতা মানতে হবে। বিপদাপদ দুঃখ-কষ্ট এ জীবনে থাকবেই। আর তা আমাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা বই কিছুই নয়। এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তারাই সফলকাম। তারাই প্রকৃত মোমিন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রসুলদেরও অনেক বিপদে নিপতিত করেছেন এবং তা থেকে উদ্ধারও করেছেন। রসুল (সা.)-কে তাঁর আপন চাচা আবু লাহাব ও মক্কার বড় বড় কাফের সর্দার যে পরিমাণ অপমানিত করেছে, কষ্ট দিয়েছে, মিথ্যা অপবাদ ও অমূলক রটনা রটিয়েছিল তা সবই ছিল ভিত্তিহীন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিবকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ‘এদের তৈরি করা কথা যেন তোমাকে মর্মাহত না করে, এদের প্রকাশ্য ও গোপন সব কথাই আমি জানি।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৭৬) জীবনে যত বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্টই আসুক না কেন, পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন আমাদের আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের সব ব্যাপারে অবগত ও ওয়াকিবহাল। তিনি সব জানেন ও দেখেন। মনে রাখতে হবে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে অনেক পরিণত ও শুভ। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা আমাদের কর্তব্য। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে কিংবা তোমাদের ওপর কোনো বিপর্যয়ই আসে না যা সৃষ্টির বহু আগেই বিস্তারিত বিবরণসহ একটি গ্রন্থে লেখা আছে। আর আল্লাহর জন্য এ কাজ অত্যন্ত সহজ।’ (সুরা আল হাদিদ, আয়াত ২২) সুতরাং আমাদের উচিত হবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। তাওয়াক্কুল অর্থ ভরসা করা। তাঁর সাহায্য আশা করা। তাঁর ওপর আস্থা রাখা। বিপদে বিচলিত না হওয়া। আমরা যখনই আল্লাহর ওপর ভরসা করতে পারব তখনই আমরা যত বালামুসিবত আমাদের ওপর আপতিত হোক না কেন আমরা কোনো অবস্থাতেই ঘাবড়ে যাব না। হা-হুতাশ করব না। কারণ আল্লাহ আমাদের সব বিষয়ে অবহিত। যত ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন, ভয়-ক্ষুধা, অনাহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসুক আমরা যেন ঘাবড়ে না যাই। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করি। ইনশা আল্লাহ তিনিই আমাদের সব দুর্ভোগ দূর করে দেবেন। জীবনে আমরা ফিরে পাব স্বস্তি। দুনিয়ার এ জীবন সাময়িক। এখানে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-গ্লানি আছে এবং থাকবে। কিন্তু এ জীবনে আমরা নেক আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে পরকালে রয়েছে স্বস্তি ও শান্তি। রয়েছে জান্নাত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এ জীবনে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর