মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চৈত্য

মোহাম্মদ সোহেল

 চৈত্য

চৈত্য বৌদ্ধ প্রার্থনালয়। যে প্রার্থনালয়ের অভ্যন্তরে স্তূপ সংস্থাপিত থাকে। সংস্কৃত চিতা শব্দটি থেকে চৈত্য শব্দের উৎপত্তি। কোনো মানুষের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার পর একটা নির্দিষ্ট স্থানে দেহভস্ম স্তূপ আকারে সংরক্ষণ করার স্থানকে চিতা বলা হয়। সাধারণত মৃতদেহ পোড়ানোর স্থানকেই চিতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কালক্রমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে মৃতের ভস্ম বা ছাই এবং মৃতের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ওপর নির্মিত ঢিবি চৈত্যের রূপ পরিগ্রহ করে এবং তা ভক্তি প্রদর্শনের পবিত্র স্থানে পরিণত হয়। ভক্তি প্রদর্শনের জন্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে চৈত্য এবং স্তূপ উভয়ই পবিত্র স্থান হিসেবে পরিগণিত। তবে বৌদ্ধস্তুপের প্রাথমিক স্তর হিসেবে চৈত্যকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। ভারতীয় স্থাপত্যকলার আধুনিক সংজ্ঞায় চৈত্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সভাগৃহ বা প্রার্থনাগৃহের সমার্থক বলে উপস্থাপিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চৈত্যকে ‘গৃহ’ বলা হয়েছে। স্থাপত্যিক নকশার ক্ষেত্রে চৈত্যগৃহে স্তম্ভ ও খিলান সংযুক্ত থাকে যা রোমান স্থাপত্যকলার সঙ্গে সদৃশ। প্রাথমিককালে বৌদ্ধভিক্ষুরা খালি হাতে হাতুড়ির সাহায্যে সম্পূর্ণ একটি অখন্ড পাহাড় বা পাথরখন্ড কেটে চৈত্যগৃহ বানাতেন। এ ধরনের চৈত্যগৃহকে ‘গুহামন্দির’ও বলা হতো। সমগ্র ভারতে এ ধরনের প্রায় ১২০০ চৈত্যগৃহ নির্মিত হয়েছিল। এর মধ্যে অজন্তা ও ইলোরার চৈত্যগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। চৈত্যের অভ্যন্তরেই স্তূপ সংস্থাপিত হতো। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে পাথর কেটে প্রাচীনতম চৈত্য নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায়। স্তূপের মতো চৈত্যও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র সত্তার প্রকৃতি ও জ্ঞানের প্রতীকী উপস্থাপনা। তাদের বিশ্বাসে চৈত্য হলো বিশ্বব্রহ্মান্ডের একটি ক্ষুদ্র সৃষ্টি এবং এর খিলানযুক্ত প্রবেশপথটি পৃথিবীতে প্রবেশ করার প্রতীকী পথ হিসেবে বিবেচিত। এ ধরনের গৃহ সাধারণত নদী বা খালের পাড়ে নির্মিত হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৩ শতকে ইটনির্মিত সর্ববৃহৎ চৈত্যগৃহটি বিশাখাপট্টমে খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় সর্বাধিকসংখ্যক চৈত্যের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। অজন্তা-ইলোরা, ভজ, বাগ প্রভৃতি স্থানে পাথর কেটে বানানো মনোরম বেশ কয়েকটি চৈত্যের অস্তিত্ব বিদ্যমান। মহারাষ্ট্রের অজন্তায় অবস্থিত ইট ও কাঠের তৈরি চৈত্যগুলো বৌদ্ধদের প্রাথমিক পর্যায়ের থেরবাদ শাখা কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। চৈত্যগুলো ৫ থেকে ৯ শতকের মধ্যে নির্মিত। প্রায় একই ধরনের চৈত্য সম্রাট অশোকের সময়ও নির্মিত হয়েছে।

               

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর