বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খোজা

খোজা

প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজকীয় হারেমে নিযুক্ত পুরুষ কর্মী ও কর্মকর্তা হলো খোজা। বিশেষ উদ্দেশ্যে পুরুষদের খোজা করার প্রথা খ্রিস্টপূর্ব ৮ শতকের গোড়ার দিকেও প্রচলিত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগে খোজারা রাজকীয় হারেমের ভৃত্য বা প্রহরী হিসেবে, খেতাবধারী বা বৃত্তিভোগী রানি এবং সরকারের যোদ্ধা ও মন্ত্রীদের পরামর্শদাতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এ প্রথা বা ব্যবস্থাটি ভারতে প্রবর্তিত হয় সম্ভবত সুলতানি আমলের গোড়ার দিকে। খোজাদের প্রধানত সুলতানদের প্রাসাদে হারেম প্রহরার জন্য নিযুক্ত করা হলেও চীনা খোজাদের মতো সুলতানি আমলের খোজারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, সুলতান আলাউদ্দিন খলজির (১২৯৬-১৩১৬) অন্যতম বিখ্যাত সেনাপতি ও উজির মালিক কাফুর ছিলেন একজন খোজা।

দিল্লির খোজাদের মতো বাংলার অভিজাতবর্গের খোজারাও প্রশাসনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। বাংলায় হাবশি শাসনামলে (১৪৮৭-১৪৯৩) বস্তুত শাসকদের ক্ষমতার উত্থান-পতনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শাহজাদা ওরফে বারবক নামে এক খোজা ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মসনদ দখল করেন। পণ্ডিতদের বিশ্বাস, হাবশি সুলতান শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ (১৪৯০-১৪৯৩) খোজা ছিলেন। সমসাময়িক বাংলায় পর্তুগিজ পরিব্রাজক দুয়ার্তে বারবোসার বিবরণ অনুসারে বাংলার শাসক ও অভিজাতবর্গের হারেমগুলোয় দেশি ও বিদেশি বংশো™ূ¢ত খোজারা প্রহরায় নিয়োজিত থাকত। কথিত আছে, নবাব শুজাউদ্দিন খানের (১৭১৭-১৭৩৯) হারেম প্রহরায় নিয়োজিত ছিল উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে সংগৃহীত খোজারা।

ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক নানা গবেষণা থেকে জানা যায়, বহুবিবাহ, উপপত্নী (বাঁদি) ও হারেম ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণে খোজাব্যবস্থারও উদ্ভব ঘটে। হারেমের নারীদের ওপর নজর রাখার জন্য খোজা পুরুষ প্রহরী নিয়োগ করা হতো। সাধারণত রণাঙ্গনে বন্দি তরুণ সৈনিকদের খোজা করা হতো। আর দাস ব্যবসায়ীরা সাধারণত দাসবাজার থেকে কেনা স্বাস্থ্যবান ও তরুণ বালকদের খোজা করে এবং প্রাথমিক ধরনের কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজকীয় ও অভিজাতবর্গের হারেমে বিক্রি করত। তুর্কি-মুগল শাসনামলের আগে বাংলায় খোজা প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে তেমন সন্তোষজনক প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে সংস্কৃত সূত্র থেকে প্রচুর সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বাংলা ও ভারতের প্রাচীন শাসকরা তাদের হারেম প্রহরার জন্য হিজড়াদের নিয়োগ করতেন, কখনো তারা খোজা করা কোনো পুরুষকে নিয়োগ করতেন না। কাজেই এটা স্পষ্ট যে, খোজা প্রথা এ দেশে প্রবর্তিত হয় বিদেশিদের দ্বারা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর