শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। তাঁর পিতা সৈয়দ সিকন্দর আলী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার।  চাকরি সূত্রে পিতার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের পর মুজতবা আলী শেষ পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বভারতীতে তিনি বহু ভাষা শেখার সুযোগ পান।

ভারতের অন্যত্র বিশ্বভারতীর ডিগ্রি স্বীকৃত না হওয়ায় মুজতবা আলী প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা (১৯২৬) পাস করে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আই এ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে ‘হুমবল্ট’ বৃত্তি নিয়ে তিনি জার্মানি গিয়ে বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি দর্শন বিভাগে তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করে ১৯৩২ সালে ডি ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৩৪-৩৫ সালে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। মুজতবা আলীর চাকরিজীবন শুরু হয় কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজে সাধারণ বিষয়ে অধ্যাপনা (১৯২৭-১৯২৯) দিয়ে। বরোদার মহারাজ সয়াজী রাও-এর আমন্ত্রণে ১৯৩৫ সালে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হন। তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবেও কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। পরে পেশার পরিবর্তন করে মুজতবা আলী ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের সচিব ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মকর্তা হন। সবশেষে তিনি বিশ্বভারতীর ইসলামের ইতিহাস বিভাগে রীডার (১৯৬১) হিসেবে যোগদান করে সেখান থেকেই ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালে হস্তলিখিত বিশ্বভারতী পত্রিকায় তাঁর কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি সত্যপীর, রায়পিথোরা, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ইত্যাদি ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ,  শনিবারের চিঠি, বসুমতী, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখতেন। এছাড়া  মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি,  কালান্তর, আল-ইসলাহ্  প্রভৃতি সাময়িক পত্রেরও তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। গ্রন্থাকারে তাঁর মোট ৩০টি  উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হয়েছে।

সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো : ভ্রমণকাহিনী দেশে-বিদেশে (১৯৪৯), জলে-ডাঙায় (১৯৬০); উপন্যাস অবিশ্বাস্য (১৯৫৪), শবনম (১৯৬০), শহ্র-ইয়ার (১৯৬৯); রম্যরচনা পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২), ময়ূরকণ্ঠী (১৯৫২) এবং ছোট গল্প চাচা-কাহিনী (১৯৫২), টুনি মেম (১৯৬৪)। সৈয়দ মুজতবা আলী দেশে-বিদেশে গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে প্রথম প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। গ্রন্থখানি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পাঠকচিত্ত জয় করতে সক্ষম হন। কাবুলে অবস্থানের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও  অন্তরঙ্গ উপলব্ধির ফসল এই গ্রন্থখানি। সামগ্রিকভাবে তিনি উভয় বঙ্গে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত লেখক ছিলেন। আন্তর্জাতিক চেতনায় সমৃদ্ধ এই লেখকের বিশ্বমানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং অননুকরণীয় রচনাশৈলী তাঁকে এই সম্মানের অধিকারী করেছে।  তদুপরি তিনি যে নৈপুণ্যের সঙ্গে বিদেশি চরিত্র ও আবহ বাংলা সাহিত্যে এনেছেন তাও তুলনাহীন। হালকা মেজাজে আড্ডার ঢঙে বলে গেলেও তাঁর অধিকাংশ রচনা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, শাস্ত্রচর্চা ও বিচার-সমালোচনায় পরিপূর্ণ।

সুদীপ্ত সুজন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর