শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের শত্রুমিত্র

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এ যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানকে কৌশলগত সমর্থন দেয়। পক্ষান্তরে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশ এবং জাপান ও পশ্চিমের অনেক দেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। চীন-যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অক্ষের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ভারত সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। এদিকে মুক্তিবাহিনীর সদর দফতরে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়। চিরাচরিত রণকৌশল পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করার পক্ষে অনুকূল হবে না ভেবে সারা দেশে সর্বাত্মক গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই মতে সেক্টর কমান্ডারদের দেশের অভ্যন্তর থেকে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা যৌথ বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। অবশ্য ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অমৃতসর, শ্রীনগর ও কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের পর থেকেই মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। তখনই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ওপর নির্দেশ আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রত্যাঘাত করার। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্রমে অগ্রসর হতে থাকে।  ফলে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজয় ও আত্মসমর্পণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।  বাংলাদেশ সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এতে ভেটো প্রয়োগ করায় এ প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়।

 

সর্বশেষ খবর