বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল

মাওলানা আবু তালহা তারীফ

শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল

শীত বেড়ে চলছে। শীত আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নিয়ামত। এ নিয়ামতকে কাজে লাগানোর অন্যতম একটি উপায় হলো নিজেকে আমলে বন্দি করা। শীতকালে ইবাদত করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ শরিফে শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল।’

শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় রোজা পালন করা খুবই সহজ। মাসে তিনটি, সপ্তাহে দুটি রোজাসহ ইচ্ছা হলেই রোজা রাখতে পারি। শীতকালে রোজা রাখার ব্যাপারে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শীতকালের রোজা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ।’ তিরমিজি।

আমরা জানি, শীতকালে রাত লম্বা হয়। ইচ্ছা করলেই পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সম্ভব। শীতকালে ঘুমের কোনো কমতি হবে না, অন্যদিকে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে। আমরা শীতের সময়ে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে রাতকে বিদায় দিতে পারি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজ আদায় করতেন, এমনকি তার পা ফুলে যেত। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনি এত কষ্ট করেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কী কৃতজ্ঞ বান্দা হব না।’ বুখারি।

শীতকাল কিছু ইবাদত পালন করা সহজ হলেও কিছু ইবাদতে কষ্ট হয়, যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দার কষ্টের বিনিময়ে নেকি বৃদ্ধি করে দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো শীতের সময়ে অজু করা। শীতের সময়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে অজু করা খুবই কষ্টকর, তবু অজু করার মাধ্যমে রয়েছে অধিক সওয়াব। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না; যার কারণে আল্লাহতায়ালা পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর রসুল! নবীজি বললেন, মন না চাইলেও ভালোভাবে অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। মুসলিম। শীতকাল ধনীদের জন্য আনন্দের হলেও বস্ত্রহীন অসহায়দের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। গরিব অসহায় পথশিশুরা গরমে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে পারলেও শীতে তা কঠিন। শীতে এ অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেক সম্পদশালী মুমিনের দায়িত্ব। আমরা নিজ পরিবারের জন্য যখন শীতের কাপড় কিনতে যাব তখনই তাদের জন্য একটি পোশাক ক্রয় করাটা খুবই সহজ। কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত গচ্ছিত পোশাক আলমারিতে জমা না করে অসহায়দের মাঝে বণ্টন করলে তাদের শীতের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। তা ছাড়া এটা খুবই সওয়াবের কাজ। আবু দাউদ শরিফের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ আমাদের মনে রাখা জরুরি, কারও দুঃখ-দুর্দশায় সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন’। আসুন আল্লাহর কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ আমাদের সুস্থ ও ভালো রাখুন। শীতের সময়সহ সর্বদা আমল করতে পারি সেই তৌফিক দান করুন। দুনিয়ায় শান্তি এবং পরকালে মুক্তি দিন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর