বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্রকারীদের পাকিস্তান হিজরত, চলছে টিকিট বিক্রি

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

ষড়যন্ত্রকারীদের পাকিস্তান হিজরত, চলছে টিকিট বিক্রি

পাকিস্তানে হিজরত করার জন্য আমাদের দেশে যারা টাকা-পয়সা অথবা স্বার্থের জন্য বুদ্ধিজীবী হন তাদের নেতৃত্বে জাহাজ প্রস্তুত হচ্ছে। এই হিজরতে কারা কারা অংশগ্রহণ করবেন তাদেরও খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে। কারণ, বিভিন্নভাবে অন্যের টাকায় প্রভাবিত হয়ে তারা গবেষণা করে বের করছেন যে, পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো। আসলে কতিপয় আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় সাব-এজেন্ট রাখে। কারণ তাদের দেশে এসব কাজ করার লোক থাকলেও তাতে খরচ অনেক বেশি হয়। পশ্চিমারা অনেক চতুর। তারা খরচ কমাতে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের সাব-এজেন্ট হিসেবে ভাড়া করেন। তাদের এই ভাড়া করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে যতটা সম্ভব ছোট করে দেখানো। যেহেতু আমরা সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন করেছি এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাঁর দর্শন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও তিনি সফল। শুধু পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল তৈরি নয়, তিনি তাঁর দর্শন দিয়ে আগামী ১০০ বছর কীভাবে দেশ চলবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। তিনি প্রথমে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশ কীভাবে চলবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেন এবং ২০৪১ সালে দেশ কোন জায়গায় যাবে তার একটি রূপরেখাও তিনি দিয়েছেন। তিনি শুধু বলেনই না। যা বলেন সেটি কিন্তু করেও দেখান। তারপরও যারা পাকিস্তানপ্রেমী তাদের রাতে ঘুম হচ্ছে না। তারা এখন জাহাজ তৈরি করেছেন এবং এই জাহাজে তারা হিজরত করবেন। তথাকথিত পশ্চিমারা হিজরতকারীদের যতই সমর্থন দিক তাতে কোনো কাজ হবে না। কারণ আসল সমর্থন হচ্ছে জনগণ। দার্শনিক শেখ হাসিনাকে এ দেশের জনগণ ভালোবাসে। প্রান্তিক জনগণের কাছে আস্থা এবং ভরসার আরেক নাম তিনি। এখানে ইচ্ছা করলেই কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তাদের কিন্তু বুদ্ধি আছে এটা মানতে হবে। তবে বুদ্ধি কিন্তু শয়তানেরও ছিল, তাই তো শয়তান বলেছিল মাটির তৈরি মানুষের কাছে আমি কেন মাথা নত করব? এই বুদ্ধির জন্যই তারা পাকিস্তানে হিজরত করার নিয়ত করেছে। হিজরত করতে গিয়ে তারা ইসলাম সম্বন্ধে বলবে, বিভিন্ন কিছু সম্পর্কে বলবে। একবার তো তওবা সম্পাদক নামও পেয়েছিল একজন। তারা সবই পারে। তাদের থেকে এসব মিথ্যাচার সবদিকে ছড়াবে। বাংলার ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো মানুষের মধ্যে তাদের রক্তের বীজ কিন্তু থেকে যাবে। তাই আমার ভয় হয় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার একটি বিরাট সুযোগ হচ্ছে আগত নির্বাচন। আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবাই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে, তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবশ্যই পার্লামেন্টে পাঠাতে হবে। যতই বলি না কেন, আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমরা তো হিজরত করতে পারব না। আমাদের রক্ত তো পরিবর্তন করতে পারব না। সে কারণেই আমাদের আগে যতটুকু প্রয়োজন ছিল এখন শেখ হাসিনাকে তার থেকে বেশি প্রয়োজন। এই হিজরতকারীরা আসলে নমরুদের বংশধর। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে ব্যবসার জন্য। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য। তারা ধার্মিক নয়। তাদের কোনো কাজই ধর্মের জন্য নয়। এরা সারা জীবন অসৎ পথে চলে এবং ধর্মের নামে লোকজনকে ধোঁকা দেয়। ওরা সব সময় শর্টকাট পথ খোঁজে। শর্টকাট পথ বলতে কিছু নাই। পথ খুবই কঠিন। এ দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য যে পথ, সে পথও কিন্তু খুব কঠিন। অনেকে আমরা নিজেদের দাবি করি যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, আমরা এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষেই রাখব। কিন্তু মুখে বললেই দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। একজন রাজাকার আলবদর মৃত্যু পর্যন্ত রাজাকার আলবদরই থাকে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের সম্বন্ধে আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু তাদের লেখাগুলো পড়লে বুঝবেন, তারা বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে কী লিখেছেন। আগে তারা নেত্রী সম্পর্কে তার পক্ষে কিছু লিখলেই শেষে এসে একটি ‘তবে’ যোগ করে দিত। এর পরই শুরু হতো তার বিরুদ্ধে লিখা। এখন এই ‘তবে’ অনেকটা কমেছে। এখন সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধটা হলো, যেহেতু তারা হিজরত করে পাকিস্তানে চলে যাবে, সুতরাং তাদের হারাবার কিছু নেই। তারা যে কদিন আছে দেশটাকে যতটুকু সম্ভব ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। এর জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছে। আর ওই দিকে লন্ডনে বসে অজস্র টাকা-পয়সা খরচ করা হচ্ছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে এখন শুধু মিথ্যাচার ছড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ফেসবুককে বলা যায় গুজবের হেডকোয়ার্টার। ফেসবুকের মাধ্যমে যত সহজে গুজব ছড়ানো যায় অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে এত সহজে ছড়ানো যায় না। অর্থাৎ আমরা যে গুজবের দেশ এবং বাঙালিরা যে গুজবে বিশ্বাস করে এটা তো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের নিশ্চয়ই অনেক গুণ আছে। কিন্তু সব বাঙালি সমান নয়। আমরা ভাগ্যবান যে, বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছি। আমরা ভাগ্যবান যে দার্শনিক শেখ হাসিনার সহকর্মী হিসেবে কাজ করছি। আমরা ভাগ্যবান যে, এখনো দার্শনিক শেখ হাসিনার সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ পাই। এ সৌভাগ্য অনেকের হয়নি। হয়তো কখনো হবেও না। দেশের বিরুদ্ধে এখন বিভিন্নভাবে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একদিকে তারা অপরাজনীতি দিয়ে দেশটাকে শেষ করতে চাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য এবং উন্নয়নের জন্য যে সুনাম তা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। তাদের সব ষড়যন্ত্র যখন বিফলে যাচ্ছে তখনই তারা পাকিস্তানে হিজরত করার জন্য মনঃস্থির করেছে। আমার মনে হয় না পাকিস্তানে হিজরত করা থেকে তাদের ঠেকানো যাবে। পাকিস্তানে তারা যাবেই। কারণ তাদের রক্তের ভিতর পাকিস্তান। তারা এখন একতাবদ্ধ হচ্ছে পাকিস্তানের পক্ষে। তাই আমাদের জন্য এখন এটি একটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং সময়।

এ চ্যালেঞ্জ ঠেকাতে হলে, দেশের বিরুদ্ধে তাদের যে ষড়যন্ত্র তা প্রতিহত করতে হবে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। এ ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা একা প্রতিহত করতে পারবেন এটা ভাবা ঠিক হবে না। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, তেমনি দার্শনিক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের আবার এক হতে হবে। তাহলেই সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশকে সঠিক পথে রাখা সম্ভব। এটি আমাদের মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কথা এবং কাজে এর প্রতিফলন থাকতে হবে। আমরা যাতে ভুল কথা বলি, ভুল বক্তব্য দেই তার জন্য অপশক্তিরা আমাদের উসকানি দেবেই। বিভিন্নভাবে তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমাদের সেই ফাঁদে পা দিলে চলবে না।

সামনে কঠিন পথ। বঙ্গবন্ধুও অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবেই তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তিনিও সহজ পথ পাননি। তাঁকে একের পর এক সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে এবং এখনো তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এটাই একজন দার্শনিকের আসল ত্যাগ। ত্যাগ করা ছাড়া কোনো কিছু আসে না। দার্শনিক শেখ হাসিনা এটা ঠিকই জানেন। ষড়যন্ত্রকারীরা এক মুহূর্ত শেখ হাসিনাকে স্বস্তি দিতে চান না, এক মুহূর্ত তাকে ঘুমাতে দিতে চান না। তারা হয়তো ভাবে একের পর এক চক্রান্ত করে শেখ হাসিনাকে বিভ্রান্ত করা যাবে। কিন্তু তারা জানেন না যে, দার্শনিকরা সব কথায় প্রতিক্রিয়া দেখান না। তারা কেবল হৃদয় নয়, হৃদয়ের সঙ্গে তাদের মস্তিষ্কও চলে। দার্শনিক শেখ হাসিনার হৃদয় এবং মস্তিষ্ক দুটোই সমানভাবে সক্রিয়। তিনি যেমন বিধবা, বয়স্কদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের জন্মও হয়তো তিনি দেখে যেতে পারবেন না। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী করতে, দেশের জনগণ কীভাবে সুখে-শান্তিতে থাকবে, বাংলাদেশে কোনো হানাহানি থাকবে না এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে দূরে থাকবে, সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই তাঁর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অনেক বেশি। সব চাপ সামলে নিয়ে তিনি তাঁর লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই নীতিতেই তিনি দেশ পরিচালনা করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। দার্শনিক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেখিয়েছে। সবই সম্ভব, শুধু সম্ভব নয় ষড়যন্ত্রকারীদের পাকিস্তানে হিজরত করা ঠেকানো। হিজরত যখন তারা করবেই, করুক। কিন্তু এ দেশের সোনার মানুষেরা এই সোনার বাংলাতেই থাকবে। তারা অপশক্তির কাছে মাথানত করেনি এবং করবেও না। আর সে কারণে দার্শনিক শেখ হাসিনাকেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে হবে।

                লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি

                ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর