রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোজার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে

মুহাম্মদ নওয়াব আলী ভুইয়া

আসমান ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু বিরাজমান সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টি, যা মানুষের জন্য বড় নিয়ামত। আর আল্লাহর দ্বারা বিশেষভাবে সৃষ্টি করা হলে তার গুরুত্ব বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে সৃষ্টির সেরা মানুষের জন্য আল্লাহপাক যে রোজা সৃষ্টি করেছেন তা অবশ্যই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত। সে জন্য রোজার প্রতিদানও অতিশয় মূল্যবান। মহান দয়াময় আল্লাহ তাঁর শান অনুযায়ী রোজাদার বান্দাকে নিজ হাতে আখেরাতে প্রদান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম এবং আল্লাহপাক বলেন, বান্দা আমার জন্য সাওম পালন করেছে, আমি নিজ হাতে তার প্রতিদান  দেব (বোখারি হাদিস নম্বর-১৮৯৪)। খোদায়ী মহামূল্যবান সম্পদ পেয়ে সে সময়টা রোজাদারদের জন্য খুবই আনন্দের হবে। কেননা যেদিন আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া সবাই ভীষণ ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে নাফসি-নাফসি করবেন সে সময় মহাখুশিতে সবকিছুর মালিক আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজাদাররা রোজার পুরস্কার নিয়ে একমাত্র রোজাদারদের জন্য নির্ধারিত রাইয়্যান নামক ভিআইপি দরজা দিয়ে বেহেশতে চলে যাবেন। রোজাদাররা বেহেশতে ঢোকার পর ওই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। (বোখারি-হাদিস নম্বর-১৮৯৬)। তা ছাড়া রমজানে শবেকদর নামে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, যা রমজানের গুরুত্ব বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা এই এক রাতের ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর গুনাহগার বান্দাকে সারা জীবনের সব পাপ মাফ করে নেওয়ার সুযোগ প্রদান করেছেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করেছি, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার (সুরা বাকারা, ১৮৩)’। ইমানদারদের জন্য তাকওয়া অর্জন করা অর্থাৎ মুত্তাকি হওয়া সবচেয়ে মূল্যবান কাজ। কেননা উম্মতে মুহাম্মদির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী মোজেজা আল কোরআনকে মুত্তাকিদের হেদায়েতের জন্য নাজিল করা হয়েছে বলে পাক কালামের শুরুতেই ইরশাদ করা হয়েছে- ‘১. আলিফ লা-ম মি-ম। ২. এই সেই মহাগ্রন্থ যাতে কোনোই সন্দেহ নেই, পথপ্রদর্শনকারী মুত্তাকিদের জন্য (সুরা আল বাকারা)’। যে কোরআন মানুষকে জাহান্নামের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং জান্নাতে পৌঁছানোর পথ দেখায়, এ মহামূল্যবান কিতাব থেকে কিছু নেওয়ার জন্য মুত্তাকি হওয়াকে প্রথম ও প্রধান শর্ত দেওয়া হয়েছে। আর রোজা দেওয়া হয়েছে মুত্তাকি হওয়ার শর্তে। সে জন্য যাদের রোজার মর্যাদা বোঝার তৌফিক দেওয়া হয়েছে তারা সারা জীবন রোজা রেখেছেন। পুরোপুরি মুত্তাকি হয়ে কোরআনের মর্মবাণী জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে শক্তভাবে ধারণ করেছেন। একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে সব কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত থেকেছেন। আর তারাই ইহকালে সফলতা অর্জন করেছেন এবং পরকালের সুসংবাদ পেয়েছেন (সুরা হা-মিম সেজদা, ৩০-৩২)। যেমনটা ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা (রহ.) একাধারে ৩০ বছর রোজা রেখে চরম বিপদেও একমাত্র আল্লাহকেই খুশি রাখার তৌফিক পেয়েছিলেন। যেসব বান্দা মনিবের প্রিয় হতে চান তারা মনিবের নির্দেশ পালনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সে জন্য দেখা যায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসে তিন দিন এবং সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রেখেছেন। তাঁর অনুকরণে বহু আল্লাহপ্রেমিক তদ্রƒপ প্রতি সপ্তাহে রোজা রাখতে চেষ্টা করে থাকেন। আমার মতো প্রতিটা দুর্বল ইমানদার আল্লাহর প্রিয়জন হতে খুবই আগ্রহী হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের বড় শত্রু শয়তানের প্ররোচনায় অনেক সময় আমরা অনেকেই ঠিকমতো ইবাদত করে আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে পারি না। সে জন্য হাদিসপাকে রোজাকে ঢালস্বরূপ বলা হয়েছে। তাই শয়তানের ধোঁকাবাজ থেকে বাঁচার জন্যও আমাদের সব সময় রোজা রাখা দরকার। কেননা দেখা যায় রোজা আমাদের মুত্তাকি বানিয়ে একদিকে আল্লাহর পথে চলতে সাহায্য করে, অন্যদিকে শয়তানের মারাত্মক বিপথগামী করা থেকেও রক্ষা করে- যা মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কয়েক দিন পর মোবারক মাহে রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। রমজান শেষে আমরা অনেকে শাওয়ালের ছয় রোজা রেখে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব হাসিল করব। অনেকের রসুল (সা.) এর সুন্নত তরিকানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে রোজা রাখার নিয়ত রয়েছে। অন্যদিকে আমরা যেখানে আল্লাহর খাস মেহেরবানিতে অতীতে এক মাস রোজা রাখতে পেরেছি, এখনো পারব, সেখানে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে সোমবার বা বৃহস্পতিবারে একটি রোজা অবশ্যই রাখতে পারব, ইনশাআল্লাহ। তদ্রƒপ রমজানের সাহরি খেতে ভোর রাতে ওঠার যে অভ্যাস ছিল এবং থাকবে, তা ঠিক রেখে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারলে আল্লাহ মেহেরবান খুশি হয়ে দুনিয়ায় ও আখেরাতে অনেক মূল্যবান নাজ-নিয়ামত দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন (সুরা বনি ইসরাইল, আ. ৭৯)। এমনিভাবে রোজার ক্লান্তি উপেক্ষা করে প্রতি রাতে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ব। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। এ অভ্যাসের বদৌলতে দিনে ও রাতে আমরা চেষ্টা করলে ২০ রাকাত নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস রপ্ত করে নিতে পারি। নামাজের অসংখ্য উপকারের মধ্যে যে রিজিক সংগ্রহের জন্য আমাদের পেরেশানির শেষ নেই সে বিষয়ে রিজিকদাতা বলেন, ‘হে নবী, আপনি আহালদের (আত্মীয়-স্বজনদের) নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিতে থাকুন এবং নিজেও নামাজের পাবন্দি করুন। আপনার কাছে আমি রিজিক চাই না, রিজিক তো আমি আপনাকে দান করি। তাকওয়ার পরিণামই শুভ হয়ে থাকে। (সুরা তা-হা. ১৩২)’।

লেখক : সভাপতি, মসজিদ সমাজ বাংলাদেশ এবং প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক (সাবেক), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লি.

সর্বশেষ খবর