শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদ-নদী দূষণ

সর্বনাশা পথ থেকে সরতে হবে

দেশের নদ-নদীগুলো ভয়াবহ দূষণে স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। নদী তীরে গেলে মানুষের মন যেখানে প্রফুল্ল হয়ে ওঠার কথা, সেখানে পানির দুর্গন্ধে বমি আসার মতো অবস্থারও উদ্রেক হয়। দেশের ৫৬ নদ-নদীর পানি পরীক্ষায় সবকটিতেই মিলেছে অতিমাত্রায় দূষণ। এর মধ্যে জলজপ্রাণী বেঁচে থাকার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই ২৬টিতে। নদীদূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও জনজীবনে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মাছ ও জলজপ্রাণী। দূষণের বিষ খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করছে। কিডনি বিকল, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নদ-নদী দূষণের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৬টি নদ-নদীর পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ৫৬টির মধ্যে ২৬টির পানিতে জলজপ্রাণীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রবীভূত অক্সিজেন নেই। ৫৬ নদ-নদীতেই বিপজ্জনক মাত্রায় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণ রয়েছে। আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ মিলিগ্রামের নিচে নামলেই মাছসহ জলজপ্রাণীর শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। অথচ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, লবন্দহ, লোয়ার বানার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, তিতাস, চিলাই, সুতাং, বংশী, হাঁড়িধোয়া, কর্ণতলী নদ-নদীর পানিতে অক্সিজেন রয়েছে ২ মিলিগ্রামেরও কম।  পাঁচটি নদ-নদীতে রয়েছে ১ মিলিগ্রামের কম। এসব নদ-নদীর পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য দায়ী যেসব দূষণ উপাদান তা সহনশীল মাত্রার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস। বলা যায়, এ নদ-নদীগুলো দেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ।  কিন্তু আমাদের দায়-দায়িত্বহীনতায় নদ-নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জাগবে আমরা তেমনটিই আশা করতে চাই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর