শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাস্তে-কোদালের আন্দোলন কাহন

মেজর আখতার (অব.)

কাস্তে-কোদালের আন্দোলন কাহন

সাধারণ জনগণ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়া কোনো আন্দোলনের পক্ষে নয়। আন্দোলন মানে নড়াচড়া তথা সবকিছু নিজেদের অনুকূল পরিবেশে নিয়ে আসতে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়া। তাই যে কোনো আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ হবেই। এমন কী যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও করা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু অশান্তি প্রতিহত করতেও যথোপযুক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। পরস্পরবিরোধী শক্তিপ্রয়োগ মানে বিপরীতমুখী ঘর্ষণ যা অবশ্যই উত্তাপ সৃষ্টি করবে। ঘর্ষণের মধ্য দিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি হলে সেখানে অবশ্যই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হতে পারে যা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই ধ্বংস উভয়েরই হবে; তবে বেশি হবে দুর্বলের। আন্দোলনে দুর্বল শুধু হারবে না- সে নিজেই সেই আন্দোলনে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আন্দোলনের পূর্বশর্তই হলো- যে আন্দোলন শুরু করবে তাকে তার প্রতিপক্ষ থেকে শক্তিশালী বা সবল হতে হবে। আন্দোলন করতে হলে শক্তির ভারসাম্য কখনই সমান হতে পারবে না। সমানে সমানে কখনই পরিবর্তন হয় না। তখন স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমেই শক্তির ভারসাম্য ভাঙতে হবে। শক্তির সেই ভারসাম্য ভাঙতে পারলেই শক্তির পক্ষে তখন পরিবর্তন আসবে। বর্তমান রাজনীতিতে শক্তির যে বিন্যাস তা ভারসাম্যপূর্ণ নয়। এখানে এক পক্ষ প্রবল পরাক্রমশালী এবং অন্য পক্ষ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি দুর্বল। সরকার বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শক্তিধর। পক্ষান্তরে সরকারবিরোধীরা লক্ষণীয়ভাবেই দুর্বল। এখন আন্দোলন করে পরিবর্তন আনতে হলে সবার আগে শক্তির অবস্থানে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকার থেকে শক্তিশালী না হয়ে যে কোনো ধরনের আন্দোলনে যাওয়া হবে চরম হঠকারিতা ও জেনেশুনে আত্মহত্যার পথে এগিয়ে যাওয়া!

যে কোনো কারণে বর্তমান সরকারের জনসমর্থন অনেক কম। তাদের দলীয় সমর্থক ছাড়া জনসমর্থন বলতে গেলে প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু তারপরও এ সরকার টিকে আছে মূলত তাদের দলীয় শক্তি বাকি সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত শক্তির চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে। বর্তমান সরকারের পরিবর্তনের জন্য যারা আন্দোলন করছে তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি যেমন দুর্বল, তেমনি তাদের জনসম্পৃক্ততাও অনেক কম। কোনো জেলা বা উপজেলায় সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির কোনো প্রবলতা লক্ষ্য করা যায় না। সবখানেই সরকারবিরোধীরা সরকারি দলের বিপক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছে না। এর প্রধান প্রধান কারণ হলো সাংগঠনিক দুর্বলতা, সঠিক নেতৃত্বের অভাব, আদর্শহীন রাজনীতি, ব্যক্তিতোষণ, এককেন্দ্রিক নেতৃত্ব, শীর্ষনেতার তথাকথিত নিজস্ব নেতা-কর্মী বা তোষামোদি অনুগামী তৈরি করার ব্যর্থ প্রয়াস, দলের বিভিন্ন স্তর ও বিন্যাসে শক্তিশালী নেতৃত্বের বলয় সৃষ্টি করার চরম প্রতিকূল অন্তরায়, দলের আদর্শের চেয়ে ব্যক্তির প্রতি আনুগত্য, সংগঠন তৈরিতে অর্থের প্রাধান্য এবং সর্বোপরি যে কোনো উপায়ে দলের পদ অর্জন বা ধরে রাখার নৈতিকতা বিবর্জিত প্রচেষ্টা। এসব কারণে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নেতা-কর্মীরা দলীয় রাজনীতিতে তাদের শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে না। যার ফলে সরকার বিরোধীদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অজনপ্রিয় সরকারকে পরিবর্তন করতে পারছে না। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও তাবৎ আমলা ও ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছে না এবং তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ও ভবিষ্যতের নির্ঝঞ্জাট জীবনের স্বার্থে তারাও সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে যা সরকারকে অতিরিক্ত শক্তি জোগাচ্ছে। সরকারবিরোধীরা সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি না করার ব্যর্থতার জন্য দলনিরপেক্ষ মানুষগুলো পরিবর্তিত কোনো অবস্থান নিতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

দেশে এখন রাজনৈতিক বন্ধ্যত্ব চলছে। সবাই সরকারের মুখরোচক ও তেজোদীপ্ত সমালোচনা করতে খুবই উৎসাহী; কিন্তু সরকারের বিপক্ষে দাঁড়ানোর মতো হিম্মতওয়ালা কোনো নেতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মামলার কথা শুনলেই পাতলুন নষ্ট করে ফেলেন। আবার এক ধরনের হাইব্রিড নেতা আছেন, যারা বিদেশে বসে সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করেন; কিন্তু দেশে আসার হিম্মত দেখাতে পারেন না। অনেক নেতা সাত দিন জেলে থাকলেই তাদের পরিবারের লোকেরা উকিল-ব্যারিস্টারের বাড়ি ছাড়েন না। রাজনীতি এখন দুষ্টচক্রের বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ যেখানে প্রায় সবাই নিজেদের পদ-পদবির জন্য লেজুড়বৃত্তিতে মত্ত। এ অবস্থাকে আরও ভঙ্গুর করেছে কমিটি বাণিজ্য ও ‘সুপার ফাইভ’ নামক সাংগঠনিক কাঠামো। বড় বিরোধী দলটিতে সাংগঠনিক কমিটিগুলো কখনই পূর্ণতা লাভ করে না। সংগঠনের প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে ‘সুপার ফাইভ’ নামক একটি অদ্ভুত কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই সুপার ফাইভ দিয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনা করা হয়। যার ফলে দল একটি ছোট কোটারিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই তথাকথিত সুপার ফাইভ আবার সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে গায়েবিভাবে নির্বাচিত হয়। এই সুপার ফাইভদের প্রতি দলের সাধারণ নেতা-কর্মীর কোনো আনুগত্য ও আস্থা নেই। কিন্তু যেহেতু গায়েবিভাবে তারা দলের নেতৃত্বের ক্ষমতা কুক্ষীগত করেছে তাই প্রকাশ্যে সাধারণত কেউ তাদের বিরোধিতা করে না। কিন্তু বাস্তবে তাদের কেউ মান্য করে না। সুপার ফাইভ কাঠামোর কারণে দলের নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়ে যাচ্ছে। দলে এখন বেশির ভাগ নেতা-কর্মী নিজের থেকে উৎসাহ নিয়ে কোনো কর্মসূচিতেই অংশগ্রহণ করে না। শুধু দলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মমাফিক অনেকটা লোক-দেখানো দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। যার ফলে দলের কোনো কর্মসূচিই আধা ঘণ্টার বেশি মাঠে টিকে থাকতে পারছে না। তার ওপর পুলিশের হালকা ধাওয়া পেলেই ধাওয়ার সেলফি তুলে তা নেতাদের ইন্টারনেটে পাঠিয়ে আন্দোলনে থাকার প্রমাণ রেখে সবাই আন্দোলন ফেলে নিরাপদে বাড়ি চলে যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সুপার ফাইভের প্রায় নেতার যেভাবে কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা হয়, সেভাবে পুলিশের স্থানীয় ওসির সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা সব ঘোষিত আন্দোলনের সেলফি তোলার সুযোগ দেওয়ার জন্য মোটামুটি অর্ধ ঘণ্টা আন্দোলনের নাটক করতে দেওয়ার জন্য একইভাবে ওসির কাছে নগদ ভেট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুষ্টেরা বলে যেভাবে তারা সুপার ফাইভের নেতা হয় সেভাবেই তারা আন্দোলনও করে। এটি এখন সারা দেশে খোলাখুলি প্রচারিত সত্য যে, দলে যে কোনো পর্যায়ের তথাকথিত সুপার ফাইভের সদস্য হতে হলে নগদ ভেট যেমন চরম বাস্তবতা তেমনি সেলফির আন্দোলনের জন্য স্থানীয় ওসির দরবারে নগদ ভেটও একই রকম বাস্তবতা। সবাই জানে, ওসিকে ভেট না দিলে যেমন কেউ রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না, তেমনি নেতাদের ভেট না দিলে তথাকথিত সুপার ফাইভে স্থান পাওয়া যাবে না। আজকে চরম বাস্তবতা হলো এই তথাকথিত ‘সুপার ফাইভ’ দিয়ে যেমন দল শক্তিশালী হবে না, তেমনি সুপার ফাইভদের দিয়ে কোনো সফল আন্দোলনও হবে না।

রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে টাকা লাগবে। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগবে যা চরমে বাস্তবতা। কিন্তু সে টাকা দলের নেতা-কর্মীরা দেবে না। টাকা ভূতে জোগাবে! টাকা কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে বা কোথা থেকে এসেছে তা শুধু শীর্ষনেতা বা ওনার মনোনীত দু-একজন জানবে। বেশি নেতা জানলে কলঙ্ক হবে! সফল আন্দোলন করতে হলে এই দুষ্টচক্র থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। এ জন্য দলের প্রকাশ্য সম্মেলন করে কোনো প্রকার ঊর্ধ্বচাপের ভ্রুক্ষেপ না করে সম্মেলনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ঘোষণা দিয়ে আসতে হবে। যেই নেতারা কাজটি সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে না, তাদের দলের সাংগঠনিক কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। এই প্রকাশ্য সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতে যারা নেতা নির্বাচিত হবেন, তারা অবশ্যই আন্দোলনে-নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে। তাদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা থাকবে যারা পাশে থেকে সব কাজে সহযোগিতা করবে। তখন সেলফি তুলে আন্দোলন-নির্বাচনের খবর ওপরের নেতাদের জানাতে হবে না। ঘটনাই তাদের খবর যথাস্থানে পৌঁছে দেবে।

একইভাবে সফল ও কার্যকরি আন্দোলন করতে হলে পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সহানুভূতি ও সক্রিয় সহযোগিতা লাগবে। ওদের পরোক্ষ সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া আন্দোলন বা নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকা যাবে না। তবে সেই সাহায্য বা সহযোগিতা এসপি, ডিসি বা ওসিরা দিতে পারবে না এবং তাদের কাছ থেকে কখনই তা পাওয়াও যাবে না। এই জন্য তাদের অফিস ও থানার সঙ্গে একটি কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দীর্ঘমেয়াদে ফল পাওয়া যাবে। ওসি, ডিসি, এসপি জনগণ নয়। কিন্তু তাদের অধস্তনরা সবাই জনগণ। তারা সবাই সরকারি চাকরি করে; কিন্তু সবাই সরকারি দল করে না। কেউ না কেউ অন্তরে ভিন্নমত পোষণ করেন। সময় ও সুযোগে তারা অবশ্যই তাদের আপনজনদের সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। ওসি, ডিসি, এসপিরা কখনই সরকারের বাইরে যেতে পারবে না। কাজেই তাদের ভেট দিয়ে চূড়ান্ত কোনো ফায়দা হবে না। তারা দিনের শেষে সরকারের কাজই করবে। আন্দোলন-নির্বাচনে সফল হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। যেখানেই জনগণ আছে সেখানেই বার্তা নিয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা না পাওয়া যাবে ততক্ষণ আন্দোলনেও সফলতা আসবে না; তেমনি সফলতা নির্বাচনেও আসবে না। তাই অনেকটা খোলামেলাভাবেই বলা যায়, জনগণ এখনো আন্দোলনের মেজাজে নেই। তাদের কাছে বিরোধী দল তাদের বার্তা সঠিকভাবে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। জনগণ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। অথচ যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের অবস্থান স্পষ্ট না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ আন্দোলন, সংগ্রাম বা নির্বাচনে আসবে না। তাই আন্দোলন, সংগ্রাম তথা চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে সফল হতে হলে ওসি, ডিসি, এসপিদের কাছে ধরনা না দিয়ে বা তাদের হুমকি, ধমকি ও চালাকিতে ধরা না দিয়ে বিরোধী দলের উচিত হবে থানা, উপজেলা, জেলা এমনকি কেন্দ্র পর্যায়ে সব অফিস আদালতসহ যেখানেই জনগণ আছে সেখানেই বার্তা নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এর আগে শক্তি সঞ্চয় করে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। শক্তির পক্ষে সবাই থাকবে।

পরিশেষে আমার বিরোধী দলের বন্ধুদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হওয়ার শক্তি সঞ্চয় করার সময় এখন আর নেই। আমরা সেই ট্রেন মিস করে ফেলেছি! এখন আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত করা মানেই নিজেদের শক্তি আরও অযথা ক্ষয় করে নির্বাচনের সুযোগটিও হাতছাড়া করা। সফল আন্দোলন করতে হলে এখন লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। কিন্তু আমাদের তো লগি-বৈঠা নেই। আমাদের আছে খাল কাটার কোদাল আর ধান কাটার কাস্তে। কিন্তু কোদাল নিয়ে খাল কাটতে বা কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে জনগণের কাছে আহ্বান জানালে সেই আহ্বানে জনগণের কতটুকু সাড়া পাওয়া যাবে তা নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কি না, তা প্রকাশিত নয়। যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রতিটি উপজেলায় খাল কাটা, ধান কাটার কর্মসূচি দিয়ে কর্মসূচি শেষে উপজেলা সদরে জনসভা বা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে দেখা যেতে পারে জনগণের মনের অবস্থা। তবে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সময়ও চলে গেছে। এই মৌসুমে ধান কাটা প্রায় শেষ, বর্ষা সমাগত তাই খাল কাটারও সময় নেই। অতএব আন্দোলনের পোকা মাথা থেকে সরিয়ে আর কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনের পক্ষে মাঠে নেমে পড়া হয়তো ভালো সিদ্ধান্ত হবে। আর যদি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে বিবেচিত হয়, তাহলে আপাতত দলকে ঘরে নিয়ে এসে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করা হতে পারে বিকল্প ভালো সিদ্ধান্ত।

সরকার যে কোনোভাবেই নির্বাচন করাবেই এবং সেই নির্বাচন ঠেকানোর মতো রাজনৈতিক শক্তির অভাব রয়েছে। কাজেই নির্বাচন ঠেকানোর প্রচেষ্টাও হবে আরেক বোকামি। তার চেয়ে নির্বাচন বয়কটের কথা না বলে নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করতে পারলে সরকার যেমন আরও বেশি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, তেমনি জনগণ তাদের মনমতো ভোট দিতে না পারার জন্য জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে। জনরোষ সৃষ্টি হলে ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর জনগণকে সরকার অমান্যের তীব্র গণআন্দোলন গড়ে ওঠার মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হতে পারে। তাই অনেকের মতামত হলো সরকারকে একলা চলার পথে নামিয়ে দিয়ে আগামীতে ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনে যেতে সরকারকে বাধ্য করতে পারলে সেই ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরে চূড়ান্ত একটি আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বিরোধী দলকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পরিশেষে অনেকের সঙ্গে একমত হয়ে আবারও বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আন্দোলনের সময় চলে গেছে, আন্দোলন করে সময় নষ্ট হবে মাত্র। নির্বাচনে যাওয়ারও সময় চলে যাচ্ছে তবে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে পারলে হয়তো নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আর কিছু না হোক অন্তত দলের তহবিল সংগ্রহের একটি সুযোগ তৈরি হবে-যা হয়তো দলেরই কাজে লাগবে। আমরা সবাই জানি অর্থ ছাড়া রাজনীতি হয় না। কাজেই দলের জন্য অর্থ সংগ্রহও একটি রাজনীতি।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর