শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল

মো. আমিনুল ইসলাম

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল

মানুষের জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময় হলো যৌবনকাল। মানুষ সব কাজ এ সময়ে দৃঢ়তার সঙ্গে করতে পারে। মানুষের জীবনে এই সময়ে শক্তি ও সুস্থতা দুটিই থাকে। এই সময় একজন মানুষ যত দৃঢ়ভাবে আমল ও ইবাদত করতে পারে বৃদ্ধ বয়সে এসে তা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই মূল্যবান সময় কোনোভাবেই হেলাফেলা করে কাটানো উচিত নয়। যে ব্যক্তি যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকবে কিয়ামতের কঠিন দিনে তিনি আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় পাবেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন, কেয়ামতের সেই কঠিন দিনে আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া সেদিন কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন ওই যুবককে, আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেওয়া হবে যে যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদতে ও আনুগত্যে যৌবন অতিবাহিত করেছিল’ (বুখারি ৬৬০, মুসলিম ১০৩১) সুবহানাল্লাহ।

ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহতায়ালা সব নবীকে যৌবনকালে নবুয়ত দান করেছেন, যৌবনকালেই আলেমদের ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়।’ মুসা (আ.) যখন যৌবনে পদার্পণ করলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো এবং শারীরিক শক্তিতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হলো তখন আমি তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করলাম। আর আমি নেক্কার লোকদের এভাবেই প্রতিফল দান করি’ (সুরা কাসাস-১৪)।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হলো যৌবনকাল। যুগে যুগে যুবকরাই সব অন্যায় ও পাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেছে। তেমনি যুবক ইবরাহিম (আ.) মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা ভেঙে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘লোকেরা বলল আমরা শুনেছি এক যুবক ওদের কথা আলোচনা করছিল, হ্যাঁ সে যুবককে বলা হয় ইবরাহিম’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৬০)।

আসহাবে কাহাফের সাত ব্যক্তিও ছিল যুবক। যারা এক আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। যাদের আল্লাহ শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘কতিপয় যুবক যখন গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা এই বলে দোয়া করল, হে আমাদের রব, তুমি একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের ওপর অনুগ্রহ দান করো, আমাদের কাজকর্ম সহজ করে দাও, তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও’ (সুরা কাহাফ-১০)।

যৌবনকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়কে আল্লাহর পথে ব্যয় করা প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। আমাদের সমাজে এখন যে হারে অশ্লীলতার প্রসার ঘটেছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে যুবক-যুবতীকে ধর্মীয় আচার-আচরণের মাধ্যমে জীবন গঠন করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষায়ও শিক্ষিত হতে হবে। মনে রাখতে এই দুনিয়ার জীবন অতি স্বল্প সময়ের। আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে হাজির হতে হবে। জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি বস্তুকে তোমরা গণিমত জেনে মূল্যায়ন করো। ১. বার্ধক্যের আগে তোমার যৌবনকে, ২. অসুস্থতার আগে তোমার সুস্থতাকে ৩. দরিদ্রতার আগে তোমার সম্পদকে ৪. ব্যস্ততার আগে তোমার অবসরকে ৫. এবং মরণ আসার আগে তোমার জীবনকে (সহিহুল জামে)। তবে আমাদের সমাজ থেকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দূর করতে হলে যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের আরও সচেতন হতে হবে পাশাপাশি সব অভিভাবককেও। আমাদের সমাজে যুবকদের একাংশ ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি লালনে বেশ উৎসাহী হয়ে পড়েছে। যা কাম্য নয়। এতে তাদের চারিত্রিক অধঃপতনও ঘটছে। ফ্রি মিক্সিংয়ের নামে হচ্ছে অবৈধ মেলামেশা। যা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। যা সত্যিই পীড়াদায়ক। ইসলাম ধর্ম এ ধরনের কর্মকান্ডের ঘোর বিরোধী। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হবে না’ (সুনানে আবু দাউদ)। 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর