মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

একজন শেখ কামাল

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

একজন শেখ কামাল

এই কদিন আগে ছিল শেখ কামালের জন্মদিন। মৃত্যুও তাঁর এই মাসে। সে মৃত্যু বড় নির্দয় বিবেচনাহীন। একটা কথা বলতেই হয়, সব সময় ভালো মানুষেরও ভালো মূল্যায়ন হয় না। এটাও এক ভাগ্যের ব্যাপার। ছোটবেলায় অনেক কিছুই ভালো লাগত না। কখনোসখনো মনে করতাম সবাই ভালো বলবেন। কিন্তু এ পৃথিবীতে সবাই সবাইকে কখনো ভালো বলে না। কারও কর্মকান্ড সব সময় সবার পক্ষে যায় না। কারও পক্ষে গেলে অবশ্যই কিছু না কিছু কারও না কারও বিপক্ষে যাবে। তাই এ পৃথিবীতে যত ভালো মানুষই হোন, কারও না কারও কাছে ভালো হওয়া যায় না। যেখানে স্বার্থ জড়িত থাকে সেখানে অনেক মানুষই স্বার্থান্ধ হয়ে সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করতে চায় না, স্বীকার করে না। সেজন্য কামালের জন্ম এবং মৃত্যুর মাসে কেন যেন অন্তর থেকে তাগিদ অনুভব করি। সে কারণেই কামালকে নিয়ে দুই কথা লিখছি। ষাটের দশকে পাকিস্তান আমলে রাজনীতি, সমাজ, মানুষের মানবতা, আচার-আচরণ এমন ছিল না। তখন কোনো বাচ্চা হারিয়ে গেলে যার হাতেই পড়ত সে পাগল হয়ে যেত কীভাবে বাচ্চাটিকে বাবা-মার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এখন বাবা-মার কাছে পৌঁছানো নয়, বাচ্চা তুলে নিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। না দিলে শিশুদেরও মেরে ফেলা হয়। এমন অমানবিক আমরা কখনো ছিলাম না। পরম মানবতাই ছিল আমাদের গর্বের ধন। এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যতটা সম্মান দেখায়, ভালোবাসে তার চাইতে হাজার গুণ বেশি সম্মান করে ভালোবাসে মায়ের ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে সংগ্রাম করেছি, রক্ত দিয়েছি তার জন্য। কিন্তু এখন বাংলা, বাংলা ভাষার সেই মর্যাদা নেই, সেই দরদ নেই। দিন দিন কেমন যেন মানবতাহীন, শালীনতাহীন এক জড়পদার্থে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। কামালকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই চিনি, জানি। ১৯৬০-’৬২ সাল থেকে জাতির পিতা মুজিব পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। বঙ্গবন্ধু যখন শেখ মুজিব ছিলেন তখন আমাদের টাঙ্গাইলের বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। ১৯৭২-এর ২৪ জানুয়ারি কাদেরিয়া বাহিনীর সমস্ত অস্ত্র যেদিন বঙ্গবন্ধুর পায়ের সামনে বিছিয়ে দিয়েছিলাম, সেদিনও বঙ্গবন্ধু আমাদের বাড়িতে মা-বাবাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন। সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে ফোমিন তাঁর দেশের স্বীকৃতি নিয়ে টাঙ্গাইল এসেছিলেন। তাঁরই কারণে ওয়াপদা ডাকবাংলো থেকে বেরিয়ে সার্কিট হাউসে গিয়েছিলেন। সে-যাত্রায় জাতির পিতার আর আমার বাবা-মার সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু কদিন পরই আমার মা-বাবাকে আমন্ত্রণ করে কথা বলেছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের কাছের মানুষ, আত্মার আত্মীয়। সেই সুবাদে আমাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। শেখ কামাল এক অসাধারণ সরল নিরহংকার মানুষ ছিল। ভয় কাকে বলে তা তাঁর জানা ছিল না। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি, ১১ দফা আন্দোলনের সময় দেখেছি ঢাকা কলেজের দুর্দান্ত প্রিন্সিপালের সামনে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল নিয়ে বেরোতে। খুব সম্ভবত তখনকার প্রিন্সিপালের নাম ছিল জালালউদ্দিন। সব আন্দোলনে শেখ কামালকে পাওয়া যেত। ছয় দফা, ১১ দফা আন্দোলন শেষে ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচন- সব সময় কামালকে প্রথম কাতারে পাওয়া যেত, দেখা যেত। মুক্তিযুদ্ধে কামালের ভূমিকা খুব একটা কম নয়। আমাদের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি ও সহকারী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছে। কখনো মনে হয়নি সে জাতির পিতার সন্তান। কামালের মধ্যে অহংকারের তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মঠ একজন যুবক। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কাছে তাঁর সন্তান হিসেবে কামাল কোনো দিন কোনো কিছু চায়নি। কোনো কোনো সময় আমাদের কাছে এসেছে, আমাদের দিয়ে অনুরোধ করেছে। কিন্তু নিজে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্মদাতা পিতাকে কোনো কিছু বলেনি। দুটি ঘটনা এখনো আমার অন্তরে জাগ্রত হয়ে আছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পরপর বেশকিছু অভিযোগের কারণে গ্রেফতার হয়েছিল মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। মায়ার সঙ্গে কামালের ঘনিষ্ঠতা ছিল। একসময় ছুটে এসেছিল আমার কাছে, ‘কাদের ভাই, আমাকে একটা সাহায্য করতে হবে।’ কী সেই সাহায্য বলতেই হাত চেপে বলেছিল, ‘মায়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব অভিযোগ মিথ্যা। তাই তাকে মুক্তি দিতে হবে।’ বলেছিলাম, আমরা কোথাকার কে, তুমি তোমার বাপকে বলতে পার না? আমার কাছে এসেছ! আমিও তোমার বাপকে পিতা বলেই মানি। তোমার পিতা জন্মদাতা, আমার পিতা রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক পিতা। কামাল বলেছিল, ‘ওসব বুঝি না। আব্বা আপনাকে খুব ভালোবাসে, ¯ন্ডেœহ করে। আপনার কোনো কথা ফেলবেন না। তাই মায়াকে মুক্ত করে দিন।’ দুই দিন পর গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, মায়াকে ছেড়ে দিতে হবে, অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে হবে। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুই তো এমনভাবে কখনো কোনো কিছু বলিস না। মায়াকে তো তুই ভালোভাবে চিনিস না। তার জন্য এমন জোরাজুরি!’ তখন সব খুলে বলেছিলাম। কামালের কথা শুনে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে। কামাল তোর কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে গেছে সেই অনুরোধ পালন করা না হলে তোর কি কোনো সম্মান থাকে? ঠিক আছে।’ এক দিন পরই মায়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মায়া হয়তো এর বিন্দুবিসর্গও জানেন না। কিন্তু তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন কামালের জন্য।

এমন আরেকটি ঘটনা। হঠাৎই কামাল এসে হাজির, ‘ভাই, মোহাম্মদপুরে একটা ছোট্ট প্রেস একজনকে দিতে চেয়েছিলাম।’ পূর্তমন্ত্রী মাগুরার সোহরাব হোসেন। ফাইল তৈরি হয়ে তাঁর কাছে গেলে তিনি কামালকে ডেকেছিলেন। খোলাখুলি বলেছিলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর সুপারিশে প্রেসটি একজনকে কয়েকদিন আগেই বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে। এখন তো আমি কিছুই করতে পারব না। যা করার কাদের সিদ্দিকী করতে পারে।’ সেজন্যই কামাল মোহাম্মদপুরের বাড়িতে এসেছিল। তাঁর কথা শুনে বলেছিলাম, ঠিক আছে, আমি সোহরাব ভাইকে বলব। পূর্তমন্ত্রী সোহরাব ভাইকে নিয়ে এর কিছুদিন আগে এক ঘটনা ঘটেছিল। আওয়ামী লীগ একটি সংগ্রামী দল, পুরনো দল। যার জন্মই হয়েছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাই দলটিতে সব সময় ল্যাং মারামারি ছিল। একজন আরেকজনকে ডিঙিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ছিল। এখনো আছে। এই ল্যাং মারামারির কারণে একসময় দুর্নীতির অভিযোগ এনে সোহরাব হোসেনকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ফণীভূষণ মজুমদার, শেখ ফজলুল হক মণি এবং জননেতা আবদুর রাজ্জাক- এ তিনজনকে দিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল সোহরাব হোসেনের বিষয়ে। আমি এর আগেপিছে কিছুই জানতাম না। হঠাৎ একদিন দুপুরে পূর্তমন্ত্রীর ফোন পাই, ‘ভাই, তুমি কি একটু আসতে পারবে?’ তখনকার দিনে এখনকার মতো কোনো যানজট ছিল না। ১০-১৫ মিনিটেই তাঁর বেইলি রোডের বাড়ি গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘ভাই, সারা জীবন সংগ্রাম করেছি। নিজের সংসারের দিকে তাকাইনি। মুক্তিযুদ্ধে বাড়িঘর সব হারিয়েছি। মন্ত্রিত্ব আমি চাইনি। তবু যা ভালো মনে করেছেন নেতা মন্ত্রী বানিয়েছেন। স্বাধীন দেশে দুর্নীতির অপবাদ নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়লে এলাকায় মুখ দেখাব কী করে?’ ফণীভূষণ মজুমদারের বাড়ি ছিল মন্ত্রী সোহরাব হোসেনের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। তক্ষুনি গিয়েছিলাম। তাঁরা তিনজন বসে সোহরাব হোসেনের ঘটনা নিয়েই আলোচনা করছিলেন। মণি ভাই এবং রাজ্জাক ভাই আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন, সম্মান করতেন। মণি ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কাদের হঠাৎ করে তুমি এখানে?’ বলেছিলাম, হ্যাঁ, আপনাদের কাছেই এলাম। শুনলাম সোহরাব ভাইকে নিয়ে আপনারা আলোচনা করছেন। সোহরাব ভাই দুর্নীতিবাজ এটা প্রমাণ করলে, তাঁর মন্ত্রিত্ব গেলে আপনাদেরও যে দুর্নীতিবাজ বলা হবে না, পদ যাবে না গ্যারান্টি আছে? ফণীদা ছিলেন আমার কাছে একেবারে সাদাসিধা মানুষ। মণি ভাই ছিলেন তার চাইতেও বেশি আমার প্রতি সদয়। রাজ্জাক ভাইয়ের তো কথাই চলে না। নিজের ভাইয়ের মতো আমাকে দেখতেন। ১৫-২০ মিনিট এ কথা-ও কথার ফাঁকে ফণীদা বললেন, ‘আমরা কিছু না। তোমার নেতাই সব। যাও এখানে যা বললা নেতাকে গিয়ে বল।’ এখনকার সুগন্ধা তখনকার গণভবন। সেখানে যেতে ৫-৭ মিনিটের বেশি লাগেনি। খুব আগ্রহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কী রে কী কারণে কোনো কিছু না জানিয়ে চলে এলি?’ বলেছিলাম, হঠাৎ আসার মতো কারণ হলেই লোকজন আসে। অট্টহাসি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোর আবার কী কারণ হলো?’ না, তেমন কিছু না। একটু আগে সোহরাব ভাই আমাকে ডেকেছিলেন। গিয়ে শুনলাম তাকে ক্যাবিনেট থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে ফণীদা, মণি ভাই এবং রাজ্জাক ভাইকে নিয়ে। বললেন, ‘এই কথা!’ আমি বললাম, আজ সোহরাব ভাইকে সরাবেন, কাল হয়তো আরেকজনকে সরাবেন। কম্বলের লোম্বা বাছতে গিয়ে হয়তো কম্বলই শেষ হয়ে যাবে। চেয়ার থেকে উঠে বললেন, ‘ঠিকই তো, তুই ঠিক বলেছিস।’ সঙ্গে সঙ্গে ফণীদা, মণি ভাই, রাজ্জাক ভাইকে ডেকে পাঠালেন। ৫-৭ মিনিট পর তাঁরা এলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘অতসবের দরকার নেই। দাদা আপনি রিপোর্ট দিয়ে দিন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’ তা-ই হলো। সেই থেকে সোহরাব ভাই আমাকে খুব সম্মান করতেন, ¯ন্ডেœহ করতেন। তাই শেখ কামাল বলার পরও সোহরাব ভাই তাঁকে বরাদ্দ দিতে পারেননি। এক দিন পর গিয়ে বললাম, কামাল গিয়েছিল। ও যেটা চায় দিয়ে দিন। এতে কামাল খুব খুশি হয়েছিল। কামাল সম্পর্কে যখন যা তা শুনেছি ভালো লাগেনি। আগে তো বুঝতাম না, বড় কাউকে ঘায়েল করতে হলে প্রথম প্রথম তার আশপাশে আঘাত করতে হয়। শত্রুপক্ষ তা-ই করেছিল। কামাল রাজনীতিকের চাইতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ছিল অনেক বেশি। গিটার বাজাত, ফুটবল খেলত, আবাহনী ক্লাব গঠন করেছিল। যে আবাহনী আজ বাংলাদেশে মস্তবড় সাংস্কৃতিক ক্লাব। যেটা তৈরি করেছিল শেখ কামাল। শেখ কামালের বিনয় আমি অনেকের মধ্যেই দেখিনি। আমার ছোটবোন শুশু ইডেন কলেজে পড়ত। অনেক সময় রাস্তাঘাটে কামালের সঙ্গে দেখা হলে কখনো আগে সালাম দিতে পারেনি। কামালই আগে হাত তুলে সালাম দিত। শুশুকে অনেকবার কামালের সালাম দেওয়ার কথা মাকে বলতে শুনেছি। কামালের অন্যকে সম্মান করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। কামালের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক দিনের জন্যও তাঁকে অহংকার করতে দেখিনি। বরং মিছিলে মিটিংয়ে নিবেদিত কর্মীর মতো কাজ করতে দেখেছি। কারও কাছে বলত না যে, সে বঙ্গবন্ধুর ছেলে। অনেক সময় অনেকভাবে শেখ কামালকে দেখেছি। তাঁর মধ্যে কোনো আহামরি ভাব ছিল না। কিন্তু অযথা কামালের নামে বদনাম করা হয়েছিল। একসময় রটনা করা হলো কামাল বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করতে চেয়েছিল। লুট করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কামালের কষ্ট করে বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করার কোনো প্রয়োজন ছিল? কত কোটিপতি ব্যবসায়ী, কত সরকারি কর্মচারী, কত নেতা কামালের বদান্যতা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ছুটত। তাঁর কেন বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করতে হবে? এটাও কেউ বুঝতে চায়নি, ভাবতে চায়নি কামালের ওসবের কোনো দরকার ছিল না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে চাবি ছাড়া ভল্ট খোলা অসম্ভব। কোনো কিছু দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রাখা, সোনা রাখা স্ট্রং রুমের তালা ভাঙা বা চাবি ছাড়া অন্য কোনোভাবে ঢোকা কোনোটাই সম্ভব ছিল না। আর টাকা রাখার জায়গার চাবি কখনো একসঙ্গে রাখা হয় না। দু-তিনটি চাবি দিয়ে ভল্ট খুলতে হয়। চাবি ছাড়া ভল্ট খোলার কোনো সুযোগ নেই। হ্যাঁ, হয়তো গ্যাসকাটার দিয়ে দরজাগুলো কেটে ঢোকা যেতে পারে। কিন্তু সেটাও অনেক সময়ের ব্যাপার। আর ডিনামাইট চার্জ করে দরজা ভাঙা যাবে না। বরং বিল্ডিংয়ের ভিতর থেকে টাকার ঘর ভেঙেচুরে বেরিয়ে যেতে পারে। সে অবস্থায় একটা টাকাও আস্ত পাওয়া যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ বিরোধী বহু লোক কামালের ওপর ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ তোলে। আমি নিশ্চিত কারও চরিত্র হনন করলে সেখানে সত্যতা না থাকলে আগে হোক আর পরে, পরম করুণাময় আল্লাহ তার অবশ্য অবশ্যই বিচার করেন। তাই কামালের ওপর মিথ্যা অপবাদ আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়।

স্বাধীনতার পরপরই প্রায় ১০০ নেতা-কর্মী নিয়ে কলকাতা গিয়েছিলাম। সেই আমার জীবনে প্রথম কলকাতা দেখা। গড়ের মাঠে তখন ভারত-বাংলা মৈত্রী মেলা চলছিল। সেখানে গিয়েছিলাম। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যয় এবং কলকাতা হাই কোর্টের চিফ জাস্টিস আমাদের সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। কলকাতা সফরের মাঝে একদিন বসুশ্রী সিনেমা হলে আমাদের এক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সুব্রত মুখার্জি, সওগত রায়, সোমেন মিত্র, স্বাধীনতাযুদ্ধের কণ্ঠসৈনিক আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদসহ আরও অনেকে ছিলেন।

সেখানে শেখ কামাল, আবদুল কুদ্দুস মাখন, আ স ম আবদুর রব আরও অনেকেই ছিলেন। কত জায়গায় কতবার কামালের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জাতির পিতার পরিবারে আরেকটি মুজিবের যদি জন্ম হয়ে থাকে সে ছিল শেখ কামাল। অথচ তাঁকে কত অপবাদ সহ্য করে চলতে হয়েছে। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশতবাসী করেন।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর