বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলা অভিধায় সরকারি নেতা-কর্মীদের গর্বের শেষ নেই। আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশন শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর। তার আগে আমাদের ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন। এমনকি বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাবও অগ্রাহ্য করা হয়েছিল অপ্রয়োজনীয় বিষয় এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইত্যাকার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারপ্রধানের আমলে সে ব্যাপারে শত শত কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কৃতিত্ব হলেও আমলা নিয়ন্ত্রিত এ দেশে ভালো কিছু করা যে কতটা কঠিন, তা প্রমাণিত হয়েছে এ ক্ষেত্রের শম্বুকগতিতে। কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে সব সরকারি সেবা যে কোনো স্থান থেকে সহজে, স্বচ্ছভাবে, কম খরচে ও কম সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশের ডিজিটাল যাত্রায় সুফল এসেছে। হাতে হাতে এখন মোবাইল। ঘরে বসে অনলাইনে করা যাচ্ছে কেনাকাটা। লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইনে। ৯৯৯-এ ফোন করলেই মিলছে নানা সহায়তা। তবে এখনো অধিকাংশ সরকারি সেবা পেতে হাজির হতে হচ্ছে সশরীরে। এনআইডি থাকা সত্ত্বেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে যেতে হচ্ছে বিআরটিএ অফিসে। আধুনিক টোল প্লাজায় টোল দিতে হচ্ছে হাতে হাতে। এনআইডি সার্ভার থেকে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য। গায়েব হয়ে যাচ্ছে ব্যাংক থেকে গ্রাহকের টাকা। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে রয়েছে দেশ। আগামী বছরই বাংলাদেশ যুক্ত হবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে। তবে এখনো চড়া মূল্যে কচ্ছপগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হলে স্লোগান নয় বাস্তবে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া কীভাবে দ্রুততর করা যাবে সেদিকে নজর দিতে হবে। ইন্টারনেটের শম্বুকগতিকে তেজি ঘোড়ার গতিতে রূপান্তরের বিকল্প নেই।