ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে নদনদীর পানি। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা পানিতে ডুবছে। ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আউশ ও সবজি চাষ। বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকার মানুষের দুর্যোগ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশুদ্ধ পানির সংকট বন্যাদুর্গতদের ভোগাচ্ছে। টাঙ্গাইলের ঝিনাই, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে। সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীভাঙনে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। রংপুরে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে তিস্তার তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়ন। দিনাজপুরে করতোয়া নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল। জামালপুরের মেলান্দহেও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। বন্যায় সিরাজগঞ্জে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সহস্রাধিক তাঁত কারখানা পানির নিচে। ফলে মালিক ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধিতে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা না পৌঁছায় বন্যাকবলিতদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেই টিকে আছে দেশের মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাধীনতার পর নানামুুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও প্রতি বছরই বন্যা দেশের বিভিন্ন এলাকার জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। এ অবস্থায় দুর্গত মানুষের পাশে প্রশাসনসহ সমাজের সম্পন্ন মানুষদের দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে ত্রাণকাজে। নদনদীর পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা ঢলে বন্যার অভিশাপ জেঁকে ধরে। এ থেকে রক্ষা পেতে নদনদী খননে জোর দিতে হবে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাবে। রোধ করা যাবে বন্যার গ্রাসও।