জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত এ জন্য বেশি যে যত মৌলিক ইবাদত যথা- সালাতের পাশাপাশি অধিক নফল সালাত, নফল সিয়াম (১ জিলহজ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত) সক্ষম না হলে আরাফার দিনের সিয়াম, দান-সদকাসহ সামর্থ্যবানদের জন্য ফরজ হজ ও কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এতদ্ব্যতীত আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভের জন্য ১-১৩ জিলহজ পর্যন্ত বেশি বেশি তাসবিহ তাহমিদ তাকবির ও তাহলিল পড়ার বিষয় রয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম দিন নেই, যেদিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- আল্লাহর পথে জিহাদও নয় হে আল্লাহর রসুল? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়, তবে সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে স্বীয় জানমাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে অতঃপর এর কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না তার আমল এর চেয়ে উত্তম। (বুখারি-৯১৩), নাসাঈ, আবু দাউদ। সাহাবায়ে কেরাম এ ১০ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। আমরাও তাদের অনুসরণে নিম্নোক্ত ইবাদত করে যেতে পারি যাতে আমরা আমাদের অতীতে কৃত পাপগুলো মোচন করে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত অর্জনের পাশাপাশি তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারি।
আমরা যারা ইতোপূর্বে হজ করেছি অথবা হজে যাইনি তাদের করণীয় ইবাদতের বিষয়গুলো হচ্ছে :
১. আমরা যারা হজে যাইনি এবং তাদের মধ্যে যারা কোরবানি করার সামর্থ্যবান তারা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগপর্যন্ত তাদের স্ব-স্ব নখ, চুল, গোঁফ বা কোনো লোম কাটতে পারব না।
২. আমরা যারা হজে যাইনি তারা- জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত ৯টি নফল সিয়াম (রোজা) রাখব। সম্ভব না হলে কমপক্ষে আরাফার (৯ জিলহজ) দিনের সিয়াম অর্থাৎ হাজি সাহেবরা যেদিন আরাফায় অবস্থান করেন ওই দিনের সিয়াম (রোজা) রাখব। কেউ ৮ ও ৯ জিলহজ সিয়াম পালন করলেও করতে পারেন, কারণ নফল সিয়ামতো রাখা যাবে। তবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, আরাফার দিনে সিয়াম পালন করলে আমি আশা করি আল্লাহতায়ালা সিয়াম পালনকারীর বিগত এক বছরের এবং আগামী এক বছরের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। এতদ্ব্যতীত আরাফার দিনের আরেকটি অন্যতম নেয়ামত আমরা পেয়েছি যা হচ্ছে- ‘আল্লাহ সুবহানুতায়ালা বিদায় হজের এদিনে (অর্থাৎ দশম হিজরি সনের ৯ জিলহজ) আমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করার আয়াত নাজিল করে আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পন্নকরত ইসলামকে দীন মনোনীত করেছেন। (সুরা মায়িদা আয়াত-৩ শেষাংশ)। এসব কারণে ৯ জিলহজ হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। তাই আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে রসুলুল্লাহ (সা.) এর আনুগত্য করে তাঁকে অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদত করতে হবে। এর বাইরে ইবাদত করা হলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. ১ জিলহজ ভোর থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত বেশি বেশি তাকবির যথা : সুবহানাল্লাহে ওয়াল আলহামদুলিল্লাহে ওয়ালাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহেল হামদ। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ, সুবহানাল্লাহে ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা কালাহু লাহুল মূলক ওয়ালহুল হামদ ওয়াহুওয়া আল কুল্লি সাইয়্যেন কাদির বেশি বেশি পাঠকরত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে।
৪. ফরজ সালাতের পাশাপাশি নফল সালাত আদায় ও জিকির আজকার করে নেকি অর্জন।
৫. সাধ্যমতো দান-সদকা করে পুণ্যের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা।
৬. বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করে অতীতের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
৭. ১০ জিলহজ ঈদের সালাত আদায় করে কোরবানি করা। তবে যিনি বা যারা সালাত আদায় করেন না, তাদের কোরবানি কবুল হবে না, কারণ সালাত পরিত্যাগকারীর ইমান প্রশ্নবিদ্ধ, তারা মুত্তাকি নয়। আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন না (সুরা মায়িদা-২৭)। সালাত পরিত্যাগকারীদের সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে তারা তওবা করে সালাত আদায় করে ইমানদার হয়ে কোরবানি করবেন, তাহলেই তাদের কোরবানি কবুল হবে (সুরা ফুরকান-আয়াত-৭১, সুরা তাহরিম আয়াত-৮)।
কারণ আল্লাহর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি বান্দার ক্ষমা চাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। তিনি তাঁর রহমত প্রাপ্তি থেকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন (সুরা জুমার আয়াত-৫৩)। কাজেই আসুন আমরা সবাই তওবা করি এবং সালাত পরিত্যাগকারীরা তওবা করে সালাত আদায় করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি।
লেখক : প্রাবন্ধিক