১১ রবিউস সানি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর ওফাত দিবস। উপমহাদেশের ওলি প্রেমিকদের কাছে এদিনটি ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম বলে পরিচিত। ইয়াজদাহম ফারসি শব্দ থেকে এসেছে, অর্থ হলো এগারো। ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ বলতে রবিউস সানি মাসের এগারো-এর ফাতেহা শরিফকে বলা হয়। ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম যুগের শ্রেষ্ঠ ওলি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর স্মরণে পালন করা হয়।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী ৪৭০, মতান্তরে ৪৭১ হিজরি সালের ১ রমজান ইরাকের বাগদাদের জিলান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল-জিলানী আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তাঁর পিতা ছিলেন ইমাম হাসান ইবনে আলীর বংশধর ও মাতা ছিলেন ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর বংশধর।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) প্রাথমিক হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর মায়ের কাছে। অতঃপর মায়ের পরামর্শে ১০৯৫ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি বাগদাদে যান। জ্ঞান পিপাসা মেটাতে বাগদাদের সুবিখ্যাত জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের সাহচার্যে এসে শুরু করলেন জ্ঞান সাধনা। প্রথমেই শায়েখ হাফেজ আবু তালেব বিন ইউসুফের তত্ত্বাবধানে তিনি পবিত্র কোরআন শরিফ ভালোভাবে হিফজ করে নিলেন। বাগদাদে গিয়ে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল এবং আবু মোহাম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে মোহাম্মদ (রহ.)-এর কাছে ইলমে ফিকাহ, শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আবদুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখের কাছে ইলমে হাদিস এবং শায়েখ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী (রহ.) কাছে সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। বড়পীর অল্প বয়সেই মাদরাসার পরীক্ষা দিয়ে শ্রেষ্ঠ সনদ অর্জন করেন। মাত্র ৯ বছর শিক্ষা অর্জন করে ১৩টি বিষয়ের ওপর সনদ লাভ করেন। বিষয়গুলো হলো : এলমে কেরাত, তাফসির, হাদিস, আকাঈদ, এলমে কালাম, এলমে ফিরাসা, তারিখ, এলমে আনসাব, এলমে লুগাত, আদব, এলমে উরূজ, এলমে নাহু ও এলমে মুনাজিরা।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ছিলেন শরিয়ত ও তরিকত জগতের মহাসম্রাট, যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ এবং অতঃপর দার্শনিক। তবে তিনি কাদেরিয়া তরিকার প্রবর্তক ছিলেন। হজরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) মহান আল্লাহর বাণী এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর কথামালা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দীনের প্রচার ও প্রসার করেন। তাঁর কথা শুনতে ছোটবড় ধনী-গরিব সবাই উপস্থিত হয়ে শ্রবণ করত এবং সেই অনুযায়ী আমল করত। বড়পীরের মাধ্যমেই ইসলাম পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। এজন্যই তাঁর উপাধি ছিল মুহীউদ্দীন।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। যা বর্তমানে বিভিন্ন দালিলিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব গ্রন্থের মধ্যে ‘ফতহুল গায়েব গুনিয়াতুত তালেবীন’, ‘ফতহুর রববানী’, ‘কালীদায়ে গাওসিয়া’, ‘ক্বসীদায়ে গাউসিয়া’, ‘আল-ফুয়ুদাত আল-রব্বানিয়া’, ‘কিবরিয়াত এ আহমার’, জান্নাত ও জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, মহিমান্বিত প্রতিভাস, উল্লেখযোগ্য।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) অনুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল এবং দানশীল ছিলেন। অন্যের বিপদে এগিয়ে যেতেন। ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতেন। হাজারো বিপদে কখনো মিথ্যা বলেননি। সর্বদা সত্য বলতেন। অন্যয়ের বিপক্ষে ও ন্যায়ের পক্ষে ছিল তাঁর শক্ত অবস্থান। তাঁর মুখের ভাষা ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ মুসলমান হয়েছিল বলে জানা যায়।
অবশেষে মহান এই সুফি পীর হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি মাসে মহান এই ইহজগৎ ত্যাগ করেন। যারা বড়পীরকে ভালোবাসেন, তারাই বড়পীরের এই ওফাতের দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালন করবেন।
প্রিয় পাঠক, বড়পীরের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের জীবনকে আলোকিত করি। নবীর দরজা বন্ধ হলেও ওলির দরজা বন্ধ নয়। কীভাবে ওলি হওয়া যায় সেই চেষ্টা করে নিজের জীবনকে অতিবাহিত করি। হে আল্লাহ আপনি আমাদের বড়পীরের অসিলায় ওলি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
সূত্র : (উইকিপিডিয়া, বড়পীরের জীবনী, আবদুল কাদির জিলানীর জীবনী।)
♦ লেখক : ইসলামিক গবেষক