বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

জীবনের অনুষঙ্গ এখন ইলেকট্রিক পণ্য

এক দশক আগেও এসব পণ্য আমদানি করা হতো। এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক ডিজাইনের পণ্য। জীবনকে সহজ করতে বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে এসেছে নানা ধরনের ইলেকট্রিক পণ্য। দৈনন্দিন জীবনে এগুলোর বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে...

আলী রিয়াজ

জীবনের অনুষঙ্গ এখন ইলেকট্রিক পণ্য

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে। গত ১০ বছরে দেশের সব প্রান্তে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের সংযোগ। নিভৃত পল্লীর দরিদ্র কৃষকের ঘরও এখন আলোকিত বিদ্যুতের আলোয়। বিদ্যুতের এ অভাবনীয় উন্নতির প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনযাপনের পদ্ধতিতে। বিদ্যুতের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য। বিদ্যুৎ সংযোগের পর মানুষ প্রথম পণ্য হিসেবে টেলিভিশন কিনলেও এখন সেটা হয়েছে রেফ্রিজারেটর। এক দশক আগেও যেখানে শহরের ঘরে দেখা মিলত রেফ্রিজারেটরের; এখন দুর্গম চর এলাকার দরিদ্র কৃষকের ঘরেও দেখা মেলে। জীবন আরও সহজ করতে শুধু রেফ্রিজারেটর নয়, প্রতিদিনের ঘরকন্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য। বাংলাদেশের মানুষের দৈনিক আয় যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বিভিন্ন চাহিদা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের শিল্প খাতে এসেছে বৈচিত্র্যময় পণ্যের উৎপাদন। গত এক দশকে যেসব শিল্প খাতে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে তার মধ্যে হোম অ্যাপলায়েন্স পণ্যের উৎপাদন বা প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। দেশের সব প্রান্তে এসব ইলেকট্রনিক পণ্যের শোরুম দেখা যায়। দিন দিন বাড়ছে চাহিদাও। এক দশক আগেও এসব পণ্য আমদানি করা হতো। এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক ডিজাইনের পণ্য। জীবনকে সহজ করতে বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে এসেছে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য। দৈনন্দিন জীবনে এগুলোর বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে। মানুষ এখন হয়ে পড়েছে যন্ত্রনির্ভর। যে কারণে কোম্পানিগুলোও নিয়ে আসছে জীবন-সহায়ক নানা যন্ত্র। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওভেন, কুকার, জুস বার, ভেজিট্যাবল কার্টার, ইস্তিরি, ওয়াটার হিটার, ওয়াটার গিজার, হেয়ার হিটার, মসলা বাটার যন্ত্র, ওয়াশিং মেশিন, সিলিংফ্যান, বলফ্যান, স্প্রেসারসহ নানা যন্ত্র। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে হোম অ্যাপলায়েন্স-কেন্দ্রিক যে কয়েকটি কোম্পানি বৃহদ্ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে র‌্যাংগস, ওয়ালটন, যমুনা গ্রুপ, ইলেট্রোমার্টসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।

হোম অ্যাপলায়েন্স পণ্য বিপণনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান র‌্যাংগস। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কয়েক দশক ধরে। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক পণ্য বিপণনে পাইওনিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে তারা। হোম অ্যাপলায়েন্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অনবদ্য অবদান রয়েছে। র‌্যাংগ্স ইলেকট্রনিক, সনি করপোরেশন জাপানের তত্ত্বাবধানে তেজগাঁয়ে বাংলাদেশের প্রথম সনি টিভি অ্যাসেম্বল ফ্যাক্টরি স্থাপন করে। এবং প্রতিষ্ঠানটির সংযোজনকারী হিসেবে ১৯৮৭ সালে যাত্রা করে সনির ওসাকা জাপান ফ্যাক্টরির তৈরি ১২ ইঞ্চি সাদাকালো টিভি সংযোজনের মাধ্যমে। এরপর ১৯৮৯ সালে সনি কালার টেলিভিশনের ২১ ও ১৪ ইঞ্চি এবং ১৯৯১ সালে ২০ ইঞ্চি র‌্যাংগ্স কালার টিভির উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে ৪০টির বেশি এলইডি টিভি মডেল উৎপাদন ও সংযোজন হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

ওয়ালটন তাদের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে এক দশকের কিছু বেশি। সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শুরু করে। মূলত শহরকেন্দ্রিক শোরুম করে প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে তাদের বিপণন শুরু করে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে দেশে মোট রেফ্রিজারেটর বিক্রির ৭০ শতাংশ বাজার দখল করেছে। অত্যন্ত কম দামে রেফ্রিজারেটর বিক্রি করায় সারা দেশের গ্রাহকের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির পণ্য। প্রতিষ্ঠানটি রেফ্রিজারেটর উৎপাদনেও এখন দেশের শীর্ষে। শুধু রেফ্রিজারেটর নয়, তারা উৎপাদন করছে কমপ্রেসারও। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর ও কমপ্রেসার এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি, বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নকশা, ঘরের বাইরের সীমানা পরিচর্যার সরঞ্জামাদিসহ ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব মানদণ্ড তৈরি করেছে। পুরোপুরি আমদানিনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে নব্বইয়ের দশকে কার্যক্রম শুরু করে ইলেক্ট্রো মার্ট। বাংলাদেশে রঙিন টেলিভিশন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ অবদান। ১৯৯৮-৯৯ সালে মাত্র ১৫ হাজার টাকায় ২০ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন বিপণন শুরু করে। সে সময় দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে কনকা টেলিভিশন তাদের শোরুমগুলোয় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। পরবর্তীতে ইলেক্ট্রোমার্ট নিজেরাই উৎপাদন শুরু করে। সোনারগাঁয়ে বৃহৎ এলাকা নিয়ে কারখানা তৈরি করেছে। সেখানে উৎপাদন করছে টেলিভিশন, গ্রি এয়ারকুলারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য।

দেশি আরেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নানা পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যমুনা ইলেকট্রনিক্স। প্রতিষ্ঠানটি উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ইস্তিরি, ওয়াশিং মেশিন, ওয়াটার হিটার, রুম হিটারসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত নানা পণ্য উৎপাদন করছে কয়েক বছর ধরে। এর মধ্যে সারা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে তারা নিজেদের তুলে ধরেছে। দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে যেসব পণ্য এখন বাজারে বিপণন হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে রেফ্রিজারেটর ও টিভি। তবে এর বাইরে এখন মানুষের ঘরকন্নার কাজ যেসব পণ্য ব্যতিরেকে একেবারে অচল তার মধ্যে রয়েছে রান্নার ডিশ, ফ্রাইপ্যান, রাইস কুকার। রয়েছে মিল্কপট, গামার সিরিজের ফ্রাইপ্যানসহ আরও অনেক পণ্য। ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ইলেকট্রিক আয়রন, বিভিন্ন ধরনের ফ্যান, ইস্তিরি, ওয়াটার হিটার, রুম হিটার, গ্রাইন্ডার মিলস, গার্মেন্ট স্টিমার, স্যান্ডউইচ মেকার গ্রিলস।

জানতে চাইলে ভিশন ইলেকট্রনিক্সের হেড অব মার্কেটিং রাকিব আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পণ্যের রেঞ্জ অনেক। আমরা বর্তমানে ভিশন রেফ্রিজারেটর, রাইস কুকার, ইস্তিরি, ইন্ডাকশন কুকার, ব্লেন্ডার, ভোল্টেজ স্টেবেলাইজার, সকল প্রকার ফ্যান, কেতলি, মশা মারার ব্যাট ইত্যাদি বানাচ্ছি। এ ছাড়া এসি, এলইডি টিভি, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদনে যাব যা এখন অ্যাসেম্বল (কমপ্লিট নক ডাউন) করছি।  ভিশন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মান আন্তর্জাতিক পণ্যের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। নিত্যনতুন ডিজাইন ও আধুনিক ফিচারসম্পন্ন পণ্য বাজারের কাস্টমারদের নজর কেড়েছে। আমাদের বর্তমানে ফার ফিল্ড ভয়েস কন্ট্রোল, গুগল সারটিফাইড ও অফিশিয়াল অ্যান্ড্রয়েড টিভি আছে যা রিমোট ছাড়াই আপনার ভয়েস কমান্ডে কাজ করবে যা এখন বাংলাদেশের বাজারে আমরাই প্রথম।’ যমুনা গ্রপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড  অটোমোবাইলস লিমিটেডের পরিচালক (মার্কেটিং) সেলিম উল্যা সেলিম বলেন, ‘দেশি বাজারের চাহিদা অনুসারে ১ নম্বর কোয়ালিটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করে যাচ্ছে। আমাদের উৎপাদিত হোম অ্যাপলায়েন্সের  মধ্যে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি. টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ, ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, গ্যাসস্টোভসহ অন্যান্য স্মল অ্যাপ্লায়েন্স রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার দিকে নজর রেখে যমুনা ইলেকট্রনিক্স  নিত্যনতুন প্রযুক্তি, উন্নত কাঁচামাল ও দক্ষ জনবল দ্বারা নিজস্ব কারখানায় আন্তর্জাতিক  মানের এসব হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করছে। আমাদের নিবেদিতপ্রাণ একদল কর্মী বাহিনী ও সঠিক আরএনডির ফলে দেশের ১ নম্বর কোয়ালিটি  ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স আমরা ক্রেতাদের কাছে তুলে দিতে পেরেছি।’

সর্বশেষ খবর