বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কলকাতায় চলছে ‘বাংলাদেশ বিজয় উত্সব’

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতায় চলছে ‘বাংলাদেশ বিজয় উত্সব’

বাংলাদেশ বিজয় উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি মুহূর্ত

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কলকাতায় চলছে ‘বাংলাদেশ বিজয় উত্সব’। গত মঙ্গলবার থেকে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে পাঁচ দিন দৈর্ঘ্যের এ উত্সব। কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের উদ্যোগে চলমান উত্সব শেষ হবে আগামী ১৯ ডিসেম্বর।

বিজয় দিবসের আগের দিন দুপুরে উত্সব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত, আবেগাপ্লুত। ৪৫ বছর আগে যে দেশের মাটিতে বসে মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা করা এবং সুসংহত করার সুযোগ হয়েছিল, সেই দেশের মাটিতে বসে সেই দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এই অনুষ্ঠান পালন করার সুযোগ পেয়েছি। এক দিন যে দেশের মানুষ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ হিসেবে বহন করেছিল, আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল, তাদের অন্ন ভাগ করে খাইয়েছিলেন আজ সেই ভারতের প্রতিটি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ’।

তিনি আরও বলেন, ‘এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে আসলে কিছু নেই। আমরা এক ও অভিন্ন, আমাদের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছুতেই প্রাণের মিল। আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলেও মানসিক দিক থেকে আমরা একাত্ম। আমরা বাঙালি’।

অন্যদিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গর্বের কারণ আমরা ভারতের মানুষ, ভারতে থাকি কিন্তু আমাদের হূদয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়। কখনো রবীন্দ্রনাথ, কখনো নজরুল, রুনা লায়লা বিভিন্ন শিল্পীর দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আর সেই সম্পর্ক মজবুত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পর। আমি মনে করি, মমতার হূদয়ের একদিকে যেখানে পশ্চিমবঙ্গ আছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে বাংলাদেশ আছে। কারণ তার হূদয়ে বাংলাদেশের প্রতি একটা উন্মাদনা আছে’।

পাঁচ দিনব্যাপী এ উত্সবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি থাকছে বাংলাদেশি পণ্য ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন রুনা লায়লা, কোনাল, অরিন, কুষ্টিয়ার লালন শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষ্ণকলি প্রমুখ। যোগ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেরও কয়েকজন প্রখ্যাত শিল্পী।

এ ছাড়া উত্সবের আকর্ষণ বাড়াতে থাকছে ঢাকাই জামদানি, রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, হস্তশিল্প, বুটিক, সিরামিক ও মেলামাইন সামগ্রীর বিবিধ পণ্যের প্রদর্শনী। পাশাপাশি থাকছে কাচ্চি বিরানি, ভুনা খিচুড়ি, ও পিঠাসহ জিভে পানি আনা বাংলাদেশি সুস্বাদু খাবারও।

প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে এই মেলা।

প্রতিবারই কলকাতায় এ উত্সব হয়। তবে এবারই প্রথম বড় পরিসরে আয়োজন হয়েছে।

উদ্বোধনী দিনে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে শোনান নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা, নাসিমা শাহীন, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অনিমা রায়, আধুনিক গানের শিল্পী মৌটুসী পার্থ ও বাংলাদেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানের তালে নাচ।

এদিকে বিজয় দিবসের দিনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী, লোকগানের শিল্পী শফি মণ্ডল, নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা, আধুনিক গানের শিল্পী মৌটুসী পার্থ ও সুপর্ণা ইসলাম এবং রেনেসাঁ ব্যান্ড। গানের আগে ছিল আলোচনা।

বাকি দিনগুলোতেও থাকছে নচিকেতাসহ বিভিন্ন শিল্পীর সংগীত পরিবেশনা।

উত্সবে অংশ নিতে পেরে গর্বিত শিল্পীরা। অনিমা রায় বলেন, ‘এমন একটি আয়োজনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় কৃতজ্ঞ আমি। গান গেয়ে মনের তৃপ্তি মিটিয়েছি।’

মৌটুসী পার্থ বলেন, ‘খুবই সুন্দর অনুষ্ঠান। বিশাল আয়োজন। আমি এ আয়োজনের একটি ক্ষুদ্র অংশে গান গাইতে পেরে আনন্দিত।’ তিমির নন্দী বলেন, ‘আমাদের বিজয়ে এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।’

সর্বশেষ খবর