শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এখন নতুন শাকিব

আলাউদ্দীন মাজিদ

এখন নতুন শাকিব

এক শিকারি পাল্টে দিয়েছে শাকিব খানকে। অভিনয়, গেটআপ লুক সব মিলিয়ে চমকে দিয়েছিলেন আগেই। এরপর কলকাতার ফিল্মফেয়ার মনোনয়নে আবার আলোচনায়। সঙ্গে ওখানকার সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং। একাধিক বড় প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন তিনি। এফডিসির চেনা বলয়ে একই রকম লুক, ক্যারেক্টার আর অভিনয়ে আস্তে আস্তে পতনের দিকে এগিয়ে যাওয়া শাকিব যেন ক্যারিয়ারের গোরস্তান ফুঁড়ে মাথা তুলে দাঁড়ালেন। সবকিছুতেই তিনি যেন নতুন বিজয়ী।

নিজের নতুন যাত্রা প্রসঙ্গে সাবলীল শাকিব। বললেন, ‘এখন বেছে কাজ করতে চাই। কাজ করব অল্প। সব ছবিতে বৈচিত্র্য চাই। গল্প দরকার। দরকার চরিত্রের ভিন্নতা। নির্মাণশৈলী, লোকেশন, সহশিল্পীসহ অনেকগুলো বিষয় এক সমান্তরালে কাজ না করলে কখনই একটি ভালো ছবি উপহার দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমার আগেও ছিল। কিন্তু নিজেকে প্রমাণের কোনো সুযোগ পাইনি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে শিকারি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে। এখন আমাকে প্রমাণ করতে হবে কেবল শিকারি নয়, ভালো টিমের সঙ্গে এর চেয়েও ভালো ছবি উপহার দেওয়া সম্ভব।’

আক্ষরিক অর্থেই শিকারি পাল্টে দিয়েছে সব হিসাব-নিকাশ। প্রথমত নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ফিরে আসেন জাজের ব্যানারে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে নিজের অবস্থান পাল্টে সেখানে নাম লেখান শাকিব। তখন এফডিসির লোকজন নানা সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু শাকিব দেখলেন নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং জাত চেনানোর জন্য এর বিকল্প আর কিছু ছিল না। গত বছরের ঈদে মুক্তি পাওয়া শিকারি সবার প্রশংসায় ভাসল। বিশেষত ছবিতে শাকিবের ভিন্ন রকম উপস্থিতি। ছবিটি বছরের সেরা ব্যবসা সফলের খাতায় নাম লেখাল। শুধু দেশে নয়, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডসহ বেশ কটি দেশে নিজের অভিনয়ের আলো ছড়িয়ে দিলেন শাকিব শিকারি দিয়ে। পরের গল্পটাও চমকের। কলকাতা কালাকার অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবির খেতাব জিতে নেয় শিকারি। যৌথ প্রযোজনার ছবি দিয়ে অর্জনের ঝুলিতে যোগ হলো নতুন ইতিহাস। এর আগে সত্তরের দশক থেকে অসংখ্য যৌথ আয়োজনের ছবি নির্মাণ হয়েছে। সম্মাননার ক্ষেত্রে শাকিবের শিকারিই পুরস্কারের খাতায় নাম লেখাল প্রথম। গর্বিত শাকিব বললেন ‘এই অর্জন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প, দেশ আর মানুষের। নিজ দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে প্রথমেই দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে পেরেছি। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা।’

এই তো গেল কালাকার পুরস্কার জেতা। এই জেতার আনন্দ শেষ না হতেই ওপার বাংলা থেকে আবার সুবাতাসের ঘ্রাণ। এবার চলচ্চিত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় আর মর্যাদার পুরস্কার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে  সেরা নায়কের মনোনয়ন পেলেন শাকিব খান। এই মনোনয়ন ‘শিকারি’ ছবির জন্যই।

শাকিবের এমন জয়জয়কার দেখে কলকাতার অন্য বড় মাপের চলচ্চিত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর চোখ যেন কপালে উঠল। তারা রীতিমতো শাকিবকে নায়ক করে ছবি বানানোর দৌড়ে নামলেন। এখন টালিগঞ্জের শীর্ষ ছবি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস শাকিবকে আমন্ত্রণ জানাল তাদের ছবিতে কাজ করার। খেলার মাঠে হিসাবি শাকিব বলছেন, ‘অবশ্যই তাদের কাজ করব। তবে আগে দেখতে হবে যৌথ ছবির নীতিমালা কতটুকু মানা হচ্ছে। দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলেই বিদেশে নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়ে, সম্মান আসে।’

১৯৯৬ সালে বড় পর্দায় আসা শাকিব খান ঢালিউডে টিকে থাকার দৌড়ে কখনো হতাশায় থেমে যাননি। প্রথম দিকে তার অনেক ছবিই সাফল্যের হাওয়া গায়ে মাখতে পারেনি। তবু থেমে যাননি। ২০০৬ সালে মুক্তি পেল শাকিবের ‘কোটি টাকার কাবিন’। শুরু হলো জয়জয়কার। ওই সময় থেকে শুরু হলো শাকিবের একক রাজত্ব। শাকিব খানের ছবি মানেই সিনেমা হলে দর্শকের হুমড়ি খেয়ে পড়া আর নির্মাতা ও সিনেমা হল মালিকের মুখে প্রসন্ন হাসি। নানা কারণে ঢালিউড যখন অস্তিত্ব সংকটে আর বিপর্যস্ত প্রায় তখন শাকিবের ওপর ভর করেই আলো জ্বেলে চলল ঢাকাই ছবি। এখনো শাকিব মানেই টেবিল কালেকশনে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি আর সবচেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহ। পারিশ্রমিকের দিক দিয়েও শাকিবের ধারেকাছে এগোতে পারেননি কোনো নায়ক। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নায়ক হয়ে ওঠা মেধাবী শাকিব দক্ষতা আর সততা দিয়ে যোগ-বিয়োগের খাতায় শুধুই লাভের অঙ্ক কষে চলেছেন। শাকিব খানকে অচিরেই দেশ-বিদেশের দর্শক দেখবেন যৌথ আয়োজনের ছবিতে ‘নবাব’ রূপে। শাকিব জানালেন নতুনত্ব থাকছে সেখানেও। বাকিটা চমক হিসেবেই রাখতে চান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর