সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

৭৩-এ অপ্রতিরোধ্য এক রজনীকান্ত

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার খ্যাতিমান তারকা ৭৩-বছর বয়সী রজনীকান্তকে নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনার শেষ নেই। সবাই তার নতুন সিনেমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। সম্প্রতি ১৭০তম ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। রজনীকান্তের জীবনের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

৭৩-এ অপ্রতিরোধ্য এক রজনীকান্ত

থালাইভাখ্যাত চিরসবুজ নায়ক

  রজনীকান্ত ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় এক নাম। তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে থালাইভা নামে খ্যাত।  থালাইভার (গুরু বা ওস্তাদ) বয়স বাড়ে না। তিনি চিরযুবা। চার দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ছবির দুনিয়ায় কাজ করছেন রজনীকান্ত। তার নিজস্ব কায়দায় বলা প্রতিটি সংলাপ মুহূর্তে মাতিয়ে দেয় দর্শককে।

 

ছবি মুক্তিতে অফিস-আদালতে ছুটি

ভারতীয় দর্শকদের কাছে ‘থালাইভা’ মানে গুরুখ্যাত রজনীকান্ত সত্যিকারের একজন সুপারস্টার। কারণ সিনেমার নায়কের মতো তার ব্যক্তিজীবনেও আছে সংগ্রামের অতীত। প্রায় বুড়ো একটি মানুষ। বয়সের ভারে মানুষ যখন ন্যুব্জ হয়ে যায় সেখানে সত্তরোর্ধ্ব এ অভিনেতা এখনো একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। এখনো ছবি মুক্তি পেলে টানা কয়েক দিন প্রেক্ষাগৃহে মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। শুধু তাই নয়, তার সিনেমা মুক্তি মানেই দক্ষিণ ভারতে অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা হয়ে যাওয়া।

 

ছিলেন বাস কন্ডাক্টর

আজকের এ ভারতীয় সিনেমার সুপারস্টার রজনীকান্ত কিন্তু সিনেমা জীবনের আগে ছিলেন বাস কন্ডাক্টর। সে সময় কর্ণাটক বাস সার্ভিসের আরেক সহকারী ছিলেন পি রাজ বাহাদুর। যার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রজনীর। এ বন্ধুটিই মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতেন রজনীকে। কারণ রজনীর মধ্যে ছিল অভিনয়সহ নানা গুণ, সেই সঙ্গে তাদের বিনোদিতও করতেন রজনী। আর এ গুণকে কাজে লাগাতে চাইতেন বন্ধু বাহাদুর। বন্ধু বাহাদুরের উৎসাহে চেন্নাইয়ের একটি অভিনয় একাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান রজনীকান্ত। কিন্তু কোচিংয়ের জন্য বেশিক্ষণ কাজ করতে পারেন না বলে সে মতো পয়সাও উপার্জন করতে পারেন না তিনি। ফলে দুই বছরের মেয়াদে যে অভিনয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন তার খরচ মেটানোও দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু এবারও পাশে দাঁড়ান সেই বন্ধু বাহাদুর। কোর্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত রজনীকান্তকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন তিনি।

 

যেভাবে সিনেমায়

অবশেষে দুই বছরের কোর্স শেষ করেন তিনি। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৭৫ সালে তামিল নির্মাতা কে বালাচন্দন ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ নামের সিনেমায় প্রথমবার কাস্ট করেন রজনীকে। নিজের প্রথম সিনেমাতেই মাত করে দেন রজনীকান্ত। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। আর পিছু ফিরতে হয়নি তাকে। অভিনয়ে যে ঝড় তার মধ্যে নির্মাতারা দেখেন তা আর বাকি ক্যারিয়ারে হতাশ করেনি রজনীকে। সব শ্রেণির দর্শক ভিন্ন এক অভিনেতাকে দেখতে পান। বিশেষ করে তিনি যে অবস্থান থেকে উঠে গিয়ে নায়ক হয়েছেন সে বিষয়টাও মানুষকে সম্মোহিত করে। সেই সঙ্গে তার দুর্দান্ত অভিনয়েও মানুষ মগ্ন হয়ে যায়। একের পর এক সিনেমার প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। রজনীকান্তের ছবি মুক্তি মানে শুধু ছবি মুক্তি নয়। একটা উৎসবের ব্যাপার। কারণ থালাইভার ছবি মুক্তি মানেই তামিলে সব বন্ধ। অফিস আর কাজ ফেলে বা ছুটি নিয়ে সবাই হলে ছোটেন বলে অনেক অফিস ছবি মুক্তির দিনে বন্ধ রাখা হয়। দক্ষিণী এই সুপারস্টার এমন এক অভিনেতা যিনি ২০১৯ সালে বয়স প্রায় সত্তরের কোটায় পৌঁছানোর পরেও ‘কালা’ ও ‘টু জিরো’র মতো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দিতে পারেন। তামিল, হিন্দি, মারাঠি, এমনকি মার্কিন ছবি নিয়ে রজনীকান্ত অভিনয় করেছেন ১৭৫-এরও বেশি ছবিতে।

 

পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান

অনবদ্য দক্ষ অভিনয়ের কারণে ভারত সরকার রজনীকান্তকে ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এ ছাড়া অভিনয় জীবনে জাতীয়সহ নানা উল্লেখযোগ্য সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।

 

সর্বোচ্চ পেইড অ্যাক্টর

২০০৭ সালে, ‘শিবাজি’ ছবিতে অভিনয় করে ২৬ কোটি টাকা উপার্জন করেন রজনী। সেই সময়ে, জ্যাকি চ্যানের পর, তিনিই ছিলেন এশিয়ার সর্বোচ্চ ‘পেইড অ্যাক্টর’।

 

অমিতাভের চরিত্রে অভিনয় করতে চান

অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘শামিতাভ’ ছবিটি রিমেক করতে চান জানিয়ে সাংবাদিকদের রজনীকান্ত বলেন, আর বালকির পরিচালনায় ‘শামিতাভ’ ছবিতে অভিনয় করতে চান তিনি। আগামীতে নিজের এ স্বপ্ন পূরণ করতে চান এবং অমিতাভের চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি।

 

জনপ্রিয় যত সংলাপ

প্রবাদ আছে, যত দিন তামিলনাড়ুর রাস্তায় অটোরিকশা চলবে তত দিন রজনীকান্তের এ সংলাপ জনপ্রিয় থাকবে। ‘ভাসা’ সিনেমার এ সংলাপটি হলো-‘নান ওরু থাডাভা সোন্না, নোরু থাডাভা সোন্না মাদিরি’। মানে-‘আমি একবার যখন কিছু বলে দিই সেটা একশবার বলারই সমান।’ ‘কালা’ ছবিতে তার আরেকটি বিখ্যাত সংলাপ হলো- ‘আন্দাভান সোলরান, অরুণাচলম সেইরান’ (ঈশ্বর যা বলেন, অরুণাচলম তাই করে)।  ছবিতে রজনীকান্তকে দেখা গিয়েছিল ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায়। ‘পাদায়াপ্পা’ রজনীকান্তের জীবনের আরও এক সফল ছবি। আর এতে তার বিখ্যাত সংলাপ ‘এঁ ভাজি, থানি ভাজি’ মানে, ‘আমার রাস্তা আমার নিজের’। আজও সমান জনপ্রিয়। এরপর তার অভিনীত ‘মুথু’ ছবিটি জাপানেও দারুণ ব্যবসা করেছিল। এতে তার সংলাপ, ‘নান এপ্পো ভারুভেন, এপদি ভারুভেন্নু ইয়ারকুম থেরিয়াথু... আনা ভারা ভেনদিয়া নেরাথিলে ভানদিদভেন।’ অর্থাৎ ‘কেউ জানে না আমি কীভাবে বা কখন আসব। আমি আসব যখন সঠিক সময় আসবে তখন।’ সংলাপটি আজও সমান জনপ্রিয়। এ ছবির আরও দুটি সংলাপ দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘সুম্মা পেরে কেট্টা আথরুদুলা’ (আমার নাম ডাকলে এ পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে যায়) এবং কান্না পান্নি থান কুটামা ভারুম আনা সিংঘাম সিঙ্গল থান ভারুম (শুয়োররা সব সময়ে দল বেঁধে আসে কিন্তু বাঘ সব সময়ে একাই হাঁটে)।  ‘ভায়াথিনাইল’ ছবির বিখ্যাত সংলাপ ‘ইধু ইপ্পাদি ইরুক্কু’ (এটা কেমন) আজও তার ভক্তদের মনে গেঁথে রয়েছে।

 

আসল নাম ও জন্ম

রজনীকান্তের আসল নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড। এক মারাঠি পরিবারের ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বরে জন্ম তার।

 

সর্বশেষ খবর