রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

এই ঈদে ছবি বেশি সিনেমা হল কম

বিপাকে নির্মাতারা : শিল্পকলায়ও চলবে ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

এই ঈদে ছবি বেশি সিনেমা হল কম

এই ঈদে ছবি বেশি কিন্তু সিনেমা হল কম। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে একটি ছবি মুক্তি দিয়ে লগ্নিকৃত টাকার সামান্যভাগও ঘরে তুলে আনতে পারবে না বলছেন নির্মাতা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, বর্তমানে দেশে চালু আছে মাত্র ৪৫টির মতো সিনেমা হল। তাও এগুলো অনিয়মিতভাবে খুলে। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি নেই। তাই আসন্ন ঈদে যদি বেশি ছবি মুক্তি পায় তাহলে সেগুলো কোথায় প্রদর্শন করা হবে। একটি ছবি কয়টি সিনেমা হল পাবে। স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হল দিয়ে কী সামান্য অর্থও তুলে আনা যাবে। হয়তো ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে আরও অর্ধশত সিনেমা হল খুলতে পারে। তাতে সবমিলিয়ে ঈদের সিনেমা হলের সংখ্যা একশতটির বেশি হবে না। এই অল্পসংখ্যক সিনেমা হলে বড়জোর দুটি ছবি মুক্তি পেতে পারে। এর বেশি ছবি হলে সব নির্মাতা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। ঈদের ছবি হিসেবে মুক্তি পেতে হবে জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ছবি। ছোটখাটো স্বল্প বাজেটের নাটক ঘরানার ছবি মুক্তি দিতে চাইলে সেগুলো সিনেমা হল মালিকরা নিতে চাইবে না, কারণ উৎসবের ঈদে এ ধরনের ছবি দর্শক দেখতে চায় না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সিনেমা হল বাড়াতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত ছবি সিনেমা হল মালিকদের দিতে হবে। নির্মাতারা এই চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে পূরণ করতে পারছেন না বলেই সিনেমা হল মালিকরা লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে চাইছে। কিন্তু ছবি যদি না থাকে তাহলে এই ঋণ নিয়ে কীভাবে সিনেমা হল চালানো সম্ভব। ঋণের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে না পারলে তো সিনেমা হল সরকার নিলামে তুলবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, পর্যাপ্ত সিনেমা হল না থাকায় ছবি মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল একটি সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার সিনেমা হল উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সিনেমা হল মালিকরা বলছেন যথেষ্ট পরিমাণে ভালো ছবি না পেলে আমরা ঋণের টাকা নিয়ে তা শোধ করব কীভাবে। তবে আশার কথা হচ্ছে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই পজিটিভ মত দিয়েছে। ঈদের পর বিদেশি ছবি আমদানি শুরু হলে সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে আর আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না। ফলে তাঁরা নির্ভয়ে সরকারি ঋণ নিয়ে সিনেমা হলের উন্নয়ন করবেন এবং বেশি পরিমাণে সিনেমা হল পেয়ে প্রযোজকরা আশ্বস্ত হবেন এবং ছবি মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো সংকট থাকবে না। ঈদ উৎসবে যেসব ছবি দেখতে দর্শক পছন্দ করে তেমন ছবিই মুক্তি দেওয়া উচিত। তাহলে নির্মাতা ও সিনেমা হল মালিক উভয়েই আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে। চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেন, ঈদে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে দুটি ছবি মুক্তি পেতে পারে। তবে আমার ছবির ক্ষেত্রে সিনেমা হল সংকটকে আমি বড় করে দেখি না। কারণ মানের কারণে আগের মতোই আমার ছবি সিনেমা হল নেবে এবং দর্শক দেখবে। তবে প্রদর্শক এবং প্রযোজক উভয়ের আর্থিক মুনাফার স্বার্থে সিনেমা হল ও ছবির সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এই প্রতিষ্ঠানের সিইও আলীমুল্লাহ খোকন বলেন, এবারের ঈদে আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ‘পাপ’ ছবিটির মুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত। আসলে সিনেমা হল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি মুক্তি দেওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমার মতে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকার ও প্রযোজককে পরস্পরের সহযোগী হতে হবে। কারণ প্রযোজক বাঁচলে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচবে। এক্ষেত্রে সরকার যদি বছরে অনুদান দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় না করে অনুদানের পরিবর্তে প্রযোজককে ঋণ বা ইনসেনটিভ দেয় তাহলে প্রকৃত অর্থে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি নির্মাণ হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি যে অনুদান দেওয়া হয় তা নিয়ে বরাবরই নয়ছয় চলে আসছে। ফলে এতে চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি ছাড়া উন্নতি হচ্ছে না। তাই সরকার যদি প্রযোজকদের মূল্যায়ন করে যেমন উদাহরণ হিসেবে যদি বলি একজন প্রযোজক যদি ৮০ পার্সেন্ট টাকা ছবি নির্মাণে ইনভেস্ট করে এর বাকি ২০ পার্সেন্ট টাকা যদি সরকার ইনসেনটিভ হিসেবে দেয় তাহলে প্রযোজকরা উৎসাহিত হয়ে বেশি পরিমাণে ভালো ছবি নির্মাণে এগিয়ে আসবেন। ইনসেনটিভ হিসেবে সরকারকে ক্যাশ টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসির নানা সুযোগ-সুবিধা ফ্রি করে দিলেই হবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা ইকবাল বলেন, অনন্ত-বর্ষাকে নিয়ে তাঁর ‘কিল হিম’ ছবিটি তিনি ঈদে অর্ধশতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি দেবেন। এদিকে, অপু বিশ্বাস ও জয় চৌধুরী অভিনীত ‘প্রেমপ্রীতির বন্ধন’ ছবিটি ঈদে মুক্তির জন্য ইতোমধ্যেই ২০টি সিনেমা হলে বুকিং দিয়েছে এবং সিনেমা হলের অভাবে শিল্পকলা একাডেমিতেও ছবিটি প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছেন এ ছবির নির্মাতা সোলায়মান আলী লেবু। অন্যদিকে শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছ্িবটি ঈদে মুক্তির জন্য চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে জানান ছবির নির্মাতা তপু খান। তাঁর কথায় সিনেমা হল সংকটের মাঝেও শাকিব খানের ছবি বলে ঈদে ছবিটির সাফল্য নিয়ে আমি আশাবাদী। এদিকে এই ছবির ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার এম এম মনজুর রহমান বলেন, আসলে এখন রমজানে প্রায় সিনেমা হল বন্ধ। ২০ রোজার পর সিনেমা হল মালিকরা ছবির জন্য যোগাযোগ করতে শুরু করবে। ইতোমধ্যেই আমরা ২০টি হল বুকিং দিয়েছি। ২০ রোজার পর হলের সংখ্যা আরও বাড়বে। এই ঈদে সিনেমা হল কম আর ছবির সংখ্যা বেশি হলেও শাকিব খানের ছবির চাহিদা বেশি বলে আমরা আমাদের ছবির পর্যাপ্ত হল সংখ্যা নিয়ে বেশ আশাবাদী। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ঈদে অনেকেই ছবি মুক্তি দিতে চাইবে। কিন্তু যেনতেন ছবি তো আর সিনেমা হল মালিকরা নেবেন না। কারণ বছরের দুই ঈদ হচ্ছে সিনেমা হল ব্যবসার প্রধান মৌসুম। তাই ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনেমা হল নয়, দর্শক পছন্দের মানসম্মত ছবিই মূল ফ্যাক্টর। এদিকে, এই ঈদে ছবি মুক্তির তালিকায় এখন পর্যন্ত নাম রয়েছে যেসব ছবির সেগুলো হলো- লিডার আমিই বাংলাদেশ, কিল হিম, পাপ, জ্বীন, প্রেমপ্রীতির বন্ধন, প্রহেলিকা, আদম, লাল শাড়ি, শত্রু প্রভৃতি।

সর্বশেষ খবর