আবৃত্তিচর্চা প্রসারের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের আবৃত্তি সংগঠনগুলো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। শিশু-কিশোর ও যুবাদের মাঝে আবৃত্তিচর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও কাজ করছে সংগঠনগুলো। সব মিলিয়ে আবৃত্তি শিল্প সুদৃঢ় হচ্ছে চট্টগ্রামে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামেই অধিক সংখ্যক আবৃত্তি আয়োজন হয়ে থাকে। উৎসব-অনুষ্ঠানের মান নিয়ে যেমন এখানকার সংগঠনগুলো আপস করে না, তেমনি উৎসব ও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক প্রকাশনার মান নিয়েও এখানে কোনো ধরনের আপসকামিতা চলে না।
আবৃত্তিচর্চায় আশির দশক থেকে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ। পরবর্তীতে আশির দশকের শেষ দিকে এবং নব্বই দশকের শুরুর দিকে গঠিত হয় চারুবাক বাচিক চর্চা কেন্দ্র, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল, দৃষ্টি চট্টগ্রাম, উদীরণ আবৃত্তি নীড়, অঙ্গন, ধ্বনি, চট্টগ্রাম আবৃত্তি একাডেমি, মুক্ত ধ্বনি আবৃত্তি সংসদ, শব্দাঙ্গন, অনার্য্য, অন্যস্বরসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। তন্মধ্যে কয়েকটি সংগঠন এখন আর চর্চার সঙ্গে জড়িত নেই। তবে বর্তমান সময়ে নিয়ত চর্চার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে- বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল, মুক্ত ধ্বনি আবৃত্তি সংসদ, শব্দ নোঙর, নির্মাণ আবৃত্তি সংগঠন, নরেন আবৃত্তি একাডেমি।
প্রায় বছর কুড়ি আগে চট্টগ্রামের প্রগতিশীল আবৃত্তি সংগঠনগুলোর আঞ্চলিক মোর্চা সম্মিলিত আবৃত্তি জোট এ শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। পাশাপাশি ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে ৪ দিনব্যাপী জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ও পরবর্তীতে একাধিকবার আঞ্চলিক আবৃত্তি উৎসব ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রামের আবৃত্তিচর্চাকে সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ।
চট্টগ্রামের আবৃত্তিচর্চা প্রসঙ্গে প্রবীণ আবৃত্তিজন রণজিৎ রক্ষিত বলেন, 'চট্টগ্রামে আবৃত্তির এত এত আয়োজন ও সাংগঠনিক চর্চা হচ্ছে- যার কারণে মহড়ার স্থান ও ভালো মিলনায়তনের বড় অভাব দেখা দিয়েছে। এ সংকট দূর হলে চট্টগ্রামে আবৃত্তিচর্চা আরও বেগবান হবে'।
চট্টগ্রামে আবৃত্তিচর্চার প্রসারতা ক্ষেত্রে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি ও বাংলাদেশ টেলিভিশন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমি দুই বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করে আবৃত্তি চর্চাকে আরও বেগবান করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার প্রায় নিয়মিত আবৃত্তির অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রচার করে এ শিল্পের প্রসারতায় অনবদ্য ভূমিকা রাখছে।