মীনাক্ষী শেষাদ্রি, শিল্পা শিরোদকর, মমতা কুলকার্নি, রাহুল রায় বা অবিনাশ ওধায়ানের মতো তারকাদের ওপর নএক সময় হাজারো ফ্ল্যাশবাল্ব থাকতো। তার পর হঠাৎ একদিন আড়ালে সরে গেলেন তারা। এ প্রজন্মের অনেকেই তাদের নামও হয়তো শোনেননি। এরা আমির খান, শাহরুখ খান, সালমান খানের সমসাময়িক। কিন্তু বছর বিশেক আগের সময়টায় ফিরে তাকালে দেখা যাবে বলিউডের রূপালি পর্দায় তাদেরই দাপট।
মীনাক্ষী শেষাদ্রি: ১৯৮৩-তে মনোজকুমারের 'পেন্টার বাবু' ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে পা রেখেছিলেন মীনাক্ষী। আর ১৯৯৬ সালে 'ঘাতক' ছবিটি করার পর বলিউডকে বিদায় জানান তিনি। তার ১৩ বছরের অভিনয় জীবনের হিট ছবিগুলো হলো: 'হিরো', 'দামিনী', 'শাহেনশাহ', 'ঘায়েল' আর 'বিশ সাল বাদ'। এগুলো তার কেরিয়ারের মুকুটের এক একটা পালক। কিন্তু বিয়ের পরই তিনি স্বামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হরিশ মাইসোরের সঙ্গে চলে যান টেক্সাস। মীনাক্ষী নাকি এখন ওয়াশিংটনে নাচ শেখান।
কিমি কাতকর: অদম্য যৌন আবেদনের কারণে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান কিমি কাতকার। 'হাম' ও 'টারজান' তার হিট ছবির তালিকার একেবারে শীর্ষে রয়েছে। ১৯৯২ সালে আলোচিত্রী শান্তনু শেরয়কে বিয়ে করে মুম্বাই ছেড়ে পাড়ি জমান মেলবোর্নে।
অনু আগরওয়াল: নব্বইয়ের দশকে আগমণ ঘটে এক শ্যামলিমার। তার নাম অনু আগরওয়াল। গোটা বলিউড ডুবে গেল এই নারীর সৌন্দর্যে। প্রথম ছবি 'আশিকি' দিয়েই খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান তিনি। অবশ্য ছয় বছরের বেশি টিকতে পারলেন না। ১৯৯৯ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে ২৯ দিন কোমায় কাটাতে হয় তাকে। প্রায় ৩০টা হাড় ভেঙে যায় তার। তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরত আসেন তিনি। এখন তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে শোনা যায়, বিহারের মুঙ্গেরে নাকি এক যোগ স্কুলে প্রশিক্ষকের কাজ করেন অনু।
মমতা কুলকার্নি: 'তিরঙ্গা', 'ক্রান্তিবীর', 'করণ অর্জুন' ইত্যাদি সফল ছবির পরও বেশি দিন আলোয় থাকতে পারলেন না। শোনা গিয়েছিল ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। সেই ভিকি গোস্বামী, যাকে ড্রাগস্ তৈরি আর বেচার জন্য গ্রেফতার করেছিল দুবাই পুলিশ। মমতার সম্পর্কেও এখন আর তেমন কোনও খবর পাওয়া যায় না। কেউ কেউ বলেন, মমতা এখন নাইরোবিতে থাকেন। তিনি নাকি আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে একটা ই-বুকও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভিকির সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ নাকি এখনও মমতার পিছনে পড়ে রয়েছে।
অবিনাশ ওয়াধয়ান: আশির দশকের শেষের দিকে 'আয়ে মিলন কী রাত' বা 'মীরা কা মোহন' ছবিতে অভিনয় অবিনাশকে খ্যাতি দিয়েছিল। 'বালমা' ছবিতে তার আর দিব্যা ভারতীর লিপে গানগুলো সে সময়ে ছিল দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু একের পর এক ফ্লপ ছবিতে অভিনয় হঠাৎই তার কেরিয়ারে পর্দা টেনে দেয়। আবারও ছোট পর্দাই উদ্ধার করল একদা বড় পর্দার এই তারাকে। আর এখন টিভি সিরিয়াল 'বালিকা বধূ'-তে তার অভিনয় কিছুটা হলেও হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।
শিল্পা শিরোদকর: জীবনের প্রথম ছবি রমেশ সিপ্পির 'ভ্রষ্টাচার' শিল্পা শিরোদকরকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। অভিনয় বা ছবি হিট-ফ্লপ হওয়া নয়। সংবাদ মাধ্যমের পাতার পর পাতা কিংবা মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ছবিতে একটা ধর্ষণের দৃশ্যের জন্য। এ সব সত্ত্বেও সাফল্যের স্বাদ পেতে দেরি হয়নি তার। 'কিষঅণ কানাইয়া', 'খুদা গওয়া', 'গোপী কিষাণ' আর 'আঁখে' তার হিট ছবি। এম এফ হুসেনের 'গজগামিনী' ছবিতে অভিনয়ের পরেই বিয়ে করলেন অপরেশ রঞ্জিতকে। প্রথমে নিউজিল্যান্ড, তার পর লন্ডন স্বামীর সঙ্গে চলে গেলেন শিল্পা। তবে সম্প্রতি হিন্দি সিরিয়াল 'এক মুঠি আসমান'-এর মাধ্যমে শিল্পাকে পাচ্ছেন তার ভক্তরা।
নীলম: ব্যাঙ্কক থেকে ছুটি কাটাতে মুম্বাই এসে চোখে পড়ে যান পরিচালক রমেশ বহেলের। নীলমকে প্রস্তাব দেন 'জওয়ানি' ছবিতে অভিনয় করার। জীবনের প্রথম ফিল্মটি অবশ্য ফ্লপ হয়। লোকের দর্শকের মন টানতে দেরিও হয়নি। 'লাভ ৮৬', 'ইলজাম', 'হত্যা' আর 'খুদাগর্জ' দিয়ে পাকাপাকি জায়গা হয়ে যায় বলিউডে। কিন্তু 'হাম সাথ সাথ হ্যায়' ছবির পর আর তাকে তেমনভাবে দেখা যায়নি। রূপালি পর্দাকে বিদায় জানিয়ে বিয়ে করলেন ব্যবসায়ী ঋষি শেঠিয়াকে। সেই বিয়ে অবশ্য বেশিদিন টিকেনি। ২০১১ সালে বিয়ে করলেন টিভি অভিনেতা সমীর সোনিকে। বর্তমানে নীলম ব্যস্ত 'নীলম জুয়েলস্' ব্র্যান্ড নামে নিজের গয়না ডিজাইনের ব্যবসায়।
বিবেক মুশরান: ১৯৯০ সালে সুভাষ ঘাই ঘোষণা দেন তার নতুন ছবি 'সওদাগর'-এ নতুন এক মুখ। গোটা বলিউড চমকে ওঠে। কারণ এর আগে নতুন কাউকে ছবিতে নেননি তিনি। অবশ্য 'সওদাগর' ছবিটি বিবেকের কেরিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। কিন্তু তারপরেই 'সাঁতওয়া আসমান', 'প্রেম দিওয়ানে' আর 'রাম জানে' ছবি নিয়ে প্রায় এক দশক বিবেককে জনপ্রিয়তা নিয়ে ভাবতে হয়নি। তারপর গুটিয়ে নেন নিজেকে। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ফিল্ম কেরিয়ারে আর নতুন কিছুই হওয়ার নেই। এখন টেলিভিশন শিল্পের জনপ্রিয় নাম বিবেক মুশরান।