'বিতর্কবিকাশ'- ভিন্নধর্মী এই বিতর্ক আয়োজন কেন?
আসলে জাতীয়ভিত্তিক যে কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতাতেই আমরা দেখেছি দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা কখনই গুরুত্ব পায়নি। এক ধরনের সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের কারণে তারা মতপ্রকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা এই জাতীয়ভিত্তিক আয়োজনে দেখাতে চেয়েছি সমাজের এই বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝেও অফুরন্ত প্রতিভা এবং স্বপ্ন ও সুন্দরের বসবাস রয়েছে। আমরা সেটাকেই ফুটিয়ে তুলতে চাই।
এটি তো এক ধরনের সৃজনশীল আয়োজন।
অবশ্যই। আগে স্কুলবিতর্ক মানেই দেখা যেত নগর মহানগরের অভিজাত স্কুলগুলোর একশ্রেণির শিক্ষার্থীদের মনোমুঙ্কর তর্কযুদ্ধ। কিন্তু এটি ঠিক উল্টো। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষক পায়নি, পায়নি ই-মেইল-ইন্টারনেট এমনকি অনেকেই শখের পোশাকও। অনেকক্ষেত্রে কোনো ক্ষুদ্র শখ পর্যন্ত মেটাতে পারেনি- এ ধরনের শিক্ষার্থীরাই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।
এখানকার সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তো শহরের বাহিরের সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের?
হ্যাঁ। এরা কেউই শহরের অন্য দশটা শিক্ষার্থীর মতো অতিআধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নয়। ওদের বেড়ে ওঠায় আছে সংগ্রাম, লড়াই আর নিরন্তর চেষ্টা। ওরা সবাই আধুনিকতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থী। সমাজের প্রান্তজনের উত্তরাধিকার ওরা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছড়িয়ে আছে এই সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এই প্রতিযোগীদের বাছাই পদ্ধতি কেমন ছিল?
এবারের প্রতিযোগিতা দেশের সুবিধাবঞ্চিত ২,০০০ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭২,০০০ শিক্ষার্থীদের তর্কযুদ্ধের এক অনন্য আয়োজন। জাতীয় ভিত্তিক এই প্রতিযোগিতা গত বছরের জুন মাসে দেশের ৬৪টি জেলাতে একযোগে শুরু হয়। প্রতিযোগিতা চলবে এ বছরের জুন পর্যন্ত। ১ মে থেকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এটিএন বাংলায় এই প্রতিযোগিতা প্রচার শুরু হয়েছে।
প্রতিযোগিতাটা কীভাবে এগোচ্ছে?
গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলে শেষ হয়েছে 'বিতর্কবিকাশ' প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপ। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে এপ্রিল থেকে চলছে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা। তৃণমূল শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে এসে জাতীয় পর্যায়ের বিতার্কিকদের সহযোগিতা ও অনুশীলনে নিজেদের যুক্তি-তর্ক তুলে ধরছে বিভাগীয় এই চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজনে। প্রতিযোগিতা সার্বিক আয়োজনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। ব্র্যাক এই আয়োজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। জনপ্রিয় চ্যানেল এটিএন বাংলা এই প্রতিযোগিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রচার করবে। প্রতিযোগিতার সার্বিক সমন্বয় করছেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম।
আয়োজন থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?
আমার প্রত্যাশা অনেক। 'বিতর্কবিকাশ' প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তর্কযুদ্ধের এক অনন্য আয়োজন। এই আয়োজন ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও লুকিয়ে আছে দারুণ প্রতিভা। এই লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলো নিত্য স্বপ্ন দেখে, সুন্দরের প্রত্যাশা করে। এই প্রতিভাগুলো এগিয়ে যেতে চায়, নিজের অধিকার কায়েম করতে চায়। সর্বোপরি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিবেদনও করতে চায়। আমি প্রত্যাশা করছি আমরা এমন কিছু ভালো তার্কিক পাব যারা আগামীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার ঝড় তুলবে।
শোবিজ প্রতিবেদক