দীর্ঘ ৪০ বছর অভিনয় করছি, এখন বয়স হয়েছে, শারীরিকভাবেও পুরোপুরি সুস্থ নই। দুঃখ একটিই, সহশিল্পীরা আমাকে ভুলে গেছে। কেউ খবর নেন না। মিডিয়ার নিয়মটিই বোধ হয় এমন। মনের গভীরে জমে থাকা ছাই চাপা ক্ষোভের কথা এভাবেই জানালেন প্রখ্যাত অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার। বর্ষীয়ান এই মানুষটি শুধু অভিনয় করে মানুষকে বিনোদন দেননি। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও দেশের সেবা করেছেন। সিনিয়র সহকারী সচিব ছিলেন তিনি। চাকরি থেকে অবসর নেন ২০০৫ সালে। সুখের কথা হলো, এত বছর অভিনয় করেছেন কিন্তু কখনো অফিস ফাঁকি দেননি।
মঞ্চের মাধ্যমেই অভিনয় শুরু তার। ১৯৭৭ সালে বিটিভির অনুষ্ঠানে প্রথম অংশ নেন। অনুষ্ঠানের নাম 'রোজ রোজ'। বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রয়াত ফজলে লোহানীর 'যদি কিছু মনে না করেন'-এর মাধ্যমে সবার নজর কাড়েন তিনি। খ্যাতিমান টিভিব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের দর্শকপ্রিয় 'ইত্যাদি' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অভিনয় করছেন ২৫ বছর ধরে। মহিউদ্দিন বাহার বলেন, 'ইত্যাদি' অনুষ্ঠানে সমাজের নানা অসঙ্গতির চিত্র সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। এতে কাজ করে সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ পাই। তিনি বলেন, হানিফ সংকেত একজন মানবিক গুণে ভরা মানুষ। সবার সুখে-দুঃখে ছায়া হয়ে থাকেন তিনি। যতদিন বাঁচব শুধু 'ইত্যাদি'তেই কাজ করব। প্রচুর নাটকের পাশাপাশি হাতেগোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। 'স্মৃতির কথাগুলো' শিরোনামে আত্দজীবনীমূলক একটি বইও লিখেছেন মহিউদ্দিন বাহার। প্রখ্যাত কলম জাদুকর হুুমায়ূন আহমেদ বইটি পড়ে তার লেখার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, জীবনের শেষ বেলায় এসে এই গুণী মানুষটি আমাকে খোঁজেন। আমাকে দেখার পর অনেকক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, এতদিন আপনি আমার চোখে পড়েননি কেন? তার 'একলা পাখি'সহ বেশকটি নাটকে কাজ করেছি।
মহিউদ্দিন বাহারের জন্ম ফেনীতে। বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুল ও নটর ডেম কলেজে। ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন মাহাবুবা আক্তার মমতাকে। দুই ছেলে এক মেয়ের সুখী পিতা তিনি। থাকেন দয়াগঞ্জে। ২০০৬ সালে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। ২০১৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন অনেক দিন। দীর্ঘ কর্মজীবনে মহিউদ্দিন বাহারের উপলব্ধি হলো, 'সততা ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি অসম্ভব'। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সবার কাছে অনুরোধ- সহকর্মীকে ভালোবাসুন এবং তাদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়ান।