সুশান্ত সিং রাজপুতের বাড়ি থেকে রিয়া চক্রবর্তী বের হয়ে গিয়েছিলেন গত ৮ জুন। তার ৬ দিন পরেই মৃত্যু হয় সুশান্তের। ৮ জুনের পরে রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হয়েছিল প্রযোজক ও পরিচালক মহেশ ভাটের। সেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ্যে এসেছে।
মহেশ ভাটের ‘জালেবি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন রিয়া চক্রবর্তী। সেই ছবিতে রিয়ার চরিত্রের নাম আয়েশা। ৮ জুন রিয়া মহেশ ভাটকে মেসেজ করেন, “আয়েশা মুভ অন করে গেছে শয়াড় ভারাক্রান্ত হৃদয় এবং শান্তির সঙ্গে।” মনে করা হচ্ছে সুশান্তের বাড়ি থেকে চলে আসার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন রিয়া। তিনি মহেশ ভাটকে হোয়াটসঅ্যাপে সেদিন পাঠিয়েছেন, “আমাদের শেষ ফোন কলটাই আমাকে জাগিয়ে দিয়েছে। আপনি আমার দেবদূত। আপনি তখনও ছিলেন, এখনো আছেন।”
এর উত্তরে মহেশ ভাট লিখেছেন, “পিছন ফিরে তাকিওনা। যেটা হবার সেটাই হতে দাও। তোমার বাবাকে অনেক ভালোবাসা। উনি খুশি হবেন।” তারপর রিয়া লিখছেন, “স্যার অনেকটা সাহস পেলাম। সেদিন আপনি আমার বাবার সম্পর্কে যেটা বললেন সেটা আমায় তার প্রতি আরও শক্তিশালী করেছে। আমার বাবার তরফ থেকেও অনেক ভালোবাসা। আর সব সময় এমন স্পেশাল হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
সবশেষে রিয়া লিখেছেন, “আমি আমার ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্য। আপনি ঠিক। এই দিনটার জন্যই আমাদের দেখা হয়েছিল। শুধুমাত্র ছবির জন্য না। অন্য কিছু একটা। আপনি আমায় যা যা বলেছেন সেগুলো আমার মনে রয়ে গেছে। আপনার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।”
উত্তরে মহেশ লিখেছেন, “আমি যদি কাজেই না লাগলাম তাহলে আর আমার অস্তিত্বের কোন মানে নেই।” রিয়া লিখছেন, “এক সময় আপনি আমায় উড়তে শিখিয়েছেন। আর দ্বিতীয়ত আপনি আমার জীবনে ঈশ্বরের মতো।” ৮ জুন সুশান্তের বাড়ি থেকে ফেরার পরে বারবার চ্যাটে বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি শান্তি পেয়েছেন।
এরপরে আবার ১ জুলাই অর্থাৎ সুশান্তের মৃত্যুর পরে কথা হয় মহেশ ভাটের সঙ্গে। সেদিন ছিল রিয়ার জন্মদিন। মহেশ ভাট তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। উত্তরে রিয়া লেখেন, “আমি খুব হাসছি। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে গর্বিত করব।” উত্তরে আবার মহেশ ভাট লিখেছেন, “তুমি আমায় এমনিতেই গর্বিত করেছ। সত্যি। তুমি যা করেছ তা করতে অনেক সাহস লাগে। শুধু পিছন ফিরে তাকিও না।”
তদন্তে জেরার মুখে রিয়া জানিয়েছেন, সেদিন সুশান্ত তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আরও বলেন, রিয়ার বাবা নাকি সুশান্তের সঙ্গে এই সম্পর্ক নিয়ে মোটেই খুশি ছিলেন না। মহেশ ভাট ও তাকে এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। রিয়া বিভিন্ন জায়গায় বলেছিলেন যে সুশান্ত নাকি মানসিকভাবে সুস্থ নন। তবে এই দাবি মানতে রাজি হয়নি সুশান্তের পরিবার।
এক সাক্ষাৎকারে রিয়ার আইনজীবী সতীশ বলেছেন, সুশান্তের অনুরোধেই রিয়া ৮ জুন সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কারণ সুশান্ত চেয়েছিলেন সেই সময় তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে এসে থাকুক। সেই আইনজীবী বলছেন, সুশান্ত ওর পরিবারকে ফোন করে ডাক দিয়েছিলেন। মুম্বাইতে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন। বহুদিন ধরে ফোনে সুশান্ত কান্নাকাটি করার পর তার বোন মিতু এসে থাকতে রাজি হয়েছিলেন। অবশেষে ৮ জুন তিনি আসেন। সেই কদিনের জন্য সুশান্ত রিয়াকে তার মা-বাবার সঙ্গে গিয়ে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
রিয়া দাবি করেছেন যে সুশান্ত অবসাদে ভুগছিলেন। কিন্তু সুশান্তের পরিবার এই দাবি মানতে নারাজ। রিয়ার আইনজীবী বলছেন, রিয়া নিজেও অ্যাংজাইটির সমস্যায় এবং প্যানিক অ্যাটাকে ভুগছিলেন। আর সুশান্তের অবস্থা সেসময় আরও বিষয়টিকে জটিল করে দিয়েছিল। সুশান্তের সঙ্গে তিনি মোটেই ভালো ছিলেন না। ৮ জুন রিয়া নিজেই নিজের জন্য ডক্টর সুজান ওয়াকারের সঙ্গে একটি থেরাপি সেশন এর ব্যবস্থা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ