১৫ জুলাই, ২০১৯ ১৭:২২

জগতের সবকিছু থেকেই শিক্ষা নেওয়ার আছে

আমিনুল ইসলাম

জগতের সবকিছু থেকেই শিক্ষা নেওয়ার আছে

আমিনুল ইসলাম

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড জিতে যাবার পর আমি খানিক গবেষণা করেছি গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম- ব্রিটিশ মিডিয়া, বিশেষ করে সকল সংবাদপত্র রীতিমত হেডলাইন করে ছাপিয়েছে- ইংলিশদের বিশ্বকাপ জিতে যাওয়ার খবর।

এরপর আমি দেখার চেষ্টা করেছি ব্রিটিশ দর্শকরা কিভাবে উদযাপন করেছে ওদের বিজয়। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম- সে কি উদযাপন! একদম উত্তাল উদযাপন যাকে বলে। সবগুলো বার-পাবে মানুষজন বুদ হয়ে বসে ছিল ক্রিকেট খেলা দেখতে। জেতার সঙ্গে সঙ্গে হাত-পা ছুড়ে সে কি উদযাপন- "ইট ইজ কামিং হোম নাও!"

আমি ইংল্যান্ডে কিছু সময়ের জন্য পড়াশুনা করেছি। এছাড়া নানান দেশে পড়াশুনা এবং চাকরির সুবাদে অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে, যারা ব্রিটিশ।

এদের অনেককেই অতীতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম

-ক্রিকেট খেলা দেখো না তোমরা?

উত্তর দিয়েছে

-এতো লম্ব খেলা, সে সঙ্গে স্লো! এইসব খেলা ভালো লাগে না।

ভাবখানা এমন- ক্রিকেট একটা খেলা আছে এইটা জানি। এর চাইতে বেশি কিছু না!

আমার সেই বন্ধু-বান্ধবদের একজন গতকাল বিশ্বকাপ জিতে যাবার পর স্ট্যাটাস দিয়েছে

- ক্রিকেট ইজ দ্যা বেস্ট স্পোর্ট এভার!

অর্থাৎ ক্রিকেটই হচ্ছে বিশ্বে'র সব চাইতে সেরা খেলা!

আরেকজন লিখেছে

- বিলিয়ন্স অব পিপল প্লে ক্রিকেট এন্ড ইংল্যান্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন।

অর্থাৎ কোটি কোটি মানুষ ক্রিকেট খেলে আর ইংল্যান্ড হচ্ছে এই খেলার চ্যাম্পিয়ন।

তো, এই হচ্ছে অবস্থা!

অথচ এরাই দুইদিন আগ পর্যন্ত বলে এসছে- ক্রিকেট হচ্ছে স্লো খেলা, এইসব খেলা কে দেখে!

কাল ইংল্যান্ড জিতে যাবার পর থেকেই আমার মা'র কথা খুব মনে হচ্ছে। গত বছর এই মাসেই মা চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে।

ছোট বেলায় যখন নিজের অপূর্ণতা নিয়ে জন্মানোর জন্য স্কুল-কলেজে বন্ধু-বান্ধবরা হাসাহাসি করতো; প্রচণ্ড খারাপ লাগতো।

একটা সময় তো পড়াশুনাই বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা।

আমার মা এসে বললেন

-ওরা যা ইচ্ছে বলুক; হাসাহাসি করুক তোমাকে নিয়ে; তুমি স্রেফ তোমার কাজটা ঠিক মতো করে যাবে; দেখবে এক সময় এরাই আবার তোমাকে বাহবা দিচ্ছে।

হাজার প্রতিকূলতার মাঝ দিয়ে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি।

আর দশ জন মানুষের মতো এতটা সৌভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম হয়নি। আজ অবধি সেটা অনুভব করি, মাঝে মাঝে প্রচণ্ড কষ্টও হয়।

এরপরও আমি আমার মা'র কথা সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছি।

যেই মানুষগুলো হাসাহাসি করতো, এরাই এখন মাঝে মাঝে নিজ থেকে খোঁজ নেয়; কখনো কখনো নানান সাহায্যের কথাও বলে।

আমিও চেষ্টা করি যতটা সম্ভব আমার জায়গা থেকে করতে আর সেই সঙ্গে মনে হয়- আমার মা'র দেয়া শিক্ষাটা আজীবন মেনে চলেছি বলেই হয়তো এই কঠিন পৃথিবীতে এই পর্যন্ত মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছি।

বলছিলাম ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জেতার কথা। দুইদিন আগেও হয়তো বেশিরভাগ ইংলিশ মানুষজন জানতই না ওদের অধিনায়কের নাম কিংবা অন্য কোন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের নাম।

তাই বলে ক্রিকেটাররা নিজেদের কাজটা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেনি। ওরা যদি মনে করতো- ফুটবল খেলোয়াড় কিংবা অন্য খেলোয়াড়রা এতো এটেশন পায়; আমরা পাই না; দরকার কি এতো কষ্ট করে! তাহলে এই দলটা কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারত না।

মরগান'কে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাও করা হয়েছিলো

-এই যে আপনারা কোন এটেশন পান না; আপনাদের খারাপ লাগে না?

উত্তরে এই খেলোয়াড় সোজা বলেছেন

-বিশ্বকাপ'টা কেবল জিততে দিন; এরপর আমাদের এটেশন আপনারা পাবেন কিনা সেটার অপেক্ষায় থাকুন।

আর এখন ওদের ফ্যান'রা লিখছে

-ক্রিকেট হচ্ছে পৃথিবীর সেরা খেলা।

যেই খেলাটা ইংলিশরাই অবিষ্কার করেছে কিন্তু গতকালের আগ পর্যন্ত ওরা কোন দিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। যার কারণে ওদের দর্শকরদের মাঝে হয়তো এক ধরনের আক্ষেপ ছিল।

কিন্তু যেই না চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল; এখন সবাই ক্রিকেট নিয়ে মেতে আছে।

জগতের সব কিছু থেকেই শিক্ষা নেওয়ার আছে। গতকালের খেলা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি- নিজের কাজটা ঠিক মতো করে যেতে হবে হাজারো ঝড় কিংবা প্রতিবন্ধকতার মাঝে। লেগে থাকাটাই মূল বিষয়। যে লেগে থাকবে, এক সময় পুরো পৃথিবী তার সামনে এসে হাজির হবে।

পৃথিবীর নানান দেশ ঘুরে, নানান সমাজ এবং মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়ে আমি একটা জিনিস শিখেছি- কঠিন এই পৃথিবীতে পরাজিত মানুষদের কোন স্থান নেই। পরাজিত মানুষদের কেউ মনে রাখে না। তাই সফল হতে হবে আর সফল হওয়ার এক এবং অদ্বিতীয় উপায় হচ্ছে- লেগে থাকা।

আপনাকে মেধা নিয়ে জন্মাতে হবে না; আপনাকে হাজারো সুযোগ-সুবিধা নিয়েও জন্মাতে হবে না; আপনার লাগবে স্রেফ লেগে থাকার ধৈর্য এবং সামর্থ্য।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর