২২ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৫৪

আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন (পর্ব-৩)

অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু

আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন (পর্ব-৩)

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ডা. জাহানারা আরজু

নাসিম সেদিন ফোনে অস্থির হয়ে বলল মানা করেছিলাম তবু কেন গেলে দেশে? জানতাম তো এরকমই হবে। দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সবাইকে বুঝে না বুঝে জেলে বন্দী করে রেখেছে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্যে বললাম, আজকে কি রান্না করলে? ওখানে থাকতে তো আমি প্রতিদিন রেঁধে দিতাম। আমি মাছের আঁশ বেছে ধুয়ে দিলে তুমি তো মজা করে ফুলকপি দিয়ে রুই মাছ রাঁধতে পারতে। অভিমানে বেচারা ফোন রেখে দিল। 

তারপর থেকে রাকামনি প্রায় প্রতিরাতে বলত কেন আমরা দেশে আসলাম। কেন আমাকে রেখে এলে না আব্বুর কাছে। বললাম, আব্বু নিজেই চলতে পারে না, সারাদিন book binder এর কাজ করে, হাত কেটে ফেলে। আর রাতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলে। তোমার কষ্ট হতো। 

রাকা বলত, এই মানসিক যন্ত্রণার থেকে কানাডাতে ছাপোষা জীবন অনেক ভাল। এখন মনে হয় ১/১১ আমাদের কাছ থেকে সম্মান, টাকা কিছুই নিতে পারেনি, কিন্তু আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আমাদের মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে। 

সংসদ এলাকাতে যাওয়ার আগে আম্মু, আব্বুকে আর আম্মা, বাবাকে দোয়া করতে বললাম। আম্মা আর বাবা ১/১১ পুরো সময়টা জুড়ে আমাদের সাথে ধানমন্ডিতে ছিলেন এবং সবসময় ভরসা দিলেন। 

কাঁদতে কাঁদতেই আম্মুকে ফোনে বললাম, আমাকে এরেস্ট করলে Hurst আর Braunwald নামের cardiology text book জেলে দিয়ে এসো। বললাম, আমরা তো কোন পাপ করি নাই, ভয় পাব কেন? আল্লাহ ভরসা।

ফোনে বিশিষ্ট আমলা আমার ভাসুর মাসুমভাই ও নাসিমের ব্যাচমেট ইয়াকুব ভাইয়ের সাথেও কথা বলে নিলাম। দুদকের ডিডির দেওয়া চিঠিটির কপি আম্মার কাছে রেখে দিতে বললেন। 

নির্ধারিত দিনে আমি আর মাসুদ সংসদ ভবন এলাকায় সময় মতো গেলাম। সেখানে দেখলাম তারা আরাম করে কেউ টেবিলে কেউ চেয়ারে বসে ছিল অফিসে। আমাদের দেখে বেশ অবাকই হল। ( মনে হয় ভেবেছিল ভদ্রমহিলা ভয়ে আসবে না। আর তখন তারা তথ্য গোপনের মিথ্যা মামলা দিবে )

একটা রুমে বসতে বলল। দেখলাম বড় একটা টেবিল চারপাশে কতগুলো চেয়ার। কিছুক্ষণ পরেই দু’জন এসে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে পরে আবার সেখানে নিল। এবার দেখি টেবিলের উপর সাদা কাপড় মোড়ানো। আমি একটা চেয়ারে বসতে গেলে বলল, না ম্যাডাম আপনাকে এই বিশেষ চেয়ারেই বসতে হবে। প্রধান অতিথির চেয়ারে আমি, আর মাসুদ বসল আমার বাঁ পাশে। তখন মাসুদ ফিসফিসিয়ে বলল ভাবি তোমার সিটের সামনে মনে হয় আড়ি পাতার যন্ত্র আছে।

তারপর তারা ৫ জন আমার ডানের চেয়ারগুলোতে বসলেন। 

তাদের পরিচয় দিলেন। ২ জন মেজর, ১ জন দুদকের সেই ডিডি, এনবিআরের কমিশনার ১ জন। আরেকজন ছিলেন পুলিশের এএসপি। বললেন আমরা আপনাদের ফাইল নিয়ে কাজ করছি। সামনাসামনি যতই সাহস দেখাই, ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।

(এদের যন্ত্রণায় পুরো দেড় বছর টানা আমার হার্টবিট ১০০ এর উপরে ছিল। মাঝে মাঝে বিট মিস করতাম। যখন থেকে নাসিম ফোনে বলল, এদের দিন শেষ। তখন হার্টবিট ঠিক হল। সেই কথা পরে লিখছি)

চলবে…

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর