২৫ মার্চ, ২০২৩ ১০:২৫

আমলাদের কী ডাকবেন?

শওগাত আলী সাগর

আমলাদের কী ডাকবেন?

শওগাত আলী সাগর

১. টরন্টোর সিটি কাউন্সিলর জোস ম্যাটলো’র ১০ দিনের বেতন কাটার নির্দেশ দিয়েছে ইন্টিগ্রিটি কমিশনার। এটি তাঁর শাস্তি। জোস ম্যাটলোর অপরাধ কী! তিনি সিটি কর্পারেশনের দুই কর্মকর্তাকে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে পোস্ট দিয়েছিলেন। তার শাস্তি এই জনপ্রতিনিধির ১০ দিনের ‘পে সাসপেনশন’। 

কী বুঝলেন! আমলাদের ক্ষমতার দাপট বোঝা গেলো কিছু! সামারে সিটি পরিচালিত পার্কগুলোতে ওয়াশরুম কখন থেকে সর্বসাধারণের জন্যে খুলে দেয়া হয়- সেই ব্যাপারে সিটির কাছে তথ্য চেয়েছিলেন এই জনপ্রতিনিধি। সিটি ম্যানেজার সেই তথ্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাউন্সিলর টুইটারে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেছেন- সিটি ম্যানেজার তাকে মিথ্যা বলেছে। এই সিটি ম্যানেজার অবসরে যাওয়ার পর নতুন অন্তবর্তীকালীন সিটি ম্যানেজার দায়িত্ব নিলে কাউন্সিলর জোশ ম্যাটলো টুইট করেন- একজন অযোগ্য লোককে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুজনেই আলাদাভাবে ইন্টিগ্রিটি কমিশনে সিটি কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে কমিশন জনপ্রতিনিকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেন। 

এই দুইজন তো হলো সিটির ম্যানেজার। একজন সিটি ক্লার্কের ক্ষমতা(!) কতোটা শুনবেন!  নির্বাচনী নিয়ম অনুসারে কাউন্সিলর জিম কারাজিয়ানিস নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন সোর্স থেকে কী পরিমাণ অনুদান নিয়েছেন- তার হিসাব জমা দিয়েছেন সিটির কাছে। সিটি ক্লার্ক সেই হিসাব পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন তিনি অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করেছেন। ব্যাস, একটি চিঠি লিখে তিনি জানিয়ে দেন- আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে তার কাউন্সিলর পদ বাতিল। ভাবা যায়! কোনো মিটিং নয়, মেয়রের অনুমোদন তো দূরের কথা, আলাপ আলোচনাও নাই, সিটি ক্লার্কের কলমের খোঁচায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির চাকরি শেষ! 

বেচারা কাউন্সিলর নিম্ন আদালত, আপিল বিভাগ ঘুরে ঘুরে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছেন। কিন্তু কেরাণীর কলমের খোঁচার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। 

২. সরকারি কর্মকর্তাদের 'স্যার' সম্বোধনে বাধ্য করা নিয়ে আলোচনায় অনেকেই পশ্চিমে নাম ধরে ডাকার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছি। বলাই বাহুল্য, আমি নিজে এবং অন্যরা যারাই এই প্রসঙ্গ এনেছেন- তাদের সবাই জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কীভাবে সম্বোধন করা হয় সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই মতামত দিয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তা, আমরা যাদের আমলা বলি- তাদের আচরণ সম্পর্কে আমরা কেউই কোনো মতামত দিতে পারিনি। কারণ, সরকারি কর্মকর্তা বা আমলারা আসলে সাধারণ নাগরিকদের ‘রিচ’ এর একেবারে বাইরে বলে তাদের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থে আমাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তবে কানাডার সরকারি কর্মকর্তা তথা আমলারা যে জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও ক্ষমতাধর তার প্রমাণের জন্য তেমন একটা কষ্ট করতে হয় না। কেবল সিটিই নয়, প্রভিন্সিয়াল, ফেডারেল পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতাও সীমাহীন। তবে সেই ক্ষমতার তাপ সাধারণ জনগণ টের পায় না, কারণ- সাধারণ জনগণের সাথে তাদের কোনো লেনদেন থাকে না। জনগণকে সেবা দেয়ার জন্য তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করা আছে, জনগণ সেই পর্যন্তই পৌঁছাতেই পারে না।

লেখক : প্রকাশক ও সম্পাদক, নতুন দেশ ডটকম

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর