দিনাজপুর শহরের টিএন্ডটি মোড়ের রাস্তায় বসে কাঁঠাল পাতার হাট। এ পাতা বিক্রি করে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা উপার্জন করছে অর্থ, ঘুরে গেছে তাদের ভাগ্যের চাকা।শহরের বাহাদুর বাজার টিএন্ডটির মোড় দিয়ে হেঁটে গেলে শোনা যায়, 'লাগে পাতা', 'নেন ভাই পাতা নেন, দাম কম'। বিভিন্ন এলাকার ছাগল পালনকারীরা এই কাঁঠাল পাতা কিনে নিয়ে যায়।
ক্রেতারাই এর নাম দিয়েছে কাঁঠাল পাতার হাট। এই হাটের বৈশিষ্ট্য হলো: রোদ, বৃষ্টি, ঝড়সহ প্রাকৃতিক যত দুর্যোগই আসুক না কেন পাতার বাজার বসে প্রতিদিন। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই পাতার হাট।
পাতা বিক্রেতারা জানায়, তারা প্রায় ১৫/১৬ জন নারী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রত্যেকেই সামাজিকভাবে বঞ্চিত কিংবা স্বামী নির্যাতনের শিকার। এ পেশায় সর্বনিম্ন পুঁজি ৩শ টাকা, আর সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।
পাতা বিক্রেতা মহসিনা জানান, পাতা বিক্রির সঙ্গে সংযুক্ত আছেন ১৬ জনের মত। এরা প্রায় সকলেই এই ব্যবসা করছে ২০ বছর আগে থেকে। তবে তার আগেও নাকি পাতা বিক্রি হতো স্বল্প পরিসরে। প্রতি পাতার আঁটি বিক্রি হয় ৫ টাকা থেকে ২০ টাকায়। যা লাভ হয় তা দিয়েই চলে তার ৮ জনের সংসার। মহসিনার বাড়ী পঞ্চগড়ে। মেয়ের সুখের জন্য বাবা-মা মহসিনাকে বিয়ে দেন স্থানীয় খুরশিদের সঙ্গে। বিয়ের পরই জুয়াড়ি স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ছেলেমেয়ের নিযে মহসিনা চলে আসেন দিনাজপুরে। শুরু করেন পাতার ব্যবসা। সেই থেকেই শুরু মহসিনার জীবন সংগ্রাম।
বিক্রেতা রাশেদা বলেন, পাতা বিক্রি করে সন্তানদের বাঁচতে পারি। রাশেদার বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দায়। ১০ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বাবার মৃত্যুর পরে স্বামী সালামের হাত ধরে চলে আসেন দিনাজপুরে। কোন কাজ না পেয়ে মাত্র ৩শ টাকা পুঁজিতে শুরু করেন পাতার ব্যবসা।
আরেক বিক্রেতা করিমন জানান, গ্রাম থেকে গাছের সমস্ত পাতা কিনে তারা বাজারে বিক্রি করেন। গাছ প্রতি তাদের কখনো ২শ আবার কখনো ৪শ টাকা লাভ হয়। তিনি জানান, যেসব গাছ কাঠ হিসেবে বিক্রি করা হয় কেবল সেসব গাছের পাতাই কিনেন তারা। তাছাড়াও কখনো ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লে সেগুলো কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেন তারা। পাতা বিক্রির কাজ করেই তার পরিবারের ৪ জন সদস্য খেয়েপড়ে বেঁচে আছে।
পাতা কিনতে আসা শহরের বালুডাঙ্গার গোলাম মওলা জানান, শহরে ছাগলের খাওয়ার জন্য কোথাও কোন ঘাস কিংবা পাতা পাওয়া যায় না। তাই এ বাজার থেকেই কাঠাল পাতা কিনে নিয়ে যাই। এ বাজার থাকায় সুবিধা হয়েছে।
এই বাজারে কোন প্রকার স্থান ভাড়া দিতে হয় না, তবে মাঝে মাঝে কিছু মাদকসেবী তরুণ চাঁদা নিয়ে পাতা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমস্যা করে থাকেন।