চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছুটতে আমাদের স্যান্ডেলের তলা যেখানে ইঞ্চি থেকে সহসাই সেন্টিমিটারে নেমে আসে সেখানে চাকরি দিতে ফেসবুক খুঁজে নিল এক বাংলাদেশী তরুণকে। বাংলাদেশের তরুণ মেহেদী বখত এখন চাকরি করছে ফেসবুকের মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে।
প্রযুক্তির বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান যেমন মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দেয়। এসবের একটি পদ্ধতি হলো, কর্তৃপক্ষই মেধাবী তরুণদের খুঁজে বের করে। এমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মেহেদী বখত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ার সময় দুইবার এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইসিপিসি) চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরে বুয়েট থেকে স্নাতক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা-ক্যাম্পিংয়ে (ইউআইইউসি) পড়তে যান। এখান থেকেই নেটওয়ার্কিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ফেসবুকে মেহেদী বখত যোগ দেন ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
যেভাবে ফেসবুকে
মেহেদীর ভাষ্যে- 'পড়াশোনা শেষ করে ২০১১ সালের শেষ দিকে চাকরি খোঁজা শুরু করি আমি। সে সময় ফেসবুক এতটা বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেনি। তাই চাকরির জন্য গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট, লিংকড-ইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেষ্টা করতে থাকি।’ এরই মধ্যে ফেসবুক থেকে একদিন যোগাযোগ করা হয় আমার সঙ্গে। তারা জানতে চায় ফেসবুকে কাজ করতে আমার আগ্রহ আছে কি না। আগ্রহী হলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা বলে। ভেবে দেখলাম, সাক্ষাৎকার দিতে তো সমস্যা নেই। একাধিক পর্বে ফোন-সাক্ষাৎকার দিয়ে শেষে দিলাম “অনসাইট ইন্টারভিউ”।’
দুই সপ্তাহের মধ্যে মেহেদীর ডাক এল ফেসবুক থেকে। সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিলেন ফেসবুকের ‘মেসেজেস’ দলে। ‘চ্যাট প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামেও পরিচিত এ বিভাগ। ফেসবুকের মানবসম্পদ বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্ব থেকে সন্ধান পান মেহেদীর। মেহেদী বলেন, ‘ফেসবুকের পরে আমার যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ ছিল, সেগুলোর প্রায় সবগুলো থেকেই ভালো পদে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছিলাম।’
ঢাকায় জন্ম মেহেদী বখতের। মীর্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১১তম এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় হন তিনি। এরপর বুয়েটে কম্পিউটার কৌশল বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। বাবা অর্থনীতিবিদ জাহিদ বখত বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ছেলের এমন সফলতার ব্যাপারে তিনি জানান, ‘এটা অভিভাবক হিসেবে বেশ ভালো লাগার খবর। বাংলাদেশি এসব তরুণ বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থের বিষয়গুলোও দেখছে।’ মা হালিমা জায়েদ গৃহিণী।
মেহেদীর স্ত্রী কারিশমা মুনতাসির বুয়েট থেকে স্নাতক এবং ইউআইআইসিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছেন।