পরিবেশ বিপর্যয়ে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে অনেক প্রাণী, কমে যাচ্ছে জেলেদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ভোদড়ের সংখ্যাও। কবিরাও এখন আর ভোদড়কে নিয়ে কবিতা লিখে না। তবে আজও বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলে পরিবার ভোদড় দিয়ে মাছ শিকারের শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তারা ভোদড়কে মনে করে তাদের জীবিকার বন্ধু।
ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে নড়াইলের বেশ কিছু জেলে পরিবার আজও জালে মাছ তাড়িয়ে আনতে ভোদড়কে ব্যবহার করে। যদিও গত ২৫ বছরে ভোদড় দিয়ে মাছ শিকারি পরিবারের সংখ্যা ৫০০ থেকে ১৫০- এ নেমে এসেছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজের মতে এ হার চলমান থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার শূণ্যে নেমে আসবে। এক্ষেত্রে জেলেদের কথা- তাদের আয়ের অর্ধেকই ভোদড়ের খাবার কিনতে ব্যয় করতে হয়। এছাড়া নদীতেও এখন আর তেমন মাছ নেই। অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ আর দুষনের কারণে নদীতে মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাই শুধু ভোদড় না, পেশাটিকেই ছাড়ার চিন্তা করছেন অনেক জেলে পরিবার।
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বেই বদলে গেছে মাছ শিকারের ধরণ-ধারণ। যন্ত্রচালিত জাল ব্যবহার হচ্ছে সাগরে মাছ ধরতে। সেখানে দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলে পরিবার এখনো ভোদড়কে তাদের পরিবারেরই একজন সদস্য মনে করে। জেলেরা তাদের জাল একের পর এক নদীর তীরবর্তী স্থানে পেতে রাখে। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয় ভোদড়। জলাশয়ে চক্রকারে ঘুরে মাছ তাড়িয়ে জালে ঢুকায় এ প্রাণীটি। এজন্য ভোদড়কে অবশ্য অনেক প্রশিক্ষণ দিতে হয় বলে জানিয়েছেন ৫০ বছর বয়সী জেলে শসুধর বিশ্বাস।
যদিও এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় অনেক আগেই ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এই অদ্ভূত পদ্ধতিটি শত বছর ধরে এ দেশে এখনো টিকে আছে। শসুধর বিশ্বাস বলেন, আমাদের জীবিকা মূলতঃ ভোদড়ের উপরই নির্ভরশীল। ভোদড় নিজের জন্য মাছ শিকার করে না। এগুলো মাছকে তাড়িয়ে নিয়ে নৌকার পাশে রাখা জালে নিয়ে আসে। আর এমনিতে যেখানে মাছের আকাল সেখানে ভোদড়ের সাহায্য না পেলেতো এ পেশা অনেক আগেই ছেড়ে দিতে হত।