দৃষ্টিহীনতা তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা আপন মনোবলে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। বিশ্বের এমনই বিস্ময়কর ৬ জন শ্রেষ্ঠ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথাই বলা হলো।
'ওয়ার্ল্ড ক্লাস রানার' মারলা রুনিয়ান: ৯ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগের কারণে তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু এই অক্ষমতা তার মনোবল কেড়ে নিতে পারেনি। ১৯৮৭ সালে তিনি সান দিয়াগো ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং ধীরে ধীরে নিজের প্রতিভা বিশ্বের সামনে প্রকাশ পেতে থাকে।
১৯৯২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মারলা রুনিয়ান চারটি স্বর্ণমুদ্রক এবং ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে SHOT PUT-এ রৌপ্য এবং PENTATHLON (দৌড়, ঘোড়া চালানো, সাঁতার, বর্শানিক্ষেপ, শুটিং প্রতিযোগিতায় একসাথে অংশগ্রহন)-এ একটি করে স্বর্ণমুদ্রক অর্জন করেন।
১৯৯৯ ও ২০০০ সালে যথাক্রমে আমেরিকান গেমস ও সিডনি অলিম্পিকের পর তাকে 'ওয়ার্ল্ড ক্লাস রানার' আখ্যায়িত করা হয়। যেখানে তিনি ১৫০০ ও ২০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ৮ম হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপস-এ তিনি ৫০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মারলা রুনিয়ান তার আত্মজীবনী নিয়ে 'নো ফিনিশ লাইন মাই লাইফ এজ অাই সি ইট' একটি বই প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তার কোচমেট লনেরগানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সার্ফার ডিরিক রাবিলো: জন্মগতভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ডিরিক রাবিলো। কিন্তু অন্ধত্বকে জয় করে ২০ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান মাত্র তিন বছর বয়সে সার্ফিং আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, স্রষ্টা সাথে থাকলে সবকিছুই সম্ভব।
চিত্রশিল্পী জন ব্রামব্লিট: ২০০১ সালে ৩০ বছর বয়সে এপিলিপসি রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দৃষ্টি শক্তি হারায়। প্রথমে তিনি খুবই আশাহত হন এবং ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি শুধু স্পর্শের সাহায্যে তুলির রঙ বুঝে নিতে শিখেন। তার অংকিত চিত্র বর্তমানে ২০টি দেশেরও বেশী জায়গায় প্রদর্শিত হচ্ছে। ২০০৮ সালে জন ব্রামব্লিটের চিত্রকর্ম 'মোস্ট ইনস্পাইরেশনাল ভিডিও' ব্যাপক আলোড়ন জাগিয়েছে। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন তিন তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল সার্বিস অ্যাওয়ার্ডস।
গাড়ি চালক মার্ক এনথোনি রিকোবোনো: ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি। মার্ক এনথোনি রিকোবোনো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন দেটোনা ইন্টারন্যাশনাল স্পিডওয়ে রাস্তায়। দূর থেকে বুঝায় যাচ্ছিল না একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
২টি প্রযুক্তির সহয়তায় তিনি এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। একটি হলো 'ড্রাইভ গ্রিপ' যা দুইটি গ্লোভস-এর সমন্বয়ে গঠিত। এটি চালককে কম্পনের মাধ্যমে সংকেত দেয় কতটুকু এবং কোন দিকে হুইল ঘুরাতে হবে। আর অন্যটি হল 'স্পিডস্ট্রিপ' যা ড্রাইভারের পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে আর সংকেত প্রেরণ করে কতটুকু গতি দিতে হবে।
রন্ধনবিদ ক্রিস্টাইন হা: ২০১২ সালের মাস্টারশেপ বিজয়ী হন ক্রিস্টাইন হা। তিনি জন্মগত রোগের কারণে ধীরে ধীরে তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ২০০৭ সালে একেবারে দৃষ্টিহীন হয়ে যান। তিনি বলেন, আমার কাছে খাবারের মানে অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। এরমধ্যে খাবারের স্বাদ, গন্ধ এবং ঠিক কি কি উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে সবকিছুই নির্ভর করে।
ফটোগ্রাফার পিটি ইকার্ট: পিটি ইকার্ট অসুস্থতার কারণে তার দৃষ্টি শক্তি হারান। যদিও তিনি স্কাল্পচার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে ফটোগ্রাফিতে মন দেন। তার ফটো তোলার ধরণ হল: প্রথমে তিনি জেনে নেন তিনি কিসের ছবি তুলবেন। তারপর মনে মনে কল্পনায় দৃশ্যটি এঁকে নিয়ে পারিপার্শ্বিক শব্দের প্রেক্ষিতে ছবি তোলেন।
তিনি বলেন, আমি দৃশ্য কল্পনা করতে পারি। শুধু চোখ দিয়ে দেখতে পাই না।