ঘটনাবহুল পৃথিবীতে প্রতিদিন লাখো ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে কিছু ঘটনা স্বমহিমায় ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। আজ ৮ জানুয়ারি। অসংখ্য ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী এই দিনের সূর্য। তেমনই কিছু স্মরণীয় ঘটনা তুলে ধরা হলো বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য।
১৯১৬ সালের এ দিনে প্রধানত বৃটেন এবং ফ্রান্সের সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনী তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের গ্যালিওপোলি অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এই সমর অভিযানে মিত্র পক্ষের আড়াই লক্ষ সৈন্য নিহত হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে তুরস্কেরও সমসংখ্যক সৈন্য নিহত হয়েছে। ১৯১৫ সালে রাশিয়ার উপর থেকে চাপ হ্রাস করার জন্য বৃটিশ সরকার গ্যালিওপোলি উপদ্বীপে অবস্থিত ড্রানডালেস খাল দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ভিত্তিতে শুরু হয় অভিযান। তবে শুরুটাই তাদের জন্য ভাল বলে প্রমাণিত হয়নি। তারা যে বৃটিশ এবং ফ্রান্স সম্মিলিতভাবে দশটি যুদ্ধ জাহাজ প্রেরণ করে তার মধ্যে তিনটি যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। মারাত্মক ক্ষতি করে আরও তিন জাহাজের।
ইতিহাসের এ দিনে গ্যালিলিও পরলোকগমন করেন । ১৫৬৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি টলেমীর মতবাদকে নাকচ করে দিয়ে সৌরজগত সম্পর্কে একটি পুস্তক রচনা করেছিলেন। পুস্তকে ঘোষণা করেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষীণ করে। এভাবে তিনি সেকালের খৃষ্ট-জগতে প্রচলিত তাদের ধর্মভিত্তিক কিন্তু অবৈজ্ঞানিক বিশ্বকেন্দ্রিক মতবাদের বিরোধিতা করেন। এক বছর পর ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ গ্যালিলিওকে রোমে ডেকে পাঠান এবং তার মতবাদকে ধর্মদ্রোহিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আর এ কারণে খ্রিস্টীয় যাজকতন্ত্র গ্যালিলিওকে তার মতবাদ প্রত্যাখ্যান করার অন্যথায় প্রাণদণ্ডের হুমকি প্রদান করে। এমন চাপের মুখে প্রকাশ্যে গ্যালিলিও নিজ মতবাদকে নাকচ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু বলা হয় আদালত থেকে বের হয়ে তিনি ভূমিতে পা ঠুকে বলেছিলেন, তবু তো পৃথিবী ঘুরছে। গ্যালিলিওকে আধুনিক পদার্থ বিদ্যা, জ্যোর্তিবিদ্যা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করেন অনেকে।
১৯৮৭ সালের এ দিনে ইরানি যোদ্ধারা পূর্বাঞ্চলীয় ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বসরায় মোতায়েন হানাদার সাদ্দামের বাহিনীর বিরুদ্ধে কারবালা ৫ নামের সেনা অভিযান শুরু করে। সাদ্দামের সেনাবাহিনী সেখানে নানা ধরণের ব্যারিকেড রচনা করে সেনা অভিযানকে দু:সাধ্য করে তোলে। কিন্তু দু:সাহসী ইরানিরা সে সব ব্যারিকেডকে নিজ প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তুচ্ছ করে তুলেছিলো। কারবালা ৫ অভিযানে ৮০টির বেশি ইরাকি বিমান, সাতশ'র বেশি ট্যাংক এবং সাজোয়া গাড়ি ইরানি বাহিনীর হস্তগত হয়। এছাড়া হাজার হাজার ইরাকি সৈন্য হতাহত বা বন্দী হয়। এই অভিযানের মাধ্যমে ইরানিরা প্রমাণ করছিলো পাশ্চাত্য এবং আরবের কোনো কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে সাদ্দাম বাহিনী ইরানের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চালিয়েছিল তা কেবল তাদের ধ্বংস ও ক্ষয়-ক্ষতিই ডেকে এনেছে।
১৯৭৮ সালের এ দিনে ইরানের পবিত্র নগরী কোমে ইরানের তৎকালীন শাসক রেজা শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। তেহরানের একটি বৈকালিক দৈনিকে ইমাম খোমেনী (র)এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর নিবন্ধের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়। বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সেটাই ছিল ইরানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী(র)এর পক্ষে শ্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা শাহের পদত্যাগ দাবি করে। তৎকালীন শাসকের নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর হামলায় সেদিন অনেকেই শহীদ এবং অনেকেই আহত হয়েছিলেন।
১৯৭৬ সালের এ দিনে চীনের বিপ্লবী নেতা চৌ এন লাই ৭৭ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সে তুংয়ের পরই ছিলো চৌ এন লাইয়ের স্থান। ১৮৯৮ সালে চৌ এন লাইয়ের জন্ম হয়েছিলো। ১৯২০এর দশকে তিনি চীনের কম্যুনিষ্ট পার্টির তৎপরতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। নিজ কর্ম দক্ষতার গুনে বিশেষ করে আলোচনা ও কূটনীতির ক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য অচিরেই তিনি মাওয়ের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টাদের একজনে পরিণত হন। ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে চীনের কম্যুনিষ্ট পার্টির বিজয়ের পর চৌ এন লাইকে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ