আজ পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িদের দখলে। আকাশ জুড়ে নানান রং আর বাহারের ঘুড়িদের সাম্যবাদ। মাঘ মাসের প্রথম দিন পুরানো ঢাকার দয়াগঞ্জ, মুরগীটোলা, কাগজিটোলা, গেণ্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সদরঘাট, কোটকাচারী এলাকার মানুষ দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ায়, খাবারের আয়োজন করে, সন্ধ্যায় আগুন নিয়ে খেলে, আতশবাজী ফোটায়। একে সাকরাইন উৎসব বলে।
টানা এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার বাহান্ন রাস্তা তেপান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে চলছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলছে পুরোদমে। শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকালে আকাশে গোত্তা খাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটি খেলাও চলছে। অহরহ কাটা-কাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিড়ে উড়ে যাচ্ছে দূরে।
ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহণে মুখরিত হচ্ছে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটাকাটি খেলায় উত্তাপ ছড়াবে সাকরাইন উৎসব। এছাড়াও ঘরে ঘরে চলছে মুড়ির মোয়া, বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হচ্ছে আত্নীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।
পুরান ঢাকার ধূপখোলার স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজকের দিনটি পুরান ঢাকাবাসীর কাছে অন্যরকম একটি দিন। অতীতে শুধু ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যেই এ দিনটি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটি গিয়ে ঠেকেছে আতশবাজি ফোটানোর মধ্যে।
অন্যদিকে, কলতাবাজারের বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি এ উৎসব। বলতে পারেন বাপ-দাদার পৈতৃক সূত্রেই এ উৎসব আমাদের মনে গেঁথে গেছে। ঘুড়ি উড়ানোর পর সন্ধ্যায় রয়েছে গান-বাজনা ও খানা-পিনার আয়োজন। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা