আমাদের এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলো বেদে সম্প্রদায়। নৌকায় নৌকায় একেক স্থানে ঘুরে জীবন অতিবাহিত করার কারণে এদের যাযাবর বলা হয়।
তবে বৈচিত্র্যময় ও বর্ণিল জীবনের সবটুকু রং দিয়ে তারা তাদের জীবন সাজায়। যে কারণে আমরা প্রত্যাহিক জীবন বেদে জনগোষ্ঠির মানুষদের দেখলে দেখতে পাবো, তারা খুব পরিপাটি এবং রংবেরংয়ের কাপড় পরিধান করে আছে।
তাদের পোশাকের মতোই তাদের জীবন। কিন্তু সমাজের কথিত মূলধারার জনগণের সঙ্গে তাদের জীবনযাপন,আচার-আচরণ, সংস্কৃতি আলাদা হওয়ার কারণে তারা অনেকটাই পশ্চাতপদ।
আর এই পশ্চতপদতার সূত্র ধরে, সাধারনত বেদে বলতে আমরা বুঝি যারা সাপ খেলা দেখায়, তাবিজ–কবজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
তাই বলে বেদেদের কাজকর্ম শুধু সাপ খেলা আর তাবিজ কবজ বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা চুড়ি, ফিতা , বিভিন্ন শেকড় বিক্রি ছাড়াও আদি ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক উপকরণও তারা বিক্রি করে।
সমাজব্যবস্থার দিক দিয়ে বেদেরা মাতৃতান্ত্রিক হলেও বর্তমানে তাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সওদাগর শ্রেনী নাম দিয়ে তারা এখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করেছে।
বেদেদের পেশার মধ্যে আছে ক্ষুদ্র ব্যবসা, তাবিজ কবজ বিক্রি, সাপের কামড়ের চিকিৎসা করা, সাপের খেলা দেখানো, মাজা-কোমড়-হাত –পায়ের বাতের ব্যথা নিরাময়ের জন্য সিঙ্গা লাগানো, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, মৃত পশুর শরীরের অংশ ব্যবহার করে বা গাছপালা দ্বারা ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করা, বানর খেলা দেখানো, জাদু দেখানো ইত্যাদি।
তবে ইদানিং এসব ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা যাওয়ায় তারা সমাজের মূলধারার অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
হারিয়ে যাচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। হারিয়ে যাচ্ছে বেদেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এখন আর তারা আগের মতো সাপের খেলা, তাবিজ বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জুন, ২০১৫/ নাবিল