ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের মিলনমেলা ঘটেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। ভিড় বেড়েছে জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহে। আবেগ আর উচ্ছ্বাসে ভরা দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ পর্যটন নগরী। পরিবার-পরিজন নিয়ে সৈকতে ছুটোছুটি, হইহুল্লোড় আর সাগরে নীল জলে আনন্দ গোসল করছে আনন্দ আমোদ-প্রমোদ প্রিয় মানুষগুলো। কেবল স্থানীয় পর্যটক নয়; দেশী-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
পর্যটন নগরীতে ছোট-বড় ৩ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও ২ শতাধিক গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। এসব স্থানে প্রতিদিন দেড় লক্ষাধিক মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
কক্সবাজারের নয়নাভিরাম দৃশ্য এবং হোটেলের বিভিন্ন ‘আয়োজন’ দেশে মুগ্ধ বেড়াতে আসা অসংখ্য পর্যটক। পর্যটকরা ঘুরছেন হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাথুরে বিচ ইনানীতে। ছুটছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে।
ঈদের দিন থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলি বিচ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। হৈ হুল্লোড়, ছুটোছুটি আর সাগরের পানিতে আনন্দ গোসলে, নাগরিক জীবনের চাপ ঝেড়ে প্রকৃতির সাথে মিতালীর চেষ্টা ভ্রমনপিপাসুদের। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহেও প্রচুর পর্যটক বেড়েছে। এতে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
এদিকে ভ্রমণে আসা লোকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তায় সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়া নগরসহ ১৫টি পর্যটন স্পটে ফোর্স মোতায়েনের করেছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। সৈকতে গোসল করতে গিয়ে পর্যটকরা যেন প্রাণহানির শিকার না হয়-সে বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থাগুলো।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটন এলাকাভুক্ত স্পটে পুলিশ মোতায়েন করেছি। এসব এলাকায় ২ জন ইন্সপেক্টর ও ৭ জন সাব ইন্সপেক্টরের অধীনে ১৩৮ সদস্যের ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। তাছাড়া পর্যটন স্পটগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের সাথে ২ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। সাথে ভ্রাম্যমাণ টিমও মাঠে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট ও ডায়াবেটিক পয়েন্টসহ প্রায় সবখানে পর্যটকদের বাঁধ ভাঙা স্রোত। সাগর পাড়ের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তারা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও সাগরে গোসল করে তারা কক্সবাজার ভ্রমণের পিপাসা মেঠাচ্ছেন। যাচ্ছেন হিমছড়ি, ইনানী, ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরে। এখানে স্থানীয় পর্যটকদের চেয়ে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা কোন অংশে কম নয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও বৃটিশ এর বেশ কিছু পর্যটক চোখে পড়েছে।
আগত পর্যটকেরা ছুটে যাচ্ছে সেন্টমার্টিনের স্বচ্ছ নীলাব পানি, অসংখ্য কোরালের ছড়াছড়ি, সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য ও সমুদ্র ঘেরা পাহাড় ও নদী সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সাগরপাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে পর্যটকেরা।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এম সাদেক লাবু জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিগত কয়েক বছর দেশের পর্যটন ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করলেও এবার আশানুরূপ পর্যটক এসেছে। তিনি বলেন, দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছে অসংখ্য পর্যটক। দীর্ঘ ব্যবস্ততা আর ক্লান্তি দূর করতে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে সৈকতে অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সারা বছর নগর জীবনের চাপে থাকা মানুষগুলো। সবার চাওয়া একটু স্বস্তি।’
হোটেল মোটেল মালিক সমিতি নেতা রেজাউল করিম রেজার মতে, গেল পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা খুব একটা ভাল যায়নি। ঈদের দিন থেকে টানা ৪ দিন ব্যবসা ভাল হয়েছে। হোটেলের অধিকাংশ হোটেলের শতভাগ কক্ষ এখন বুকিং আছে। তবে সাগর পাড় থেকে দূরে আবাাসিক হোটেলে বুকিং তুলনামূলক কম।
সাগরপাড়ের তারকা হোটেল সী-গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী রুমি বলেন, গত কয়েক বছর হোটেল ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় লোকসান গুনেছে। এখন অতীতের লোকসান কাটিয়ে ওঠার সম্ভানা দেখছে ব্যবসায়ীরা। আমাদের হোটেল ব্যবসা তুলনামুলক ভাল হচ্ছে।
সৈকতে বেড়াতে আসা এক পর্যটক দম্পতি বলেন, ‘কক্সবাজার আমার খুব প্রিয় জায়গা। ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। এখানে প্রত্যেক আসার সুযোগ পেলে প্রত্যেক দিনই চলে আসতাম।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, কক্সবাজারের আইন শৃক্সখলা শান্ত রাখার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঈদ মৌসুমকে কেন্দ্র করে পর্যটন এলাকাসমূহে অতিরিক্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একারণে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেনি।
তিনি জানান, পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমাদের ফোর্স সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন। পর্যটকরা যাতে কক্সবাজারের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে সে জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ পোষাকে, সাদা পোশাকে, মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। এ কারণে সৈকত পাড়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা